1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রিকেটার-বিসিবি : পক্ষ-প্রতিপক্ষ!

নোমান মোহাম্মদ ঢাকা
২৬ মার্চ ২০২১

সহসা কেউ সাহস করেন না এমনটা বলতে, যেমনটা বলেছেন সাকিব আল হাসান৷ যেমনটা মাশরাফি বিন মর্তুজাও৷ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বিপক্ষে ঠিক বিপ্লব হয়তো নয়৷ তবে দুজন সাহসী উচ্চারণের বিস্ফোরণে ঠিকই কাঁপিয়ে দিয়েছেন হর্তাকর্তাদের৷

https://p.dw.com/p/3rDk9
ছবি: SAEED KHAN/AFP/Getty Images

বাংলাদেশের ক্রিকেট আয়নার তাই অভিযোগের বারুদে পোড়া বিবর্ণ ছবি৷ লোকদেখানো আয়না মুছে যার শ্রী ফেরানো যাবে না কিছুতেই৷

ক্রিকেটার ও বোর্ডকর্তা - পরষ্পরের প্রতিপক্ষ তো নয়৷ বরং একই ছায়াতলের সহচর হবার কথা৷ কিন্ত হালফিলে সেটি হচ্ছে কই! টুকটাক খুটখাট লেগেই আছে৷ সুযোগ পেলেই ক্রিকেটারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করায় বোর্ড৷ ‘কোড অব কন্ডাক্ট'-এর শিকলে বেশিরভাগ সময় তা সহ্য করতে হয় মাঠের যোদ্ধাদের৷ কিন্তু কাঁহাতক!

সাকিব ও মাশরাফির মতো যোদ্ধারা তাই কখনো কখনো গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন৷ তাতে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ যে একেবারে থাকে না, এমন নয়৷ সঙ্গে ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থের ছবিটাও জনমানসে স্পষ্ট হয় প্রবলভাবে৷

এবারের ঘটনার শুরু সাকিবের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ বাদ দিয়ে আইপিএল খেলার ইচ্ছেতে৷ ছুটির অনুমোদন হয় বটে, তবে দেশসেরা ক্রিকেটারের অমন ইচ্ছেকে ভালোভাবে নেয়নি বোর্ড৷ গণমাধ্যমে নিজেদের উষ্মা প্রকাশে ঝাঁঝালো ছিলেন কর্তাব্যক্তিরা৷

সাকিব ছিলেন চুপচাপ৷ কিংবা সময়-সুযোগের অপেক্ষায়৷ ঘটনার বেশ কিছুদিন পর দিনকয়েক আগে এক ফেসবুক লাইভে নিজের ইচ্ছের স্বপক্ষে যুক্তি দেন৷ তার ছুটির দরখাস্ত এমনকি জাতীয় দলের দেখভালে থাকা ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান পড়েননি পর্যন্ত বলে ছোঁড়েন পাল্টা তির৷ এই বিভাগের কার্যক্রম, আরেক সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের হাই পারফম্যান্স বিভাগের কার্যকারিতাকে দাঁড় করান কাঠগড়ায়৷

জাতীয় দলের কিছু প্লেয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের ঘাটতি আছে: কোয়াব নেতা দেবব্রত পাল

ব্যস, বারুদে বিস্ফোরণ৷ আক্রোশের ফণা তুলে ফোঁস করে ওঠেন বোর্ডকর্তারা৷ সাকিবের আইপিএল খেলার ছাড়পত্র বাতিলের কথা পর্যন্ত বলেন৷

ওদিকে গণমাধ্যমে বোর্ডের বিপক্ষে সমানে কামান দাগতে শুরু করেন মাশরাফিও৷ অবসরকে ঘিরে বোর্ডের সঙ্গে যার টানাপড়েন দীর্ঘ সময় ধরে৷ সাকিবের সঙ্গে সুর মেলান তিনি৷ বোর্ডের নানা পর্যায়ের পেশাদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেন একের পর এক৷ বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তির অভিযোগে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বোর্ড৷

