কার দখলে ডনবাস, চলছে বিতর্ক
১৫ জুন ২০২২ক্রেমলিনের পর এবার কিয়েভও একই কথা বললো। মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ডনবাস অঞ্চল কার দখলে থাকবে, তার উপরেই নির্ভর করবে ইউক্রেন যুদ্ধে কে জয়ী! বস্তুত, সোমবার ক্রেমলিনও বলেছিল, ডনবাসের স্বাধীনতাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তুমুল লড়াই চলছে ডনবাস অঞ্চলে। এক সপ্তাহ আগে রাশিয়ার কর্মকর্তারা দাবি করেছিল, ডনবাসের একটি বড় অংশ এখন তাদের দখলে। কিন্তু কিয়েভ জানিয়েছিল, এখনো লড়াই চলছে। ইউক্রেনের সেনা বেশ কিছু অঞ্চল পুনর্দখল করেছে। বস্তুত, লুহানস্কের অনেকটা অংশ রাশিয়া দখল করতে পারলেও বাকি এলাকায় এখন লড়াই চলছে। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, কোনোভাবেই ইউক্রেনের কোনো অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে না। ক্রাইমিয়ার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যাবে না।
ন্যাটোর বৈঠক
এরই মধ্যে বুধবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসছে ন্যাটো সদস্যরা। তার আগে মঙ্গলবার ন্যাটোপ্রধান জেন স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে আরো ভারি অস্ত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে বৈঠকে। সদস্য দেশগুলিকে অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করার কথা বলা হবে। অ্যামেরিকা, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ভারি অস্ত্র ইউক্রেনকে পাঠিয়েছে। যার সাহায্যে পূর্ব ইউক্রেনে লড়াই চালাচ্ছে জেলেনস্কির বাহিনী।
ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলা আটকাতে তাদের আরো ভারি অস্ত্র প্রয়োজন। দ্রুত যাতে তা তাদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, তার সিদ্ধান্ত হতে পারে ন্যাটোর বৈঠকে। এছাড়াও ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনকে ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও হতে পারে এই বৈঠকে। মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী হেগের বাড়িতে মিলিত হয়েছিলেন একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। সেখানেও ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিমান নিয়ে উদ্বেগ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিমান সংক্রান্ত কমিটি রাশিয়ার বিমান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য, রাশিয়ায় যে বিমানগুলি চলে তার অধিকাংশই পশ্চিমা বিশ্বের। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে ওই বিমানগুলির স্পেয়ার পার্ট দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপ এবং অ্যামেরিকা। ফলে বিমানগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো হওয়া অসম্ভব। সেই অবস্থাতেই বিমানগুলি নিয়মিত যাতায়াত করছে। এর ফলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা হতে পারে বলে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলি জানিয়ে দিয়েছে, কোনোভাবেই এখন রাশিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা সম্বব নয়।
রাশিয়ার ব্যাংক
রাশিয়ার একাধিক ব্যাংকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলি। কয়েকটি ব্যাংকের সুইফট কোডও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলির সঙ্গে লেনদেন ২৪ জুন বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অ্যামেরিকা জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত তা চালু রাখা হচ্ছে। অ্যামেরিকার এই সিদ্ধান্তে একটি বিষয় স্পষ্ট, ইউরোপের দেশগুলিকে তেল সরবরাহের জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিচ্ছে অ্যামেরিকা। ষষ্ঠ নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজে তেলের উপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আছে। সামান্য তেল এখনো রাশিয়া থেকে নিচ্ছে ইউরোপ। তার জন্যই রাশিয়ার ব্যাংকগুলির সঙ্গে লেনদেনের রাস্তা খোলা রাখা হচ্ছে। ডিসেম্বরের পর তা আর রাখা হবে না মনে করা হচ্ছে।
নিকারাগুয়ার সিদ্ধান্ত
এদিকে নিকারাগুয়ার পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়ার সেনাকে তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানানো হবে। দুই দেশের সেনা একসঙ্গে সেনা মহড়ায় অংশ নেবে। রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্রও নেবে তারা। এছাড়াও অ্যামেরিকা এবং কয়েকটি দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ থেকেও তাদের অস্ত্র নেওয়ার কথা। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ, বিশেষ করে পশ্চিম যখন রাশিয়ার উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে, তখন নিকারাগুয়ার এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ)