রাজনৈতিক প্যাঁচে হত্যাকাণ্ড?
২২ মে ২০১৪রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য মঙ্গলবারই এই খুনের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের গ্রেপ্তার করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ তারপরও অন্য হত্যাকাণ্ডগুলোর মতো এই হত্যাকাণ্ডটিও কি রাজনৈতিক প্যাঁচে পড়তে যাচ্ছে? তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রাজনৈতিক ঠেলাঠেলিতে সুষ্ঠু তদন্ত বাধাগ্রস্থ হচ্ছে অনেকটাই৷
ফেনীর পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফ টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে যাই বলুন না কেন পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত শুরু করেছে৷ রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যাদেরই সম্পৃক্ততা থাকুক না কেন, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ ফলে রাজনৈতিক নেতারা কে কাকে দায়ী করছেন – তা আমাদের কাছে মুখ্য নয়৷ বরং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার সঙ্গে যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে৷'' তিনি বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন হিসেবে ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদও চলছে৷ এর মধ্যে কেউ নিরাপরাধ থাকলে অবশ্যই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে৷''
গত মঙ্গলবার দুপুরে ফেনী শহরে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে একরামের প্রাইভেট কারটি থামানো হয়৷ জানা যায়, প্রথমে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে দূর্বৃত্তরা৷ তারপর কাছে গিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়৷ এতেও ক্রোধ মেটে না খুনিদের৷ যাওয়ার সময় কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গাড়িতে গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা৷ এতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে পুলিশ এসে একরামের পুড়ে যাওয়া কঙ্কাল উদ্ধার করে৷ ফেনী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুব মোরশেদ জানান, শহরের বিরিঞ্চি এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি লাল রংয়ের প্রাইভেটকার ও একটি মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়েছে৷
ফেনী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুব মোরশেদ আরো জানান, নিহত একরামের ভাই রেজাউল হক জসিম মঙ্গলবার রাতেই ফেনী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন৷ এতে বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত ফুলগাজী উপজেলা নির্বাচনে একরামুল হক একরাম বিএনপি প্রার্থী মাহতাবকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন৷
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্বাচনি এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের এই নেতার হত্যাকাণ্ড ঘটেছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে৷ কিন্তু মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ফুলগাজীর বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে, যিনি কয়েকমাস আগে ভোটে একরামের কাছে হেরেছিলেন৷''
তিনি বলেন, তদন্তের আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিবৃতি থেকে বোঝা যায় যে, সরকার থলের বিড়ালটি থলিতেই রাখতে চাচ্ছে৷ আমরা বিশ্বাস করি, যত চেষ্টা করা হোক না কেন, আসল বিড়ালটি বেরিয়ে পড়বে৷'' তাই তিনি এই ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন৷
অপরদিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার ফেনীতে গিয়ে একরামের জানাযায় অংশ নেন৷ পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘একরামুল হক একরামকে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত ও ঠান্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড৷''
মন্ত্রী বলেন, ‘‘এটি মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়৷ ১৯৭১ সালেও একজন জনপ্রতিনিধিকে এভাবে খুন করা হয়নি৷ খুনি যেই হোক তাকে ছাড়া হবে না৷ এ মুহূর্তে কারো ওপর দায় চাপাতে চাই না৷ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে৷''
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম উল্লেখ না করলেও তাঁর প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না৷ ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরও বিএনপি নেতৃবৃন্দ অনেক আজগুবি কথা বলেছিলেন৷ তদন্তে সব বেরিয়ে এসেছে৷ ফেনীতেও তদন্তে প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করা হবে৷''