1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এরশাদ মৃত্যুর প্রথম পক্ষেই ঘোলা জলে জাপা

২৩ জুলাই ২০১৯

দেশের রাজনীতিতে বরাবরই নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে জাতীয় পার্টি৷ দলের ভেতরকার বিভন্ন সময়ের সিদ্ধান্তে আলোচিত সমালোচিত কিংবা হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে দলটি৷

https://p.dw.com/p/3MaiX
Bangladesch Hussain Muhammad Ershad in Dhaka
ছবি: STR/AFP/Getty Images

 প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের  মৃত্যুর পরও নাটকীয়তার বৃত্তেই আটকে আছে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি৷

গত বৃহস্পতিবার দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বনানী অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে দলের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। পরবর্তী সময়ে জিএম কাদের রওশনের বাসায় গিয়ে তাঁর দোয়া নিয়ে আসেন।

ঘটনার চার দিনের মাথায় দেবর জিএম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নন বলে বিবৃতি দিয়েছেন তাঁর ভাবি দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ। সোমবার রাতে রওশনসহ জাপার নয় জন নেতার নামে দেয়া বিবৃতিটি গণমাধ্যমের কাছে আসে৷

Bangladesch handschriftliches Statement der Oppositionspolitikerin Rowshan Ershad
ছবি: Rowshan Ershad

বিরোধীদলীয় উপনেতার প্যাডে হাতে লেখা বিবৃতিতে বলা হয়, জিএম কাদের দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকবেন। কিন্তু জিএম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করার বিষয়টি দলের যথাযথ ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে গৃহীত হয়নি বলেও বিবৃতিতে দাবি করা হয়৷

বিবৃতিতে রওশনের স্বাক্ষর থাকলেও বাকিদের নামের পাশে স্বাক্ষর নেই। অন্য যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফখরুল ইমাম, সেলিম ওসমান, লিয়াকত হোসেন খোকা, রওশন আরা মান্নান, রত্না আমিন হাওলাদার, মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, মীর আবদুস সবুর আসুদ ও দেলোয়ার হোসেন খান৷চিঠি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন জিএম কাদের৷

Bangladesch handschriftliches Statement der Oppositionspolitikerin Rowshan Ershad
ছবি: Rowshan Ershad

আদৌ চিঠিটি তাঁর ভাবি দিয়েছেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে তার মধ্যে৷ জিএম কাদের জানান, ‘‘চিঠিতে যে লোকগুলোর নাম দেয়া হয়েছে, তাঁদের দু তিনজনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি৷ তাঁরা জানিয়েছেন, এর সঙ্গে তাঁরা একমত নন৷ অনেকে বলেছেন, আমরা জানিই না৷'' বিবৃতির ভাষাও ‘টেকনিক্যালি কারেক্ট নয়' বলেও মন্তব্য করেন এরশাদের সহোদর জিএম কাদের৷

তাঁর ভাষায়, ‘‘ইট ওয়াজ নট প্রপারলি সাইনড, নট প্রপারলি টাইপড৷'' ভাবি রওশন এর মধ্যে জড়িত এটাও মনে করেন না দেবর জিএম কাদের৷ জড়িত থাকলেও দলের জন্য কোনো ‘ক্রাইসিস' হবে না বলেও মন্তব্য তাঁর৷

চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়া প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, ‘‘উনি (এরশাদ) যখন মারা গেলেন, উনার চিঠিতে যে আদেশ দেয়া হয়েছে এবং আমাদের গঠনতন্ত্রে একটি ধারায় উনার ওভাররাইটিং পাওয়ার, বিধিতে যাই থাকুক (গঠনতন্ত্র) এই বিধি কার্যকর হবে৷এ ধরণের একটি কথা থাকাতে এবং উনার অর্ডার থাকাতে সবাই বললো, এখন আর আপনাকে ভারপ্রাপ্ত বলা যায় না৷ অফিসিয়ালি, ইউ আর চেয়ারম্যান৷''

বিবৃতির ভাষাও ‘টেকনিক্যালি কারেক্ট নয়' : জিএম কাদের

তিনি আরো বলেন, ‘‘এটার মধ্যে কোনো কনফিশউন ছিলো না, এখনও নেই৷ কাজ চলছে৷ পার্টি ইউনাইটেড৷ আমাকে যে নামেই ডাকা হোক, আমি যে কাজ করছিলাম সে কাজই করছি৷ সে কাজই ভবিষ্যতে করবো৷ এটাকে আমি বিরাট কোনো সমস্যা মনে করছি না৷''

রওশন এরশাদের সঙ্গে কোনো মান অভিমানের সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন জিএম কাদের৷ নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক বেশ ভালো বলেও দাবি তাঁর৷ কাদের বলেন, ‘‘আমার ভাই আমাকে ছোটোবেলা থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন৷ বাবার মতো দেখতাম তাঁকে৷ ওই হিসেবে উনার ওয়াইফকে আমরা মায়ের মতো দেখি৷''

তাঁর যুক্তি হচ্ছে, বিবৃতির কারণে একটু বিভ্রান্তি তৈরি হয়৷ সন্দেহ আসে দলের মধ্যে কোনো ভাঙন তৈরি হলো কি না? ‘‘চার-পাঁচ-ছয়জন লোক নিয়ে এতো বড় দল কেউ ভাগ করতে পারবে না৷''-জানান কাদের৷

কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে: মশিউর রহমান রাঙ্গা

তবে পুরো ঘটনাকে ভিন্ন চোখে দেখছেন দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা৷ তাঁর দাবি কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা আসলে রওশন এরশাদের থিওরি নয়৷ যদি থাকতো, উনি ডাকলেই সবাই হাজির হতো৷ কিংবা জিএম কাদেরকে বলতে পারতেন৷''

কারণ মঙ্গলবার সকালেও দলের কো চেয়ারম্যান রওশনের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাসায় যান রাঙ্গা৷ ওই সময় এ বিষয়ে কিছু বলেননি বলে জানান তিনি৷ রাঙ্গা জানান রওশন তাঁকে বলেছেন, ‘‘জিএম কাদের কটা দিন সহ্য করলে কি হতো? ৪০টা দিন যাক, তারপর করতো, এতো আগে করার কি দরকার?''

এটাকে বড় ধরনের কোনো বিষয় বা দলের জটিলতা হিসেবে দেখছেন না দলটির মহাসচিব৷ তাঁর কথা, এটা পার্টিতে কোনো ‘ম্যাটার' করবে না৷

রাঙ্গা জানান, ‘‘আমরা মনে করি উনি  (রওশন এরশাদ) আমাদেন গার্ডিয়ান, আমরা মনে করি জিএম কাদের আমাদের গার্ডিয়ান৷ উনারা দুজন বসেই বিষয়টা ঠিক করে ফেলুক৷ তাহলে ভালো হয়৷''