খালেদার লন্ডন সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আগ্রহ
১৫ জুলাই ২০১৭খালেদা জিয়ার এই সফরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷ দলটির নীতি-নির্ধারকরা চান, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর যেন পারিবারিক সফরের ভেতরই সীমাবদ্ধ থাকে৷ বিএনপিও এই সফরকে পারিবারিক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সফরই বলছে৷ এর সঙ্গে রাজনীতিকে মেলাতে চান না তারা৷ তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পরই এ বিষয়ে বলা যাবে৷
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘নেত্রী চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন৷ লন্ডনে তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান রয়েছেন৷ সেখানে তিনি ছেলে ছাড়াও নাতনিদের সঙ্গে দেখা করবেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘তারেক রহমানতো বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান৷ ফলে তাদের দু'জনের দেখা হলে রাজনীতি নিয়ে তো কিছু আলোচনা হতেই পারে৷ সেটাকে অত বড় করে দেখার কিছু নেই৷ তাই এটাকে কোনভাবেই রাজনৈতিক সফর না ভেবে চিকিৎসা ও পারিবারিক সফর হিসেবে দেখাই শ্রেয়৷ আর দেশেতো রাজনীতি করার কোন পরিবেশই নেই৷ ফলে এসব আলোচনা অবান্তর৷''
এদিকে, ক্ষমতাসীন দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, খালেদা জিয়ার এই সফর পারিবারিক হলেও তিনি লন্ডন যাচ্ছেন দু'টি টার্গেট নিয়ে৷ এগুরো হলো, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ও বিদেশে ‘লবিস্ট' নিয়োগ করা৷ তাদের ধারণা, এই সফরে মিডিয়ার সঙ্গে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি ও চড়া মূল্যে ‘লবিস্ট' নিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে পারেন খালেদা জিয়া৷ এছাড়া এই সফরে হতে পারে একাদশ সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করার শলা-পরামর্শও৷ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপাতত লন্ডনকে নিরাপদ মনে করে সেখানে যাচ্ছেন তিনি৷
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার এই সফর নিয়ে আমাদের কোন আগ্রহ নেই৷ কারণ আমরা তো আর বিএনপির রাজনীতি করি না৷ আমরা জনগণের রাজনীতি করি, জনগণকে নিয়েই আমাদের চিন্তা৷''
প্রসঙ্গত, দেশে হুলিয়া থাকায় ছেলের সঙ্গে প্রবাসেই খালেদা জিয়া সাক্ষাৎ করছেন গত এক দশক ধরে৷ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলে আসছেন, প্রবাসে থাকা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের ইশারাই বিএনপি পরিচালিত হয়৷ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা এবং আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার আগে খালেদার এই লন্ডন সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আগ্রহ৷ লন্ডন যাওয়ার আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেন খালেদা জিয়া, যেখানে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়৷
খালেদা কবে নাগাদ ফিরবেন- এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা নির্ভর করবে তার চিকিৎসার উপর৷ সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া লন্ডন গিয়েছিলেন৷ সেবার তারেকসহ পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করেই দেড় মাস পর ফিরেছিলেন তিনি৷ তারেক ও তাঁর স্ত্রী-কন্যারা ছাড়াও প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই সন্তানও তখন লন্ডনে ছিলেন৷ এবার কোরবানির ঈদ হবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে৷ যদি ঈদ করে খালেদা জিয়া দেশে ফেরেন তাহলে দেড় মাসের বেশি সময় বাইরে থাকবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার সফর নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না৷ উনি দেশে ফিরে এলে বোঝা যাবে সেখানে তিনি কি করেছেন৷ আর আওয়ামী লীগ নেতারা তো উন্নয়নের নামে এখনই ভোট চাইতে শুরু করেছেন৷ তারা বলছেন, উন্নয়ন ধরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগকে আরেকবার ভোট দিতে হবে৷
তিনি বলেন, ‘‘আর বিএনপিতো আছে সহায়ক সরকার নিয়ে৷ এতে জনগণের লাভ কী? জনগণের জন্যতো বিএনপি ভালো কিছু বলতে পারছে না৷ আসলে দেশে এখন বাকস্বাধীনতা অনেকটাই সীমাবদ্ধ৷ মিডিয়াও এ ব্যাপারে তেমন কিছু লিখছে না৷ এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷''