1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এখনও সনদ না পাওয়ায় হতাশ মুক্তিযোদ্ধা রুমা

২৭ জুন ২০১২

যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন নারী নেত্রী রুমা চক্রবর্তী৷ আজও বিয়ানীবাজারে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জনসেবা করে যাচ্ছেন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুমা৷ অথচ এখনও মুক্তিযোদ্ধার সনদ পাননি তিনি৷

https://p.dw.com/p/15Lsf
***Achtung: Nur zur mit Ruma Chakrabarty abgesprochenen Berichterstattung verwenden!*** Freiheitskämpferin Ruma Chakrabarty und ihre Familie in 1989
ছবি: Ruma Chakrabarty

‘‘দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৫/৭ দিন আগে আবার যশোর আক্রমণ হয়৷ তখন লেফটেন্যান্ট আখতারুজ্জামান আমাদেরকে নিয়ে গেলেন৷ গাড়িতে সাইরেন বাজছে, তিনি আমাদের বললেন, আপনারা চলেন আমাদের সাথে৷ ফলে আমরা যারা স্বেচ্ছাসেবীরা ছিলাম, তারা সবাই গাড়িতে উঠে রওয়ানা দিলাম৷ সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷ আমরা কিছুক্ষণ পরেই বোমা ও গোলার শব্দ পেলাম৷ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছে আমরা আহত কিংবা নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের সরিয়ে নিয়ে আসার কাজ করতে লাগলাম৷ হঠাৎ আমাদের খুব কাছেই বোমা এসে পড়ল৷ তখন নির্দেশ মতো আমরা কাছের একটি ভূগর্ভস্থ কক্ষে প্রবেশ করি৷ এগুলো কিছুদিন আগেও পাক সেনারা নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করতো৷ আমরা বাঙ্কারের ভেতর ঢুকতেই ভেতর থেকে গোঙ্গানির আওয়াজ শুনতে পেলাম৷ আমাদের সাথে একজন শিখ সেনা কর্মকর্তা ছিলেন৷ আর আমাদের সবার কাছেও ছোট ছোট বোমা রাখা ছিল এজন্য যে, আমরা যদি কখনও শত্রুর সামনে পড়ে যাই, তাহলে সেই বোমা দিয়ে শত্রুকে আঘাত করতে পারি৷ যাহোক, গোঙ্গানির আওয়াজ শুনে আমরা বাঙ্কার থেকে বের হয়ে এসেছি৷ এমন সময় একটি বোমার টুকরায় আমার পা কেটে রক্ত পড়া শুরু হয়৷ কিন্তু আমরা তখন নিজের কথা ভুলে গিয়ে বাঙ্কারের ভেতরে শোনা আওয়াজ নিয়েই বেশি উৎকণ্ঠিত ছিলাম৷ এরপর শিখ কর্মকর্তা টর্চ লাইট এবং বন্দুক নিয়ে বাঙ্কারে ঢুকে দেখেন ভেতরে তিনটি মেয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে৷ তিনি তখনই তাঁর পাগড়ি খুলে দিয়ে আমাদের বললেন, আপনাদেরও যা কিছু ওড়না-টোড়না আছে সেসব দিয়ে মেয়েগুলোর শরীর আবৃত করে তাদের নিয়ে আসেন৷ আমরা বাঙ্কার থেকে মেয়েদেরকে বের করে এনে বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করলাম৷ কিন্তু তাদের মধ্যে একজনকে আমরা বাঁচাতে পারিনি৷ তিনি মারা যান৷'' এভাবেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেদনাবিধুর ঘটনার কথা বলছিলেন নারী মুক্তিযোদ্ধা রুমা চক্রবর্তী৷

Rowshan Jahan Shathi 1967
নারী মুক্তিযোদ্ধারা...ছবি: Archiv Rowshan Jahan Shathi

দেশ স্বাধীন হলে কলকাতা থেকে ফিরে বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষা সম্পন্ন করেন রুমা চক্রবর্তী৷ এছাড়া চারুকলায় তিন বছর পড়াশোনা করেন তিনি৷ এরপর বিয়ের সুবাদে সিলেটের বিয়ানীবাজারে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি৷ কিন্তু যুদ্ধপরবর্তী বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে নিজেদের বাড়ি-ঘর, সম্পত্তি সবকিছু খোয়াতে হয়েছে তাঁদেরকে৷ এমনকি এখন পর্যন্ত কালীর মন্দিরে অস্থায়ী ঘরে বসবাস করছেন তিনি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷ তবুও যেন প্রিয় মাতৃভূমির মাটি কামড়েই পড়ে রয়েছেন এবং মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন এই সাহসী নারী৷

দীর্ঘদিন ধরে বিয়ানীবাজারের খলীল চৌধুরী বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তিনি৷ এছাড়া সেই শুরু থেকেই গ্রামের দরিদ্র মানুষের আপদে-বিপদে তাদের পাশে এসে দাঁড়ান রুমা৷ যখন বিয়ানীবাজারে চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পাওয়া সুদূর পরাহত ছিল, তখন থেকেই রুমা চক্রবর্তী স্থানীয় মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন৷ পাশাপাশি গ্রামের গরিব ঘরের শিশুদের নিজের বাড়িতে ডেকেও বিনাপয়সায় পড়াতেন তিনি৷ ফলে ক্রমাগত তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে৷ ফলে ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন রুমা চক্রবর্তী৷ বর্তমানে তিনি বিয়ানীবাজার উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷

Week 26/12 Women 1: Ruma Chakrabarty (Part 2) - MP3-Mono

দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে এবং অস্থায়ী হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবার কাজ করেও আজও বঞ্চিত রুমা চক্রবর্তী৷ রেড ক্রসের সনদ থাকা সত্ত্বেও এবং স্বাধীন দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বারবার চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি এই ত্যাগী ও সাহসী নারী নেত্রী৷ তিনি জানান, ‘‘বেশ কয়েক দফা ঢাকায় দৌড়াদৌড়ি করেও এখনও কাজ হয়নি৷ সর্বশেষ আমাদের সিলেটের জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারও আমার ব্যাপারে লিখিত দিয়েছেন যে, তিনি আমাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিনেন এবং জানেন৷ অথচ এখনও কাগজের কোন নড়াচড়া হচ্ছে না৷ বাংলাদেশের হাত বুঝতেই পারছেন৷ আর কিছু মানুষ আমাকে বলছে, পাঁচ হাজার টাকা দিলেই তো মুক্তিযোদ্ধার সনদ চলে আসবে৷ কিন্তু আমি পাঁচ টাকাও দিতে রাজি নই৷ আমি চোর, ডাকাত নই৷ আমি সঠিক মুক্তিযোদ্ধা৷ আমি টাকা দিয়ে কেন সনদ আনবো৷ তাতে আমার এতোটুকু শান্তি হবে না৷''

স্বাধীনতার ৪১ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে আশাহত এই বীর নারী৷ তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা পেতাম৷ কিন্তু তাঁকে মেরে ফেলার পরে আমি দেখেছি পঁচাত্তরে যারাই শেখ মুজিবের পক্ষে কথা বলতো তাদেরকেই মেরে ফেলতো তারা৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য