‘মানুষ পোড়ানোর ঘৃণ্য রাজনীতি’
২৯ নভেম্বর ২০১৩হরতাল, অবরোধ এবং সর্বশেষ শাহবাগের ঘটনা দেশের মানুষকে আবারো বিক্ষুব্ধ করেছে, করেছে বেদনার্ত৷ অবরোধের শেষ দিন, বৃহস্পতিবার রাতে, শাহবাগে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় একটি বাসের মোট ১৯ জন যাত্রী আহত হয়েছেন৷ হাসপাতালে নেয়ার পর তাঁদের মধ্যে দু'জন মারা যান৷ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিত্সক ডা. পার্থ শংকর পাল ডয়চে ভেলেকে জানান, আরো কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর৷ তাঁদের শরীরের ৪০ ভাগের বেশি পুড়ে গেছে৷ আর আহতদের অনেকেরই কণ্ঠনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
‘বিহঙ্গ' পরিবহনে দেয়া আগুনে যাঁরা পুড়েছেন, তাঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ছাত্রসহ প্রায় সব শ্রেণির নাগরিক ছিলেন৷ বার্ন ইউনিটে তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কান্না এবং আহাজারি রাজনীতিবিদের কানে পৌঁছাচ্ছে কিনা – তা তাঁরা জানেন না৷ তবে তাঁদের একটাই প্রশ্ন, সাধারণ মানুষের কি অপরাধ? তাঁরা কেন রাজনীতির আগুনের বলি হবেন?
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামের একটি মন্তব্য প্রতিবেদনে এই মানুষ পোড়ানোর রাজনীতিকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে৷ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যে সব সাধারণ মানুষ জড়িত নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের হত্যর পরিকল্পনা কিভাবে করতে পারে দেশের নাগরিকদের একটি অংশ?
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিরোধী ১৮ দলের ৩ দিনের অবরোধে বাসে আগুনসহ সহিংতায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন৷ এছাড়া, ১লা জানুয়ারি ধেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন আরো অন্তত ৩৪৮ জন৷ বাস, ট্রেনসহ যানবাহনে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণে বহু মানুষ দগ্ধ হয়েছেন৷ হয়েছেন পঙ্গু৷ তবে কোনো ঘটনায় অপরাধী ধরা পড়েছে বা সাজা হয়েছে বলে কোনো খবর জানা নেই৷
বৃহস্পতিবার শাহবাগের ঐ বাসে আগুনের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী, সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস, গায়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে৷ তবে মির্জা ফখরুল দাবি করেছেন যে, সরকারই পরিকল্পিতভাবে এ সব নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধী দলকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে৷
মানবাধিকার নেতা এবং আইন ও শালিস কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে জানান, গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশে মানুষ পোড়ানোর রাজনীতির সূচনা হয়েছে৷ এর আগে শেরাটন হোটেলের সামনে বাসে আগুন দিয়ে ১৮ জন যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়৷ যাত্রাবাড়িতেও একই রকম ঘটনা ঘটানো হয়েছে৷ কিন্তু ঐ সব নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হয়নি৷ মামলা পর্যন্তই শেষ৷ তিনি বলেন, বাসে আগুনের ঘটনা নিয়ে আগে যেমন রাজনীতি হয়েছে, এবারও হচ্ছে৷ তাঁর কথা, আগুনের জন্য সাধারণভাবে আন্দোলনকারীদের দায়ী করা হলেও, বিপরীত কথাও আছে৷ অভিযোগ আছে কোনো কোনো এজেন্সি এ ধরণের নাশকতা ঘটায় নানা গ্রুপের হয়ে৷ অর্থাৎ, তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করে৷
নূর খান বলেন, তাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন৷ তবে তিনি বলেন, মোদ্দা কথা হলো মানুষ পোড়ানো হয় রাজনীতির কারণে৷ আবার মানুষ পুড়লে তা নিয়েও রাজনীতি হয়৷ মানুষ পোড়ানোর এই ঘৃণ্য রাজনীতি বন্ধে তাই তিনি সব দলের প্রতি আহ্বান জানান৷