একতরফা নিষেধাজ্ঞা চাপালো যুক্তরাষ্ট্র
৭ আগস্ট ২০১৮২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তাদের দাবি, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাছাড়া গোটা অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদে মদত ও প্রভাব বিস্তার করে চলেছে সে দেশ৷ সেই সব কার্যকলাপে রাশ টানতে না পারায় পরমাণু চুক্তি শুরু থেকেই ত্রুটিপূর্ণ ছিল৷ একতরফা নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার জন্য বাকি দেশগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে তেহরানকে নতি স্বীকার করাতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন৷ মঙ্গলবার প্রথম দফার নিষেধাজ্ঞার আওতায় ইরানের আর্থিক কাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে৷ ফলে সে দেশের সরকার মার্কিন ডলার কেনা, সোনা কেনাবেচা ও সরকারি বন্ড বিক্রির ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়বে৷ আগামী ৩ মাসের মধ্যে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে ওয়াশিংটন৷ এছাড়া গাড়ি শিল্প, বেসামরিক বিমান পরিবহণ, গালিচা ও খাদ্য রপ্তানি, কিছু ধাতু আমদানির ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়বে ইরান৷
আগামী নভেম্বর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের জ্বালানি ক্ষেত্রের উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপাতে চায়৷ তার আগেই ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানি ধীরে ধীরে কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে ওয়াশিংটন৷
তবে মার্কিন চাপ প্রতিরোধ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মঙ্গলবার থেকে একটি আইন কার্যকর করছে৷ এর আওতায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি এড়াতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
একই সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সংকট কাটানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ ইরান অবশ্য এখনো পর্যন্ত সেই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেয় নি৷ সে দেশের মতে, পরমাণু চুক্তি থেকে সরে গিয়ে অ্যামেরিকা তার নির্ভরযোগ্যতা হারিয়েছে৷ ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি বলেছেন, ১৯৫৩ সাল থেকে ইরানে মার্কিন হস্তক্ষেপের ক্ষতিপূরণ পেলে এবং অ্যামেরিকা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি সে দেশের সঙ্গে সংলাপের জন্য প্রস্তুত৷ তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান পরমাণু চুক্তি মেনে চলবে, বলেন তিনি৷
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ জাভাদ জারিফ ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, বিশেষ করে বেসামরিক বিমানের ক্ষেত্রে কড়াকড়ির ফলে ইরানের সাধারণ নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে৷
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগেই ইরানের অর্থনীতি প্রবল চাপের মুখে পড়েছে৷ সে দেশের মুদ্রার নাটকীয় অবমূল্যায়ন ঘটে চলেছে৷ পেট্রোলিয়াম রপ্তানি কমে গেলে আরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে৷ পরমাণু চুক্তির বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি এখনো ওয়াশিংটনের কাছে নতি স্বীকার না করলেও বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থায় অ্যামেরিকার আধিপত্যের কারণে ইরান কোণঠাসা হয়ে পড়ছে৷