খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নেপথ্যে কী?
১২ অক্টোবর ২০১৭সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঢাকায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দু'টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়৷ প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর হাকিম নুর নবী৷ মহান মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত ও বালাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করার অভিযোগে গত বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ বি সিদ্দিকী নামের একজন মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন৷ ওই দিনই আদালত ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে তেজগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দেন৷ পরবর্তীতে তেজগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান মামলার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দেন৷ বিচারক আগামী ১২ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন৷ এই মামলায় খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখানো হয়েছে৷
অপরদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিতে হাজির না হওয়ায় বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো: আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন৷
এর আগে ৯ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ বেগম জেসমিন আরা খালেদা জিয়াসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন৷ ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে ২০ দলীয় জোটের অবরোধের সময় চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে একটি বাসে দুর্বৃত্তরা পেট্রোল বোমা ছুড়লে আট যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যান৷ আহত হন ২০ জন৷ এই মামলায় তখন খালেদা জিয়াকে হকুমের আসামি করা হয়৷ এই মামলায়ও খালেদাকে পলাতক দেখানো হয়৷
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানিসহ মোট ৩৫টি মামলা রয়েছে৷ এরমধ্যে দুর্নীতির মামলা পাঁচটি৷ এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়ে৷ বাকি মামলা দায়ের হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে৷ দুদকের করা মামলাগুলো হচ্ছে- জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা৷
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ-৩ আদালতে বিচারাধীন৷ নাইকো দুর্নীতি মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ-৯ আদালতে বিচার শুরুর অপেক্ষায়৷ এ ছাড়া গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া দুর্নীতির মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা খালেদার আবেদন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন৷
যাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলায় খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখিয়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে৷ এছাড়া নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগ এনে বিস্ফোরক আইনে রাজধানীর গুলশান থানায় একটি, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় দুটি, খুলনায় একটি মামলা করা হয়েছে৷
খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হল৷ এর মধ্যে আজ (বৃহস্পতিবার) একই দিনে দু'টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়৷ এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক৷ খালেদা জিয়াকে আটকাতে চায় সরকার৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘লন্ডন থেকে দেশে ফেরার সময় এয়ারপোর্টে খালেদা জিয়াকে আটক করা হবে কি, হবেনা তা আমরা জানিনা৷ এটা সরকারের বিষয়৷ তবে তিনি দেশে ফিরবেন৷ গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনি ভীত নন৷''
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্যান্য মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘এই মামলাগুলো দেয়া হয়েছে তাঁকে হয়রানি করার জন্য৷ নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মোট ৩৫টি মামলা দেয়া হয়েছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে৷''
অন্যদিকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো মামলাই রাজনৈতিক কারণে দেয়া হয়নি৷ সর্বশেষ যে মামহানির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে সেই মামলার বাদি এ বি সিদ্দিক নামে একজন৷ তাঁর অভিযোগ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে যুদ্ধাপরাধী নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়েছে৷ তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেয়া হয়েছে৷ এটা মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতীয় পতাকার অবমাননা৷ এই মামলা গত বছরের৷ আদালত বার বার সমন দেয়ার পরও খালেদা জিয়া হাজির হননি৷ তাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে৷''
খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তারে বাধা নাই৷ গ্রেপ্তার করার জন্যই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়৷''
অন্যান্য মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার নির্দেশে যে সারাদেশে নাশকতা হয়েছে এটাতো সবার জানা৷ এছাড়া সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো মামলা হয়নি৷''