কাবুলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
১৮ আগস্ট ২০২১বিশ বছর পর ক্ষমতায় ফিরছেন নির্বাসিত তালেবান নেতারা। তা নিয়ে আফগান জনগণের একাংশ আনন্দিত। মঙ্গলবার কান্দাহারে পা রাখেন শীর্ষ তালেবান নেতা মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার। এতদিন তিনি দোহায় ছিলেন। আফগান প্রশাসনের সঙ্গে তালেবানের যে দীর্ঘ সমঝোতা বৈঠক চলছিল দোহায়, তার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। এর আগে অ্যামেরিকার সঙ্গে শান্তি বৈঠকেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তালেবান কাবুল দখলের পর তালেবান-আফগান বৈঠক ভেস্তে গেছে। বিশ বছর পর নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন শীর্ষ তালেবান নেতৃত্ব।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেলে বারাদার কান্দাহারে পা রাখতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন বহু মানুষ। বিশাল কনভয় নিয়ে তারা যাত্রা শুরু করেন।
কাবুলে সাংবাদিক বৈঠক
অন্যদিকে এদিনই কাবুলে প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করেন তালেবান মুখপাত্র। সেই সাংবাদিক বৈঠক ঘিরেও যথেষ্ট আগ্রহ ছিল সাধারণ মানুষ এবং সাংবাদিকদের। সাংবাদিক বৈঠকে খানিকটা মধ্যবর্তী অবস্থান নিয়েছেন তালেবান নেতৃত্ব। জানিয়েছেন, বিদেশি শক্তির সঙ্গে যারা কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কড়া অবস্থান নেওয়া হবে না। যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদেরও ফিরে আসার আহ্বান করেছেন তালেবান মুখপাত্র। তিনি জানিয়েছেন, সমস্ত আফগানকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আফগানিস্তান তৈরির লক্ষ্যে এগোচ্ছেন তালেবান নেতৃত্ব।
এখনো পালাচ্ছে মানুষ
মঙ্গলবারও আফগানিস্তান ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছেন বহু মানুষ। অ্যামেরিকা জানিয়েছে, এদিন এগারোশ মার্কিন নাগরিককে উদ্ধার করে দেশের বিমানে চড়ানো হয়েছে। ১৩টি মার্কিন সেনার বিমান এদিন আফগানিস্তান থেকে অ্যামেরিকায় উড়েছে। হোয়াইট হাউস সূত্র সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে তিন হাজার ২০০ মার্কিন নাগরিককে অ্যামেরিকার বিমানে তোলা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে দুই হাজার আফগানকেও অ্যামেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তবে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য, এখনো বহু অ্যামেরিকান আফগানিস্তানে আটকে আছেন। তাদের জন্য একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রশাসন। অ্যামেরিকার সংবাদমাধ্যমে বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব সকলকে কাবুল বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু তারা কী ভাবে পৌঁছাবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কথা বলা হয়নি ওই বিবৃতিতে। নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়েও কোনো কথা বলা হয়নি। মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, এখনো প্রায় ১০ হাজার অ্যামেরিকান নাগরিক আফগানিস্তানে আটকে আছেন।
মঙ্গলবার ১৩০ জন জার্মান নাগরিককে কাবুল থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখনো বেশ কিছু জার্মান নাগরিক আফগানিস্তানে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শরণার্থী সমস্যা
আফগানিস্তানে অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক অবশ্য এখনো তাদের দূতাবাস খোলা রেখেছে। জাতিসংঘও তাদের বহু দফতর বন্ধ করে দিয়েছে। তবে শরণার্থী নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএনএইচসিআর আফগানিস্তানে কাজ চালিয়ে যাবে বলে ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুইশ কর্মী কাবুল সহ আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে আছেন বলে জানানো হয়েছে। ডিডাব্লিউকে তারা জানিয়েছে, বহু আফগান শরণার্থীর এখন যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। ইরান-পাকিস্তানও তাদের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।
অস্ট্রিয়া জানিয়েছে, তাদের দেশে আফগান শরণার্থীদের জায়গা দেওয়া হবে না। তাদের বক্তব্য, দেশটিতে প্রায় ৩৫ হাজার আফগান শরণার্থী আছেন। যাদের অধিকাংশই নবীন। শিক্ষার অভাবে তারা অস্ট্রিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। সে কারণেই নতুন করে শরণার্থী নেওয়া হবে না।
যুক্তরাজ্য অবশ্য জানিয়েছে, তারা ২০ হাজার নতুন আফগান শরণার্থী নিতে প্রস্তুত। যাদের জীবনের ঝুঁকি আছে, তাদেরকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। এদিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে তারা জি সেভেনের একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন। আগামী সপ্তাহে বৈঠক হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ, এপি, আল জাজিরা)