মাশরাফি এখন আর বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেই৷ নিষেধাজ্ঞার সময় চুক্তি থেকে বাদ পড়েছিলেন সাকিব৷ পরবর্তীতে আর নতুন করে চুক্তি হয়নি জাতীয় পর্যায়ে৷ সে হিসেবে মুখ বন্ধ রাখার বাধ্যবাধকতার সিলমোহর নেই তারও৷ সাকিবের ব্যাপারে বোর্ডসভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেয়া, প্রয়োজনে আইপিএল খেলার ছাড়পত্র বাতিলের যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আকরাম-দুর্জয়রা, সেটিও কথার কথা হয়েই থেকেছে৷ বরং এ নিয়ে আর কোনো ‘বাড়াবাড়ি' যেন না করা হয়, সে নির্দেশনা নিজেরোই নিজেদের দিয়েছেন বোর্ডকর্তারা৷

সাকিবের বিদ্রোহের লাল পতাকার বিপরীতে বিসিবি ওড়াচ্ছে সমঝোতার সাদা পতাকা৷ ব্যাপারটির আর জল গড়াতে দিতে চায় না, নিজেদের তরফ থেকে জলঘোলা করতেও অনিচ্ছুক৷

তাতে সাকিব-মাশরাফির কথার এক ধরনের নৈতিক বিজয় হলো সত্যি৷ কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের বদলে যাওয়ার আশা করা যায় কি? বছর দেড়েক আগে মাশরাফিকে বাদ দিয়ে দেশের সব ক্রিকেটার নিয়ে যে ‘বিপ্লব', সেটির ফলাফলে কতটুকু শুধরেছেন কর্তারা? কতটা বদলেছে কিংবা উপকৃত হয়েছে ক্রিকেট? এবার তাই সাকিব-মাশরাফির ব্যক্তিপর্যায় থেকে গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে পরিবর্তন হবে নীতিনির্ধারকদের মনমানসে, কাজ ও বিশ্বাসে - এ আশার আশ্বাস নেই সামান্যতম৷

কিন্তু এই যে ক্রিকেটার ও বোর্ডের পারষ্পরিক বিশ্বাসহীনতা, সেটি কেন? ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বোর্ড ও ক্রিকেটারদের অভ্যন্তরীণ বিষয় মিডিয়ায় চলে আসাকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন৷ পাশাপাশি পেশাদারিত্বের অভাবের কথাও উল্লেখ করেন তিনি, ‘‘সাকিব চিঠিটা যার কাছে দিয়েছেন, উত্তরটাও তার কাছ থেকেও চাইবেন৷ প্রয়োজনে তিনি (বিসিবির সিইও) মিডিয়ায় কথা বলবেন৷ তাই তো হওয়া উচিত ছিল৷ এখন বোর্ড যেহেতু সাকিবকে ছুটি দিয়েই দিয়েছে, এরপর সেটি নিয়ে আর আলোচনার অবকাশ আমি অন্তত দেখি না৷''

ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের সার্বিক সমন্বয়ের অভাবও দেখেন তিনি৷ তাতে তো সেতু হিসেবে কাজ করার কথা ক্রিকেটারদের এই সংগঠনেরই! কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক সেটা মেনে নিচ্ছেন, ‘‘এ জায়গায় আমাদের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারি না৷ আমাদের সঙ্গে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটারদের সার্বিক সমন্বয় আছে৷ কিন্তু জাতীয় দলের কিছু প্লেয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের ঘাটতি আছে; এটা সত্য৷ সাকিবের যে ব্যাপারগুলো মিডিয়ায় বলছে, সাকিবও কিন্তু আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেনি৷ সাকিব যোগাযোগ করলে অবশ্যই আমরা বলতাম৷ আমাদেরও আরো প্রো-অ্যাকটিভ হওয়া উচিত ছিল৷ এ জায়গায় আমাদের অবশ্যই ঘাটতি আছে৷''

ঘাটতি আসলে অনেক জায়গাতেই৷ বিশেষত ওই ‘পেশাদারিত্ব' শব্দটায়৷ এর সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাব হয়নি৷ বরং অভাবটাই প্রকট৷ কখনো-সখনো তাই সাকিব-মাশরাফিদের বিস্ফোরণ ঘটলেও পরিবর্তন হয় না তেমন কিছুর৷ না বিসিবির; না ক্রিকেট পরিচালনার৷