কাঙ্খিত পেশা: কেশবিন্যাসকারী
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪জার্মানিতে অল্প বয়সি নারীদের পছন্দের তালিকায় একেবারে প্রথম দিকে যে পেশাটির নাম করা যায়, তা হলো নাপিত বা নরসুন্দরের পেশা৷ অনেক তরুণীই আজকাল স্বপ্ন দেখেন মানুষের কেশ পরিচর্যা করার, কাট-ছাট এবং রং দেওয়ার৷
ধোয়া, কাটা, শুকানো, অনেক বছর ধরেই মেয়েদের পছন্দের পেশার তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে চুল কাটা বা কেশ বিন্যাসের কাজ৷ বর্তমানে ২৫ হাজার শিক্ষানিবিশ রয়েছেন এই পেশায়৷ আর তাঁদের অধিকাংশই নারী৷ তবে ইদানীং এই পেশা নতুনদের আর আকৃষ্ট করতে পারছে না৷ এর প্রধান কারণ, এতে মজুরি খুব কম৷ তবে কেউ কেউ এখনও আগ্রহ নিয়ে চুল কাটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷
রেবেকার গল্প
রেবেকা সিমার কিছুটা উত্তেজনা অনুভব করছেন৷ গত অক্টোবর থেকে প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর তাঁর ‘ক্লায়েন্ট' ক্যার্স্টিন টেসকের চুল কাটা ও মেকআপের কাজটি করেন তিনি৷ আজ অবশ্য একটি বিশেষ দিন৷ শিক্ষানবিশির পরীক্ষার আগের দিন৷ অনেক কিছু করতে হবে৷ ক্যার্স্টিন টেসকে তাঁর মডেল৷ রেবেকার ভাষায়, ‘‘আজ চোখের পাপড়ি রং করবো, ভুরু প্লাক করবো৷ আগামীকালের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে যে৷''
প্রক্রিয়াটা চলে ৪৫ মিনিটের মতো৷ রং মিশিয়ে পাপড়িতে লাগানো হয়৷ চুল ধুয়ে শুকিয়ে ঠিকঠাক করা হয়৷ কয়েক মাস ধরে মডেল ক্যার্সিন তাঁর চুল বাড়তে দিয়েছেন৷ পরীক্ষকদের সামনে চুল কাটতে হবে শিক্ষানবিশি রেবেকার৷ ক্যার্সিন টেসকেও রেবেকার কাজে সন্তুষ্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘দু'বার আমার চুল রং করেছেন রেবেকা৷ আর কাজটা যে কত সুন্দর হয়েছে, তা আমি লক্ষ্য করেছি৷ এ ব্যাপারে আমার কোনো সংশয় নেই৷'' তিন বছর ধরে রেবেকা চুল কাটার স্কুলটিতে কাজ শিখছেন৷ প্রথম দিকে কাজটা সহজ ছিল না৷ শুরুতে পুতুলকে মডেল করে কাজকর্ম শিখেছেন৷ কেন না, মানুষের ওপর কাজ শেখা সহজ নয়৷
তবে রেবেকার অসুবিধা হয়নি৷ বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বেড়া পার হয়েছেন অবলীলায়৷ রসায়ন বিষয়টি সহজ ছিল না৷ রং মেশানো, রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করা শিখেছেন রেবেকা৷ সেলুন চালানো, চুল কাটার কৌশল ইত্যাদি তাঁকে আনন্দ দিয়েছে৷ এই তিনটি বছর তাঁর প্রয়োজন ছিল, বলেন ২০ বছর বয়সি এই তরুণী৷
রেবেকার প্রশিক্ষণকারী শার্লটে শ্মিটগাল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘একেক জন একেক বিভাগে পারদর্শী৷ তবে আমাদের এখানে সবাই সবকিছু করেন৷ মেয়েদের কাট, পুরুষদের কাট, বাচ্চাদের কাট, চুল কোঁকড়ানো ইত্যাদি৷ তবে কারো কারো প্রিয় বিভাগও রয়েছে৷'' সাবেক পূর্ব জার্মানির লাইপৎসিগ অঞ্চলে শিক্ষানবিশের সংখ্যা গত ১০ বছরে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে৷ কমিউনিস্ট আমলে নাপিত বা নরসুন্দরের পেশার জন্য বেশ দক্ষতার প্রয়োজন হতো৷ শিক্ষানবিশির পদও ছিল কম৷ হাতের কাজ শেখার ব্যাপারে তরুণরা এখন তেমন আগ্রহী হচ্ছেন না৷ তাই এই ধরনের কাজকে আকর্ষণীয় করার চিন্তাভাবনা করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
এছাড়া নরসুন্দরের কাজে বেতনও অত্যন্ত কম৷ সব মিলিয়ে মাসে ১,০০০ ইউরোরও কম বেতনে জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের৷ জার্মান সরকার ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে এই ধরনের পেশার দিকেই নজর রেখেছে৷ আগস্ট মাস থেকে রেবেকা সিমার ঘণ্টায় ৭.৫০ ইউরো পাবেন৷ প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আগেই একটি কাজের চুক্তি পেয়ে গিয়েছেন তিনি৷