কেমন হবে ভবিষ্যতের ডিজিটাল শিক্ষাজগৎ?
৩১ মে ২০১৪বস্তুত এই প্রকল্পের মূলমন্ত্র হলো, ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন পরস্পরের সঙ্গে অনলাইন সহযোগিতা করবে, তেমনই আবার খোদ অধ্যাপকদের পরীক্ষা নেবে এবং নম্বর দেবে তারা!
‘ডিজিটাল কালচার'-এর বিশেষজ্ঞ প্রফেসর শাহ নতুন ধরনের পড়াশুনো ও পাঠক্রমের সন্ধান করছেন৷ যে কারণে উত্তর জার্মানির ল্যুনেবুর্গ শহরের লয়ফানা ইউনিভার্সিটিতে শাহের আগমন৷
ব্যাঙ্গালোরের সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটি-তে ডিজিটাল কালচার-এর অধ্যাপক নিশান্ত শাহ জানালেন: ‘‘আমি বর্তমানে সেন্টার ফর ডিজিটাল কালচার্স-এর আন্তর্জাতিক ট্যান্ডেম সহযোগী৷ আমার মূল কাজ হলো হাইব্রিড পাবলিশিং ল্যাব নামধারী এই দক্ষতার ট্যান্ডেম-কে ডিজিটাল যুগে শিক্ষা প্রসারের নতুন পন্থা উদ্ভাবনে সাহায্য করা৷''
গত শতাব্দীর ৩০-এর দশকের সব আর্মি ব্যারাক৷ হালে এগুলোই হলো ল্যুনেবুর্গের লয়ফানা ইউনিভর্সিটি৷ তবে ভবিষ্যতের বড় পরিকল্পনা আছে৷ যেমন প্রখ্যাত স্থপতি ড্যানিয়েল লিবেসকিন্ড-এর নকশা অনুযায়ী একটি কেন্দ্রীয় ভবন তৈরি করা৷ লিবেসকিন্ড আবার লয়ফানা ইউনিভার্সিটিতে পড়ান এবং তিনি নিঃসন্দেহে নতুন অনলাইন পাঠক্রমগুলির ‘স্টার'৷ যেমন ধরা যাক নগর উন্নয়নের আন্তঃ-বিষয়ক প্রচেষ্টাটিতে৷ লিবেসকিন্ড-এর মতে: ‘‘ভবিষ্যতের শহরগুলিতে আবেগপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংশ্লষের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যা-তে এমন সব প্রকাশ্য স্থান ও বাসস্থান নির্মাণ করা সম্ভব হয়, যেখানে প্রতিটি মানুষ তার নিজের স্বপ্ন সার্থক করার প্রচেষ্টা করতে পারে৷''
‘থিংক-ট্যাংক সিটি' নামের এই পাইলট প্রোজেক্টে সারা বিশ্বের ছাত্ররা ভবিষ্যতের আদর্শ শহরটি কল্পনা করতে পারবে৷ তত্ত্বাবধায়কদের কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো: মুখ্য ধারণাগুলি বুনিয়াদ থেকে, অর্থাৎ শহুরে মানুষ ও নগরবাসীদের কাছ থেকে আসা চাই৷ ছাত্ররা ছোট ছোট আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে, কাজেই তাদের সাংস্কৃতিক পার্থক্য সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়৷
লয়ফানা ডিজিটাল স্কুলের প্রোজেক্ট ম্যানেজার আন কাট্রিন ওয়াটোল্লা জানালেন: ‘‘প্রথম কাজটা ছিল, প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীদের নিজের নিজের শহর দেখে তাৎপর্যপূর্ণ খুঁটিনাটির ছবি তোলা৷ স্বভাবতই ছবিগুলোর মধ্যে অনেক ফারাক থাকে৷ ইউরোপের মানুষদের কাছে তাদের শহরে যে বস্তুগুলি চোখে পড়ার মতো, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষদের কাছে তা হয়ত সম্পূর্ণ আলাদা৷''
প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীরা যেমন বিভিন্ন দেশের – এমনকি মহাদেশের মানুষ, তেমনই তাদের শিক্ষার ধরন ও পরিমাণ আলাদা৷ নয়ত অনলাইন পাঠক্রমে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক মানুষদের সংখ্যা কম নয়৷ লয়ফানা ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হল্ম কেলার জানালেন: ‘‘আমরা এই পাঠক্রমে তিন হাজার অংশগ্রহণকারীকে নিয়েছি, অর্থাৎ তিন হাজার আবেদনের পর আমরা রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করি৷ আমরা চাই কোয়ান্টিটির পরিবর্তে কোয়ালিটি, এবং আমাদের কোর্সগুলোর ছাত্রছাত্রীদের খুবই ভালো দেখাশোনা করে থাকি৷''
সাফল্যের চাবিকাঠি হল সুপারভিশন এবং টিমওয়ার্ক৷ ইরিনা মট রোমানিয়া থেকে অনলাইনে আলোচনায় যোগদান করে থাকেন৷ থিংক-ট্যাংক সিটি প্রকল্প সম্বন্ধে তাঁর অভিজ্ঞতা সাধরণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা: ‘‘আমি যে পরিবেশ থেকে, যে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে এসেছি, তার ভিত্তি হলো প্রতিযোগিতা৷ কিন্তু এই পাঠক্রমে অংশগ্রহণ করে আমরা আদানপ্রদানের, মতবিনিময়ের যে ম্যাজিক, তার স্বাদ পেয়েছি৷''
ল্যুনেবুর্গে শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ বি.এ. ডিগ্রী নেওয়ার আয়োজন থাকবে৷ হাজার বছরের পুরনো শহরটি অজান্তেই ডিজিটাল যুগে পৌঁছে গেছে৷