ছয় মাসে নারীসহ ৩৮ জঙ্গি নিহত
৬ জানুয়ারি ২০১৭পুলিশ এখন নব্য জেএমবির শীর্ষ দুই নেতা মেজর জিয়া ও মুসাকে আটকের চেষ্টা করছে৷
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘মারজান ছিল নব্য জেএমবি'র সবচেয়ে কমবয়সি কমান্ডার৷ সাংগঠনিক কার্যক্রমে তার দক্ষতা, সদস্য সংগ্রহ এবং কাউন্সিলিং করে আত্মঘাতী হামলায় শিক্ষিত তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার বিশেষ পারদর্শিতার কারণে সে এই কমান্ডিং পদবি পেয়েছে৷ গুলশান হামলার ঘটনায় মারজানের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর থেকেই তাকে খুঁজছিল গোয়েন্দারা৷''
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের শেষ দিকে জঙ্গি দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে মারজান৷ তার আপন বোনজামাই নব্য জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ সাগরের মাধ্যমে সে জঙ্গি কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়৷ আগে তারা দুজনই পুরানো জেএমবির একটি অংশের হয়ে কাজ করতো৷ ২০১৫ সালে তারা তামিমের নেতৃত্বে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী বিভাগে পড়াশুনা করলেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার কারণে মারজান পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে ফেলে৷ তার বাড়ি পাবনায়৷ মারজানই হামলার জন্য ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টকে বাছাই করে বলে পুলিশ জানায়৷
অন্যদিকে মারজানের সহযোগী সাদ্দাম উত্তরবঙ্গে নব্য জেএমবির সংগঠক হিসেবে কাজ করত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷ পুলিশ জানায়, ১০টি মামলার আসামি ছিল সাদ্দাম৷ এর মধ্যে রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও, রহমত আলী খাদেম, বাহাই রুহুল আমিন, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় এবং কুড়িগ্রামে হোসেন আলী হত্যা মামলা- এই পাঁচটি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিল সে৷
ওই পাঁচটি মামলা ছাড়াও গাইবান্ধার ডাক্তার দীপ্তি, সাঘাটের রাব্বি হত্যা, গোবিন্দগঞ্জের তরুণ দত্ত হত্যা, নীলফামারির কারবালার খাদেম হত্যা চেষ্টা ও দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের ডাক্তার বীরেন্দ্র হত্যাচেষ্টা মামলারও আসামি ছিল সাদ্দাম৷
আরো যেসব জঙ্গি নিহত:
গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলায় দেশি-বিদেশি ২২ জন নাগরিক নিহত হন৷ তখন পাঁচ জঙ্গিও নিহত হয়৷ তারা হলো: রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিব্রাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল৷
গুলশানের ঘটনার সাত দিনের মাথায়, অর্থাৎ ৮ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের দিন পুলিশের ওপর হামলা চালায় নব্য জেএমবির একটি গ্রুপ৷ এ সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আবীর রহমান নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য৷ পরে ৫ আগস্ট র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ওই ঘটনায় আটক শফিউল ও তার সহযোগী আবু মোকাতিল নিহত হয়৷
এরপর গত ২৬ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরের তাজ মঞ্জিলের জঙ্গি আস্তানায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে নিহত হয় ৯ জঙ্গি৷ যাদের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় মিললেও একজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি৷ পরিচয় পাওয়া ৮ জন হলো: দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ, টাঙ্গাইলের আবু হাকিম নাইম, ঢাকার ধানমণ্ডির তাজ-উল-হক রাশিক, ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান, ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক, সাতক্ষীরার মতিউর রহমান, রংপুরের রায়হান কবির ওরফে তারেক এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন৷
২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের আরেক অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবির ‘মাস্টারমাইন্ড' বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরী৷ তামিমের সঙ্গে তার আরো দুই সহযোগীও সেদিন নিহত হয়৷ তাদের একজন ধানমণ্ডির তওসিফ হোসেন ও যশোরের ফজলে রাব্বী৷
২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয় জাহিদুল ইসলাম নামে অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর৷ সে জেএমবির সামরিক প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল৷
১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে চালানো অভিযানে নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা তানভীর কাদেরী নিহত হয়৷ সেখান থেকে আটক করা হয় তিন নারী জঙ্গি ও তানভীরের ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে৷
৮ অক্টোবর গাজীপুরে পৃথক দুই অভিযানে ৯ জঙ্গি ও টাঙ্গাইলে দুই জঙ্গি নিহত হয়৷ একই রাতে সাভারের আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় জেএমবি'র অর্থদাতা আবদুর রহমান ওরফে নাজমুল ওরফে সারওয়ার জাহান৷ পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়৷ ২৪ ডিসেম্বর আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় সারিকা নামে এক নারী জঙ্গি আত্মঘাতী হন৷ এবং কিশোর আফিফ কাদেরি নিহত হয়৷ আফিফ আজিমপুর অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরির ছলে৷
আর সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি শুক্রবার নিহত হলো জঙ্গি মারজান ও সাদ্দাম৷
হোলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে গত ছয় মাসে জঙ্গিবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদুল আনাম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জঙ্গিবিরোধী অভিযানের দু'টি দিক আছে৷ একটি এন্টি টেররিজম এবং আরেকটি কাউন্টার টেররিজম৷ এখন যেটা হচ্ছে সেটা এন্টি টেররিজম৷ কিন্তু এরসঙ্গে সমানতালে কাউন্টার টেররিজমের কাজও চালাতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিদের রিক্রুটমেন্ট, তাদের অর্থের উৎস, তাদের মোটিভেশন তৎপরতাও বন্ধ করতে হবে৷ হয়তো সেটা নিয়েও কাউন্টার টেররিজমের কাজ হচ্ছে৷ এটা আরো জোরদার করা প্রয়োজন৷''