করোনার ছোঁয়াচে সংস্করণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে
২০ জানুয়ারি ২০২১বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যখন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মানুষ সবে কিছুটা সাফল্য পাচ্ছে, ঠিক তখনই সেই ভাইরাসের আরো ছোঁয়াচে স্ট্রেন বা সংস্করণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগকে হুমকির মুখে ফেলছে৷ বিশেষ করে ব্রিটেন থেকে করোনারনতুন সংস্করণ কমপক্ষে বিশ্বের ৬০টি দেশে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এক সপ্তাহ আগেও সংখ্যাটি ছিল ৫০৷ আরো ছোঁয়াচে বলে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেন ২৩টি দেশে শনাক্ত হয়েছে৷
নতুন এই চ্যালেঞ্জের মুখে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে উঠেছে৷ গত সাত দিনে গোটা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা রেকর্ড ৯৩,০০০ ছুঁয়েছে৷ একই সময় প্রায় ৪৭ লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে৷ এমন পরিস্থিতির জন্য করোনা ভাইরাসের নতুন দুই সংস্করণ কতটা দায়ী, সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য না পাওয়া গেলেও সংশয় কাটছে না৷
এমন প্রেক্ষাপটে করোনার টিকাকরণ কর্মসূচিতে আরো গতি আনার জন্য চাপ বাড়ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন চলতি বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টিকা দেবার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ কিন্তু বাস্তবে ইইউ-সহ বিশ্বের অনেক দেশেই টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷
চীন করোনা সংকট প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল হলেও সে দেশে সংক্রমণের হার আবার বাড়তে শুরু করেছে৷ গত তিন সপ্তাহ ধরে এমন প্রবণতা দেখা যাওয়ায় চীনের সরকার বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা মানুষের উপর নজরদারি বাড়াচ্ছে৷
করোনা সংকটের সরাসরি অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের একাধিক সংখ্যার সূত্র অনুযায়ী বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে৷ করোনা মহামারির জের ধরে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলায় এমন খাদ্য সংকট দেখা যাচ্ছে৷ বুধবার প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী চলমান মহামারির ফলে প্রায় ১৯০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যকর খাদ্য কিনতে পারছেন না৷ গোটা বিশ্বে সব মিলিয়ে প্রায় ৬৮ কোটি ৮০ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে বলে রিপোর্টে অনুমান করা হচ্ছে৷ এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকেই এশিয়া মহাদেশে বাস করেন৷ আফগানিস্তানে প্রতি ১০ জনের মধ্যে এক জন অপুষ্টির শিকার৷ করোনা সংকটের ফলে সার্বিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে৷
জাতিসংঘের সূত্র অনুযায়ী করোনা মহামারির ফলে খাদ্য সরবরাহের পথে একাধিক বাধা সৃষ্টি হয়েছে৷ সে কারণে শুধু দরিদ্র মানুষ নয়, সম্পন্ন পরিবারের পক্ষেও খাদ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও অনেক পরিবারকে ফুড ব্যাংকের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, শিশু কল্যাণ সংস্থা ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্মিলিতভাবে এক রিপোর্টে এমন করুণ চিত্র তুলে ধরেছে৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)