চুল কাটা ও পরিচর্যা
২৮ ডিসেম্বর ২০১৩চুলকে ভালবাসেন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন৷ এটি নিয়ে রচিত হয়েছে নানা রোম্যান্টিক গল্প কবিতা৷ একেক সংস্কৃতিতে একেক ধরনের কেশবিন্যাস লক্ষ্য করা যায়৷ কেউ পছন্দ করে বেণি গাঁথতে, কেউ বা চুল ছেড়ে রাখতে৷ কারো পছন্দ চুলে রঙ করা, কারো বা তা পছন্দ নয়৷ কেউ ভালবাসেন দীর্ঘ কেশ কেউ বা ছোট৷ একেবারে মুণ্ডিত মস্তকও পছন্দ করে কেউ কেউ৷ চুল শুধু মাথাকে ঠাণ্ডা ও গরম থেকে রক্ষা করে না৷ সৌন্দর্য ও মর্যাদার বহিঃপ্রকাশও ঘটায়৷
বিভিন্ন সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ
জাপানি ক্ষৌরকার টাকামাসা কু বো ড্যুসেলডর্ফের ‘‘মোড'স হেয়ার'' সেলুনের ম্যানেজার৷ এটি একটি ফরাসি চেইন সেলুন৷ কিন্তু এটি ড্যুসেলডর্ফের এমন একটি জায়গায় অবস্থিত, যেখানে বহু জাপানি বসবাস করেন৷ এজন্য চুল কাটায় জাপানি ঐতিহ্য থেকে আইডিয়া নিয়েছেন তিনি৷ তাঁর সেলুনে চুল ছাঁটা ও পরিচর্যা করা হয়৷ তারপর মাথা ও বাহু ম্যাসেজ করা হয়৷
জাপানে চুলের বহু অর্থ রয়েছে৷ একে মনে করা হয় জীবন্ত কোনো কিছু৷ আগের দিনে সেখানে ইচ্ছাপূরণের জন্য এক গুচ্ছ চুল কেটে মন্দিরে নিয়ে যেত মানুষ৷
কুন্তলের প্রতি ভালবাসা টাকামাসা হঠাৎ করেই আবিষ্কার করেন৷ তাঁর জন্ম ব্রাজিলে৷ ১৫ বছর বয়সে জাপানে যান তিনি৷ ইচ্ছা ছিল পেশাদার ফুটবলার হবেন৷ কিন্তু এক দুর্ঘটনার ফলে সে আশা জলাঞ্জলি দিতে হয়৷ এক সেলুনে কাজ নেন টাকামাসা৷ এরপর দ্রুতগতিতে ক্যারিয়ার গড়তে অসুবিধা হয়নি৷
সংস্কৃতির অংশ
সংস্কৃতি ইতিহাসবিদ ক্রিশ্টিয়ান ইয়ানেকে সংস্কৃতি-বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কেশবিন্যাসের ইতিহাস গবেষণা করেছেন৷ তাঁর মতে, চুল অনেক আগে থেকেই সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে৷ প্রাচীনকালে মানুষের দেহ ছিল রোমশ৷ ধীরে ধীরে এই লোম বিলীন হতে শুরু করে৷ আর মূল্য বাড়তে শুরু করে মাথার চুলের৷ সুদীর্ঘ কেশরাজি অনেক সংস্কৃতিতেই মর্যাদার প্রতীক, বলেন কেশ গবেষক ইয়ানেকে৷
কোলনের ‘জেব্রা ট্রপিকানা' আফ্রোশপে ২০ বছর ধরে পশ্চিম আফ্রিকার ঐতিহ্য অনুযায়ী কেশ দীর্ঘায়িত করার স্টাইল চলে আসছে৷
আদতে আফ্রিকানদের শুষ্ক কোঁকড়া চুলকে আয়ত্তে আনতে বিশেষ কৌশলে লম্বা বেণি করা হতো, বলেন সেলুনের মালিক কেশবিন্যাসকারী বাবা ইয়ানকা ওডুয়াহ৷ বাবা ইয়ানকা ঘানার দূতাবাসে করেসপন্ডেন্ট হিসাবে কাজ নিয়ে জার্মানিতে আসেন৷ সেই সময় প্রায়ই সহকর্মীদের চুল ছেঁটে দিতেন৷ এক সময় একটি সেলুন খোলার চিন্তা মাথায় আসে৷ বিশেষ বুণন কৌশলে শুষ্ক ও ভঙুর চুলকে লম্বা করেন তিনি৷ বাবার ক্লায়েন্টদের মধ্যে বহু স্বর্ণকেশীও আছেন৷
আগে সেলুনগুলিতে গতানুগতিক পদ্ধতিতে চুঁল ছাটা হতো৷ ‘‘এখন চারদিকেই দেখা যায় এমন সব সেলুন, যেখানে কেশবিন্যাসে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সম্মিলন ঘটানো হয়৷''
পুরুষরাও পিছিয়ে নেই
কেশবিন্যাসে পুরুষরাও পিছিয়ে নেই৷ সেই সাথে বাদ যায় না শ্মশ্রু পরিচর্যাও৷ তুর্কি ক্ষৌরকার আদনান ওটুকান কোলনে ‘মেনস ওয়ার্লড' সেলুনটি চালাচ্ছেন৷ দাড়ি কামাতে ইলেকট্রিক রেজারের পরিবর্তে সনাতন ব্লেড ব্যবহার করেন তিনি৷ চুল ছাঁটতেও মাঝে মাঝে ব্লেড কাজে লাগান৷ ‘‘আমার বাবার কাছে হাতেখড়ি কাজটির৷ যেহেতু আমি ভাল আঁকতে পারতাম, তাই চুল কামিয়ে মাথায় নানা ডিজাইন করতে অসুবিধা হয়নি৷ এক সময় এটা একটা ট্রেনড ছিল,'' বলেন আডনান৷ তাঁর ‘কেশ কামানো শিল্প' নিয়ে তুর্কি টিভির সুপার ট্যালেন্ট অনুষ্ঠানে যোগ দেন আদনান৷
টাকামাসা, বাবা ইয়ানকা কিংবা আদনান তাঁদের সংস্কৃতির কেশ শিল্প জার্মানিতে নিয়ে আসেন৷ এক্ষেত্রে একটা বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেন৷
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ধরনের শিল্পকর্ম বেশিদিন টিকে থাকে না৷ কারণ মাথার চুল প্রতিদিন ০.৫ মিলিমিটার করে বাড়ে৷