খালেদা জিয়া কি ‘মানবিক বিবেচনায়’ মুক্তি পাবেন?
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০হঠাৎ করেই আবার আলোচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ৷ গত মঙ্গলবার পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ পাঠাতে চিকিৎসকদের কাছে আবেদন করেছেন৷ যদিও দলের নেতারা এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না৷ এরপরই নতুন করে শুরু হয় আলোচনা৷ শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে টেলিফোন করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার বিষয়টিকে মানবিক বিবেচনায় দেখার আহবান জানিয়েছেন তিনি৷
বিষয়টি সরকার কিভাবে দেখছে? জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারা চিকিৎসকদের কাছে আবেদন করেছেন৷ কিন্তু এ বিষয়ে চিকিৎসকরা কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না৷ তারা যদি প্যারোলে চায়, তাহলে আদালতে আবেদন করতে হবে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আবেদন করতে পারেন৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার টেবিলে এমন কোন আবেদন নেই৷ এখন আবেদন না করলে অগ্রগতি তো বলা যাবে না৷’’
যদিও টেলিফোন সংলাপের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি আজই আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানাব৷'' সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভার আগে অথবা পরে বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন৷ এর আগে শুক্রবার ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে আলোচনা করেন৷ তবে তিনি জানান, এটা আদালতের বিষয়৷ বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি৷ এখানে সরকারের কিছু করার নেই৷ তবে রাজনৈতিক মামলা হলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেত৷
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া৷ সেখানকার মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার পাঁচ সদস্যের এই বোর্ডের সদস্য৷ মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করতে পারে না৷ যদিও আবেদনের পর আমরা একসঙ্গে বসিনি৷ আমরা মনে করছি, তার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল রয়েছে৷’’
তবে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে৷ যে কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন৷ প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে পরিবারের আবেদন সম্পর্কে শামীম ইস্কান্দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘তার দ্রুত অবনতিশীল স্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন৷ পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যয়বহনসহ তাদের দায়িত্বে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে আবেদনে৷’’
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘‘মেডিকেল বোর্ড যেন বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারকে সুপারিশ করে সেজন্য তাদের এ আবেদন৷ আবেদনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চেয়েছি৷’’
এদিকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিএনপির মধ্যে আগে থেকেই মতবিরোধ রয়েছে৷ বিভিন্ন সময়েআন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্তকরার কথাও বলে আসা হচ্ছিল দলটির পক্ষ থেকে৷ কিন্তু গত দুই বছরে তেমন কোনো জোরালো পরিস্থিতিও দলটি তৈরি করতে পারেনি৷ খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির অন্যতম নীতিনির্ধারক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি শুরু থেকেই বলে আসছি আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি পেতে সময় লাগবে৷ তার যে স্বাস্থ্যের অবস্থা তাতে দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন৷ যদিও আমাদের দলের নেতারা শুরু থেকে প্যারোলের বিরোধিতা করে আসছেন৷ তারা মনে করছেন, প্যারোলে চাইলে আমাদের পরাজয় হবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা শিগগিরই আবার জামিন চাইব৷ কিন্তু দেশে গণতন্ত্র না থাকলে ন্যায় বিচার পাওয়াও অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়৷ তাই প্যারোল বা জামিন দু'টোই সরকারের হাতে৷ তারা চাইলে যেকোন ভাবে তাকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে পারেন৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও ওয়ান ইলেভেনের সময় প্যারোলে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন৷ পাকিস্তানেও নওয়াজ শরীফ প্যারোলে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন৷ বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে৷’’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফও শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দু'টি পথ খোলা আছে৷ একটি হলো তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়াই করে জামিন নিতে হবে৷ অন্যটি হলো প্যারোলে মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে৷ ওনারা সেটা করেননি৷ উল্টো তারা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে নোংরা রাজনীতি করে যাচ্ছেন৷’’
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন দলটির নেতাকর্মীরা৷ বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা ওই সমাবেশে অংশ নেন৷ বক্তারা দ্রুত খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন৷ এর আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে৷
২০১৮ সালের আট ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...