কে জিতবে বিশ্বকাপ?
২৯ মে ২০১৪গোল্ডম্যান-স্যাক্স-এর কাজ সাধারণত হাই ‘ফাইন্যান্স’ নিয়ে৷ সংগঠনটির প্রধান অর্থনীতিবিদ হঠাৎ বিশ্বকাপ নিয়ে রিপোর্ট লিখতে গেলেন কেন, তা তিনিই জানেন৷ তবে সেই প্রতিবেদনে রীতিমতো ‘পার্সেন্টেজ’ কষে দেখানো হয়েছে: ব্রাজিলের জেতার সম্ভাবনা ৪৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ; তার পরেই আসছে আর্জেন্টিনা, যাদের ১৪ দশমিক এক শতাংশ; তৃতীয় স্থানে জার্মানি, যাদের ১১ দশমিক চার শতাংশ৷
তবে এ সব শুনে ‘ইমপ্রেস্ড’ হবার আগে স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভালো যে, ২০১০ সালের বিশ্বকাপেও ব্রাজিল জিতবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল গোল্ডম্যান-স্যাক্স৷ সেবার নাকি ব্রাজিলের জেতার সম্ভাবনা ছিল ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ৷ শেষমেষ দক্ষিণ আফ্রিকায় জেতে স্পেন, যদিও গোল্ডম্যান-স্যাক্স-এর হিসেব অনুযায়ী তাদের জেতার সম্ভাবনা ছিল ১৫ দশমিক সাত শতাংশ৷ ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নেয়৷
ড্রিম টিম
খেলাধুলা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণের কোম্পানি ‘অপ্টা’ ইউরোপের পাঁচটি টপ লিগের গত মরশুমের ডাটা অ্যানালাইজ করে কাদের বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা কতটা, তার একটি ফর্মুলা বার করেছে৷ ‘টপ লিগ’ বলতে ইংল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি ও জার্মানির ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবল লিগ৷ এই সব লিগের যে সব সেরা প্লেয়াররা এখন ফর্মে আছেন, তাঁদের নিয়ে একটি ড্রিম টিমও সৃষ্টি করেছে ‘অপ্টা’৷
ড্রিম টিমে লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো কিংবা ইয়াইয়া টুরের মতো তারকারা না থাকলেই আশ্চর্য হতো৷ কিন্তু সে দলে জার্মানি কিংবা উরুগুয়ের দু’জন করে প্লেয়ার থাকাটা একটা চমক বৈকি৷ জার্মানি থেকে রয়েছেন জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ফিলিপ লাম এবং বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড ক্লাবের স্ট্রাইকার মার্কো রয়েস৷ এই ড্রিম টিমের ভিত্তি হলো গত মরশুমের পরিসংখ্যান: যেমন লামের সঠিক পাস দেওয়ার পরিসংখ্যান হলো ৯২ শতাংশ; অপরদিকে ২০১৩ সালে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রয়েস ৪০টি গোলে সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷
অসাধ্য নয়, তবে কঠিন
পরিসংখ্যান মাথায় থাক, কিন্তু ব্রাজিলে বহুকাল পরে বিশ্বকাপ বলেই যেন অধিকাংশ ব্রাজিলবাসী তথা বিশ্ববাসী ধরে নিয়েছেন যে, ব্রাজিল জিতবেই৷ ব্রাজিলের সেলেসাও বা বাছাই-রা এবার খেলবে স্বদেশের ফুটবল-পাগল দর্শকদের সামনে৷ কোচ আর কেউ নন, লুইজ ফেলিপে স্কোলারি, যিনি ২০০২ সালে ব্রাজিলকে তাদের শেষ বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন৷ ব্রাজিলের গ্রুপ ‘এ’-তে আছে ক্রোয়েশিয়া, মেক্সিকো এবং ক্যামেরুন – যা অসাধ্য কিছু নয়৷ তবে?
গ্রুপ পর্যায় সহজে পার হলেও তার পর থাকবে নকআউট স্টেজ৷ সেখানে স্পেন অথবা নেদারল্যান্ডস আবার বাদ সাধতে পারে৷ অবশ্য এই ব্রাজিল দল তাদের শেষ সাতটি খেলার একটিতেও হারেনি; শেষ ১৪টি খেলার মধ্যে জিতেছে ১৩টিতে; ২০১৩ সালের কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে স্পেনকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে৷ বাকি রইল কুসংস্কার: আজ অবধি কোনো দল, যারা কনফেড কাপ জিতেছে, পরে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি৷
ফুটবল বিশ্বকাপ মহাকাব্যের সম্ভাব্য মহারথী
পর্তুগালের বিশ্বকাপ জয়ের আশার একটা শুভনাম আছে: ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ এক মহারথীতে মহাকাব্য হয় কিনা, সেটা অন্য কথা৷ তবে ২৯ বছর বয়সি রোনাল্ডো আজ সম্ভবত বাস্তবিক বিশ্বের সেরা ফুটবলার৷ শুধু তাঁর নিজের দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতাই নয়, এই নতুন রোনাল্ডো আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘ম্যাচিওর’, মুহূর্তের মধ্যে আক্রমণের পন্থা ভেবে নিয়ে নিখুঁত পাসটি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন৷
বলতে কি, লিওনেল মেসি যে অনুরূপভাবে কোনো আর্জেন্টাইন মহাকাব্যের নায়ক হতে পারবেন, সে কথা তাঁর অতি বড় ভক্তরাও মনে করেন না৷ অপরদিকে রেয়াল মাদ্রিদের আনহেল দি মারিয়ার সঙ্গে মেসির কম্বিনেশন যে কোনো ‘ডিফেন্স’-কে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলার ক্ষমতা রাখবে৷ কাজেই আলবিসেলেস্টে নামে পরিচিত আর্জেন্টিনা দলকে হিসেবের বাইরে ফেলা চলে না৷
বাকি রইল জার্মানি৷ জার্মান ফ্যানরা গত ২৪ বছর ধরে আবার একটি বিশ্বকাপ জয়ের আশায় আছেন৷ জার্মান দলে চিরকালই নবীন ও প্রবীণদের একটি সুচিন্তিত সংমিশ্রণ থাকে – কিন্তু সেই সঙ্গে থাকে একটি শৃঙ্খলাবোধ যার ফলে খোলোয়াড় ও খেলার বিকাশকে যেন কিছুটা শৃঙ্খল পরে থাকতে হয়৷ এবারের বিশ্বকাপে অভিজ্ঞ মিরোস্লাভ ক্লোজে হয়ত বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলের হিসেবে (ব্রাজিলের) রোনাল্ডোকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন, কিন্তু জার্মানির ভাগ্য বস্তুত নির্ভর করবে মারিও গোয়েটৎসে এবং মার্কো রয়েসের মতো উঠতি তারকারা ফুটবল গগনে কতদূর উঠতে পারলেন, তার উপরে৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)