গুলশান হামলায় জড়িতরা ‘শীঘ্রই ধরা পড়বে’
১ জুলাই ২০১৭গুলশান হামলায় জড়িতদের ধরতে কতদিন লাগতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে আমরা তাদের ধরতে পারব৷''
তিনি বলেন, ‘‘হলি আর্টিজান হামলার সঙ্গে পলাতক জঙ্গিদের কানেকশন ইতোমধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ তাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানা গেছে৷ এখন তাদের সম্ভাব্য আস্তানা ও অবস্থানের তথ্য নিশ্চিত হতে পারলেই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে৷''
পুলিশ যাদের খুঁজছে তাদের মধ্যে আছেন সোহেল মাহফুজ, বাশারুল ওরফে চকলেট, রাশেদ, হাদিসুর রহমান সাগর ও ছোট মিজান৷ পলাতক এই পাঁচ সন্দেহভাজন জঙ্গিকে পেলেই চার্জশিটের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে৷ এক বছরেও কেন চার্জশিট দেয়া সম্ভব হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দু'দিন আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘‘এত বড় ঘটনা, নির্ভুল চার্জশিট দেয়ার জন্যই একটু সময় লাগছে৷ পুলিশ কাজ করছে, আশা করি দ্রুতই কাজ শেষ হবে৷''
এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত করেই বলছি এবছর আমরা এই মামলার চার্জশিট দিতে সক্ষম হবো৷ আমরা সবকিছু গুছিয়ে এনেছি, আর কয়েকজনকে ধরতে পারলে পুরো বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে৷ তাদের গ্রেফতারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যহত আছে৷''
গাইবান্ধায় প্রশিক্ষণ, গুলশানে হামলা
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তদন্ত শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে গুলশান হামলার ছক নিয়ে একটি মোটামুটি ধারণা তারা পেয়েছেন৷ তার সঙ্গে আরও কিছু গোয়েন্দা তথ্য মিলিয়ে জানতে পারেন, ওই হামলার পরিকল্পনা হয় গতবছর এপ্রিলের শেষ দিকে৷ পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘জঙ্গিরা পরিকল্পনা করে, তারা ঢাকায় বড় ধরনের একটা কিছু করবে, যাতে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া কাভারেজ পাবে, পাশাপাশি বাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে সেটি তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হবে৷ এই লক্ষ্যে ঢাকায় বড় ধরনের ঘটনা ঘটানোর জন্য ঢাকার ছেলেদের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় জঙ্গিরা৷ সেই অনুযায়ী গাইবান্ধায় তাদের প্রশিক্ষণ হয়৷ এর মধ্যে ঢাকা শহর ভালোভাবে চেনে ও জানে এমন তিনজন ও বাইরের দু'জনকে এই কাজে সম্পৃক্ত করে৷''
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গাইবান্ধার চরে ২৮ দিন বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের ঢাকায় এনে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাসায় রাখা হয়৷ জঙ্গিদের ওই প্রশিক্ষণে নব্য জেএমবির জঙ্গি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম মূল ভূমিকা রাখেন বলে মনিরুলের ভাষ্য৷ গতবছর ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার রূপনগরে পুলিশি অভিযানে নিহত হন জাহিদ৷ এছাড়া আরো কয়েকজন সন্দেহভাজন শীর্ষ জঙ্গিও মারা গেছেন৷
প্রসঙ্গত, গুলশান হামলার পর সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘিরে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ গুলশান এলাকায় বাইরের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ পুরো কূটনীতিক এলাকা ঘিরে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়৷ গুলশান এলাকায় বসবাসকারী কূটনীতিকরাও এই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তবে বাইরের লোকজন গুলশান এলাকায় প্রবেশে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় ওই এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নেমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের৷
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সেই ঘটনার পর আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২৩টি অভিযান চালিয়েছে৷ এতে ৬৭টি জন জঙ্গি মারা গেছে৷ এখন জঙ্গিদের কোন ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা আর নেই৷''
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
এদিকে, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে শনিবার ফুলে ফুলে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে চলেছে জঙ্গি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ৷ সকাল থেকেই থমথমে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়ক৷ একের পর এক সেখানে যান বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠনকর্মী ও কূটনীতিকেরা৷ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে হোলি আর্টিজানের ভেতরে যান জাপানের রাষ্ট্রদূত৷ সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের কিছুক্ষণ পর তিনি চলে যান৷ জাপানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জাইকার প্রতিনিধিরাও ছিলেন৷
শ্রদ্ধা জানানোর পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিদের বলেন, ‘‘হলি আর্টিজানের ঘটনা আমাদের জীবন বদলে দিয়েছিল৷ আমাদের আতঙ্কগ্রস্ত করেছিল৷ সেদিন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কেউ ভাবেনি, বাংলাদেশ ওই অবস্থা থেকে ফিরে আসতে পারবে৷ আমি আজকে গর্ববোধ করি- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের পুলিশ বাহিনী অসমসাহসিকতায় এই উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীকে মোকাবিলা করছে৷''
এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকেও হলি আর্টিজান বেকারিতে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়৷ বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়৷ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অসাম্প্রদায়িক চেতনার৷সেই জায়গাটিতে হলি আর্টিজানের ঘটনা বড় আঘাত৷