কান্নায় ভেঙে পড়লেন রোহিঙ্গারা
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা দেখতে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে যান তুরক্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এর্দোয়ান এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু৷ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী৷
দুপুর দেড়টার দিকে উখিয়ার কুতুপালংয়ে পৌঁছে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত ক্যাম্প ও অস্থায়ী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তাঁরা৷ ক্যাম্পগুলো সরেজমিন দেখার সময় রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন৷ শোনেন তাঁদের দেশত্যাগের পিছনে নির্মমতার কথা৷ হত্যা ও নির্যাতনের কথাও৷
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মুখপাত্র ইউনূস আরমান নিজেও তুরস্কের ফার্স্ট লেডির সঙ্গে কথা বলেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, যাঁদের পরিবারের সদস্যরা হত্যার শিকার হয়েছেন, এমন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন৷ ঘটনার বর্ননা দেয়ার সময় রোহিঙ্গারা কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ ফার্স্ট লেডি নিজেও এ সময় আবেগে কেঁদে ফেলেন৷ তিনি রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন৷ দেন সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে চেষ্টার আশ্বাসও৷’’
কুতুপালং নিবিন্ধিত ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পর তুরস্কের ফার্স্ট লেডি প্রায় দুই কিলোমিটার কাদামাটির রাস্তা পায়ে হেঁটে বালুখালি অনিবিন্ধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান৷ সেখানেও তিনি কথা বলেন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে৷ দেড় ঘণ্টা পরিদর্শন শেষে পরে তুরস্কের তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এর্দোয়ান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কক্সবাজারে৷ ঐ ব্রিফিং-এ উপস্থিত সাংবাদিক শেখ শাহরিয়ার জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তুরস্কের ফার্স্ট লেডি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা করছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়৷ এই মানবিক বিপর্যয় থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে তুরস্ক বরাবর বাংলাদেশের পাশে থাকবে৷ রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তা অব্যাহত থাকবে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা ৩০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছি এবং আমরা এ বিষয়ে সচেতন৷ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা করছেন৷ আমরা আমাদের রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহয়তা অব্যাহত রাখবো৷''
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা অত্যন্ত অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে৷ বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য যা করছে, সেজন্য তুরস্কের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ৷ তুরস্ক রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে৷ ভবিষ্যতেও এ সমর্থন অব্যাহত থাকবে৷''
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ আগামী শনিবার কাজাকিস্তানের রাজধানী আস্তানাতে ‘অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কান্ট্রি'-র একটি শীর্ষ সম্মেলন হবে৷ সেখানে রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হবে৷ এছাড়া দু'সপ্তাহ পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের আলোচনার সাইডলাইনে রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি বৈঠক হবে৷ সেখানে জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব, সাবেক মহাসচিব কোফি আনান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদেরকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রেসিডেন্ট মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ আমরা তাঁদের প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছি৷ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এর সমাধান খুঁজে বের করা দরকার৷''
এদিকে জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা তিন লাখে পৌঁছাতে পারে৷ ১২ দিন আগে শুরু সহিংসতায় এরইমধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করা জাতিসংঘের কর্মীরা৷ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রধান দীপন ভট্টাচার্য জানয়েছেন, এতে ভয়াবহ খাদ্য সংকট হতে পারে৷ ইউএনএইচসিআর বলছে, মিয়ানমার থেকে সর্বশেষ সহিংসতায় বাংলাদেশে এ পর্যন্ত এক লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে৷
রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের আর কী করণীয় বলে মনে হয়? লিখুন নীচের ঘরে৷