এস কে সিনহার রায়ের তারিখ পিছিয়ে গেল
৫ অক্টোবর ২০২১এই রায় ঘোষণার কথা ছিল মঙ্গলবার ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলমের৷ তিনি না থাকায় আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক আলী হোসেন রায় ঘোষণার তারিখ ৫ অক্টোবর থেকে পিছিয়ে ২১ অক্টোবর করেন৷
আসামিদের পক্ষে আইনজীবী বোরহান উদ্দিন, শাহীনুর ইসলাম অনিসহ কয়েকজন বিচারের মুখোমুখি হওয়া সাত আসামির খালাস চান৷ আর আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম৷
দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের যেসব ধারায় এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তাতে অপরাধ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তি হতে পারে৷
মৃত্যুদণ্ডের কোনো ধারা না থাকায় এস কে সিনহাসহ পলাতক আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি৷
গত ২৯ আগস্ট আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে সাত আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন৷ তারা হলেন, ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান ও একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা৷ তাদের মধ্যে বাবুল চিশতী কারাগারে বাকিরা জামিনে আছে৷
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়কে পলাতক দেখিয়ে মামলারটির বিচার চলে৷
মামলা বৃত্তান্ত
বিচারপতি সিনহা তিন বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমানোর পর দুদক অভিযোগ পায়, তিনি ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেওয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছিলেন৷
অভিযোগ পর দুদকের দীর্ঘ তদন্তে পর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন৷
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুইটি অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন৷
তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা৷ ঋণের জামানত হিসেবে আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে৷ ওই দম্পতি এস কে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে৷
দুদকের মতে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন৷
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়৷ এবং পরদিন এস কে সিনহার নামে মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়৷ ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়৷ পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা তোলা হয়৷ এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর৷
এজাহারে বলা হয়, ‘‘আসামি রনজিৎ চন্দ্র ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেন৷ ঋণ গ্রহীতা দুইজনই অত্যন্ত গরিব ও দুস্থ৷ তারা কখনও ব্যবসা-বাণিজ্য করেননি৷''
পাঁচ মাসের তদন্ত শেষে দুদক কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ১১ জনকে আসামি করে এ মামলার অভিযোগপত্র দেন৷ তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবের চার কোটি টাকা জব্দ করা হয়৷
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন ও পাচার করেছেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ ৷
বাংলাদেশের ইতিহাসে সিনহাই প্রথম সাবেক প্রধান বিচারপতি, যিনি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়েছেন ৷ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে এস কে সিনহার আপন বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং মামাতো ভাইয়ের ছেলে শঙ্খজিৎ সিনহাও রয়েছেন৷
গত ২৪ আগস্ট আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন৷ আসামিপক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ২৯ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত৷ পরে রায়ের পর্যায়ে আসে মামলাটি৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)