আলোচনায় অবহেলিত নারী ক্রিকেট
১১ জুন ২০১৮জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের অল্প বেতন এবং নারী ক্রিকেটের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা৷
এশিয়া কাপে কখনও কোনো ম্যাচ না হারা ভারতকে ফাইনালে ৩ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল রবিবার চ্যাম্পিয়ন হয়৷ এর আগে গ্রুপ পর্বেও ভারতকে পরাজিত করেছিল বাংলাদেশ৷ ফাইনালে শেষ বলে জয়ের জন্য রান দরকার ছিল দুটি৷
এই জয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ দলের সদস্যরা৷ সৌম্য সরকারের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শেষ বলের সময় জাতীয় দলের সবাই একসঙ্গেই ছিলেন৷
মেয়েদের এই জয়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানিয়েছে জাতীয় সংসদ৷ সোমবার সংসদের বৈঠকের শুরুতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদের পক্ষে এই অভিনন্দন জানান৷
নারী ক্রিকেটারদের জয়ে রবিবার সন্ধ্যায় শাহবাগে আনন্দ মিছিল হয়েছে৷
ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে এশিয়া কাপ বিজয় উপলক্ষ্যে গ্রাফিতি এঁকেছেন৷ তার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকি আক্তার৷
ক্রীড়া সাংবাদিক জাহিদ চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘অর্জনটা মালয়েশিয়ায় হওয়াতে আরও ভালো লাগছে৷ ১৯৯৭ সালে পুরুষ দলের আইসিসি ট্রফি জয় দিয়ে এখান থেকেই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন যাত্রা৷ আশা করি নারী দলও এগিয়ে যাবে৷''
টুইটারেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন অনেকে৷
ব্রিটেনের টেলিগ্রাফ পত্রিকার ক্রীড়া সাংবাদিক লিখেছেন, বাংলাদেশের নারীদের এশিয়া কাপ জয় এবং প্রথমবারের মতো একদিনের ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ইংল্যান্ডের হার – দুটোই ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে৷
এদিকে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া দেখে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফাহমি ইলা৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘পুরুষ যখন জেতে, তখন সেটা হয় ‘জাতীয় ক্রিকেট দল'৷ নারী জিতলে ‘নারী ক্রিকেট দল/মহিলা ক্রিকেট দল/প্রমিলা ক্রিকেট দল'৷ পুরুষ জিতলে লাখ টাকার পুরস্কার, গাড়ি বাড়ি উপঢৌকন, অশেষ হাততালি৷ নারী জিতলে গুটিকয়েক শুভকামনা, বেশিরভাগ আহাজারি৷ পুরুষ জিতলে পাড়ায় পাড়ায় মিছিল৷ নারী জিতলে গুটিকয়েক গুবরেপোকা সাইজের শব্দ সম্ভাষণ৷ পুরুষ জিতলে একটি সবল ভবিষ্যৎ উঁকি দেয়৷ নারী জিতলে কটাক্ষ–‘‘আর কদিন? বাচ্চাটা পয়দা করলেই শেষ৷'' পুরুষ জিতলে ‘সাব্বাস টাইগার!', নারী জিতলে ‘জিতছে আমাদের মা-বোন-কন্যারা!'''
ইএসপিএন লিখেছে, এই জয়ের কারণে বাংলাদেশে নারী ক্রিকেট আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে, যেমনটা হয়েছিল ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ পুরুষ দল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়ার পর৷ এছাড়া নারী ক্রিকেট উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে৷ বগুড়ার এক নারী ক্রিকেট কোচের খেলার সরঞ্জাম রাখা ও অফিস হিসেবে স্টেডিয়ামের একটি টয়লেট ব্যবহারের খবর, বাংলাদেশে নারী ক্রিকেট কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আছে, তার চিত্র তুলে ধরে বলে ইএসপিন বলছে৷
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দীন চৌধুরী ইএসপিএনকে বলেছেন, এশিয়া কাপে নারীদের পারফর্মেন্সের কারণে ইতিমধ্যে বোর্ড নারী ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে ভাবা শুরু করেছে৷ তিনি বলেন, এতদিন পর্যন্ত পুরুষ দলের স্পন্সরের সঙ্গে নারী দলের স্পন্সর যুক্ত ছিল৷ ‘‘এখন মেয়েদের এমন পারফর্মেন্সের পর তাঁরা নিজেরাই পৃথক স্পন্সর পাওয়ার মতো মূল্যবান হয়ে উঠেছে,'' মনে করেন তিনি৷
ইএসপিএন বলছে, ২০১২ সালে জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটারদের জন্য বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছিল৷ সেই থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের ১৬ থেকে ১৭ জন ক্রিকেটারের মাসিক বেতন ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে৷ আর একদিনের ম্যাচের জন্য তাঁরা ১০০ ডলার (প্রায় সাড়ে আট হাজার টাকা) ও প্রতি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য পান ৭৫ ডলার (প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা) করে৷
তবে সোমবার বিসিবির বোর্ড মিটিংয়ে মেয়েদের বেতন কাঠামো সংস্কার নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে৷
রাহাত মুস্তাফিজ ফেসবুকে লিখেছেন, একজন পুরুষ ক্রিকেটার জাতীয় লিগের প্রতি ম্যাচে খেলে পান ৪০ হাজার টাকা৷ আর সেখানে নারী ক্রিকেটাররা পাচ্ছেন মাত্র ৬০০ টাকা৷ ‘‘এ থেকেই বোঝা যায়, কতটা বৈষম্যের শিকার নারী ক্রিকেটাররা'' লিখেছেন তিনি৷ ভারতে নারী ক্রিকেটাররা গড়ে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা বেতন পান উল্লেখ করে মুস্তাফিজ লিখেছেন, ‘‘এই বৈষম্যের অবসান হোক৷ নারী-পুরুষ সমান বেতন কাঠামো চালু করতে হবে৷''
ইংরেজি নিউ এজ পত্রিকার সহ-সম্পাদক/সাংবাদিক সৈয়দ ফয়েজ আহমেদ জানিয়েছেন, ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় রুমানা আহমেদ ভালো ব্যাট কেনার সামর্থ্য না থাকায় তামিম ইকবালের ব্যবহার করা ব্যাট কিনতে চেয়েছিলেন৷ তামিম অবশ্য টাকা নেননি৷ নারী ক্রিকেটারদের এমন সব অভাব ছাড়াও আরও অন্যান্য সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় বলে লিখেছেন তিনি৷ ‘‘ব্যাট কেনার টাকা না থাকা কিংবা, একদিন খেলার ম্যাচ ফি মাত্র ৬০০ টাকা– এগুলো শুধু মাত্র বাইরে থেকে দেখা চরম অভাব৷ ভেতরের চাপটাও তো অসীম৷ এই নারীদের অহর্নিশ কত কথাই শুনতে হয়! এই যেমন, আজও খেলার সময় ইউটিউবের লাইভ চ্যানেলে ‘পুরুষদের' কত ধরনের ‘খায়েশ'!'' লিখেছেন তিনি৷
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী