যৌনপল্লি উচ্ছেদ
২ সেপ্টেম্বর ২০১৩পুলিশ কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, মাদারীপুরের ঐ এলাকায় মঙ্গলবার কয়েক হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে যৌনপল্লিটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়৷ ন্যাশনাল রিফর্ম কাউন্সিল নামে সংগঠনটির হামলায় পল্লিটি কেবল বিধ্বস্তই হয়নি, লুটপাটও চালানো হয়েছে সেখানে৷ হামলাকারীরা জানিয়েছে, ইসলামি মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কাজ করছে এই যৌনপল্লি, যা কখনই ইসলাম সমর্থিত নয়৷
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে এই পল্লিটি গড়ে ওঠে৷ অন্তত ৫০০ যৌনকর্মী তাঁদের সন্তানদের নিয়ে সেখানে বাস করে আসছেন৷ হামলার পর পরই বেশিরভাগ কর্মী অন্যত্র চলে গেছেন অথবা আশ্রয় নিয়েছেন কোনো বেসরকারি সংস্থায়৷
অনেকদিন ধরেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে পল্লিটি উচ্ছেদের জন্য বলে আসছিল ইসলামপন্থি ঐ সংগঠনটি৷ যদিও যৌনকর্মীদের দাবি, এলাকার প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি সুউচ্চ ভবন বানানোর জন্য জমিটি দখল করার চেষ্টা করছেন৷ আর তাঁর ইন্ধনেই চালানো হয়েছে এই হামলা৷
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামালের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল: ইসলামের দোহাই দিয়ে এই যে হামলা এটাকে আপনি কি বলবেন? উত্তরে এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘‘মাদারীপুরের যৌনপল্লিগুলো বহু বছরের পুরোনো এবং যুগ যুগ ধরে এগুলো সেখানে বহাল তবিয়তে আছে৷ তাহলে হঠাৎ ধর্মের দোহাই কেন? এতদিন তো ধর্মের কথা বলা হয়নি৷'' তাই কোনো স্বার্থান্বেষী মহল এর পেছনে রয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ জমি দখলের জন্য প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা হয়ে থাকে বলে জানান সুলতানা কামাল৷ তাঁর মতে, এর পেছনে রাজনৈতিক কোনো কারণও থাকতে পারে৷
দ্বিতীয় প্রশ্নটি করা হয়েছিল যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে৷ এর জবাবে সুলতানা কামাল জানান, ‘‘উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে, পুনর্বাসন ছাড়া কোনো যৌনকর্মীকে তাঁর বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না৷ সুতরাং তাঁদের বিষয়টি রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত৷ আর তাঁদের কাজটা তো নতুন নয়৷ প্রয়োজনের তাগিদেই তাঁরা একে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷'' তিনি বললেন, এখানে রাষ্ট্রের করণীয় হলো, তাঁদের যাতে সঠিক পুনর্বাসন হয়, সে ব্যবস্থা করা৷
এপিবি/ডিজি (ডিপিএ)