ফরাসি প্রেসিডেন্টের ওপর আড়ি পেতেছে
২৪ জুন ২০১৫মার্কিনিরা অন্তত ২০০৬ সাল থেকে ২০১২ সাল অবধি ফরাসি প্রেসিডেন্টদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছে, এমনকি তাঁদের টেলিফোনে আড়ি পেতেছে৷ উইকিলিকস-এর এই নতুন তথ্য ফাঁস করার খবর আবার দিয়েছে ফ্রান্সের ‘‘লিবারাশিওঁ'' পত্রিকা এবং ‘‘মিডিয়াপার্ট'' নামধারী একটি সংবাদ ওয়েবসাইট৷
উইকিলিকস-এর ফাঁস করা দলিলগুলোতে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিংবা চাঞ্চল্যকর কোনো তথ্য না পাওয়া গেলেও, এমন সব পরিস্থিতি ও মন্তব্যের আভাস পাওয়া গেছে, যার ফলে সংশ্লিষ্ট নেতাদের মনোভাব, এমনকি পরস্পরের প্রতি মনোভাব সম্পর্কেও একটা আন্দাজ পাওয়া যায় – অবশ্য মনে রাখা দরকার, সেই আন্দাজও তাৎক্ষণিক৷
যেমন ২০১২ সালে ফ্রঁসোয়া ওলঁদ প্রেসিডেন্টের কার্যভার গ্রহণ করার ক'দিন পরেই দেখা যাচ্ছে, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ‘‘গ্রিসকে খরচার খাতায় ফেলেছেন এবং ঐ মনোভাব থেকে নড়তে রাজি নন'' বলে ওলঁদ-এর বিশ্বাস৷ কাজেই ওলঁদ ইউরোজোন সংকট সম্পর্কে প্যারিসে এক পর্যায় গোপন বৈঠক করতেও রাজি৷
২০১০ সালের ২৪শে মার্চের একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি নো-স্পাই চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসম্মতিতে হতাশ৷ অথবা ২০০৮ সালের একটি দলিলে দেখা যাচ্ছে, ‘‘সারকোজি একমাত্র নিজেকে বিশ্ব আর্থিক সংকট সমাধানে সক্ষম বলে মনে করেন''৷ এনএসএ-র সংগৃহীত তথ্যের মধ্যে এছাড়া আছে জাতিসংঘের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে সম্ভাব্য ফরাসি প্রার্থী সম্পর্কে জাক শিরাক-এর বিরূপ মন্তব্য ও মতামত৷
এর কোনো কিছুই যুগান্তকারী নয়৷ শিরাক এবং সারকোজি-র আমলে পৃথক পৃথকভাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল আইও-মারি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ব্যক্তিবর্গের কথোপকথনে আড়ি পাতার প্রযুক্তিগত ক্ষমতা রাখে, ফ্রান্সের সেটা কোনোকালেই অজানা ছিল না৷ ‘‘আমরা সরল নই৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আর প্রেসিডেন্টের মধ্যে কথাবার্তা টেলিফোনে হতো না৷''
যুক্তরাষ্ট্রে ফরাসি রাষ্ট্রদূত জেরার আরো টুইটারে বার্তা দিয়েছেন: ‘‘সব কূটনীতিকই জানেন যে, তাঁদের টেলিফোনে আড়ি পাতা হয়ে থাকে, এবং শুধু একটি দেশের তরফ থেকেই নয়৷ বাস্তব জগৎ৷'' ফরাসি সরকারের প্রতিক্রিয়া কিন্তু অতটা মসৃণ কিংবা মোলায়েম নয়: ওলঁদ বুধবার সকালেই তাঁর জাতীয় প্রতিরক্ষা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন৷ ওদিকে বিভিন্ন ফরাসি রাজনীতিক সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের উষ্মা প্রকাশ করেছেন এবং করছেন৷ প্রেসিডেন্ট ওলঁদ-এর সমাজতন্ত্রী দল মার্কিন তরফে একটি ‘‘বাস্তবিক বিস্ময়কর রাষ্ট্রীয় প্যারানোইয়া'' – অর্থাৎ নির্যাতন ভ্রমের কথা বলেছে৷
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র নেড প্রাইস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘‘প্রেসিডেন্ট ওলঁদ-এর বার্তা সংযোগের ওপর নজর রাখছে না এবং ভবিষ্যতেও রাখবে না''৷ লক্ষণীয়, অতীতে কি ঘটেছে অথবা ঘটে থাকতে পারে, সে বিষয়ে প্রাইস কোনো মন্তব্য করেননি৷
এসি/ডিজি (ওপি, এএফপি)