বাংলাদেশকে সৌদি আরবের হুমকি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ছিলেন এমন প্রমাণ দেখাতে পারলে পাসপোর্ট দেয়া যেতে পারে৷ পাশাপাশি সৌদি আরবকে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বলেছেন তিনি৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন,‘‘সৌদি আরব তো জানে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক৷ তাই স্বাভাকিভাবেই তাদের মিয়ানমারকে বলা উচিত৷ আমরা সৌদি আরবকে বলেছি. তোমরা আগে মিয়ানমারকে বলো৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘৩০-৪০ বছর আগে সৌদি বাদশাহ যখন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় তখন অনেক রোহিঙ্গা সেখানে যায়৷ তখন অনেকের পাসপোর্ট ছিল না৷ তারা ছিল রাষ্ট্রহীন নাগরিক৷ তখন বলেছে, ওদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দাও৷ এখন ওদের আগে পাসপোর্ট দেয়ার কোনো প্রমাণ যদি কেউ দেখাতে পারে তাহলে আমরা পাসপোর্ট ইস্যু করবো৷ তবে তারা (সৌদি আরব) বলেছে, পাসপোর্ট ইস্যুর অর্থ এই নয় যে, তাদের আমরা বিতাড়িত করবো৷ যেহেতু আমরা কোনো স্টেটলেস লোক রাখি না, সেইজন্য তাদের পাসপোর্ট দরকার৷ এই অবস্থায় আমাদের আলোচনা হচ্ছে৷’’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি হয়েছে৷ তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন৷ জানা গেছে, সৌদি আরবে যেসব রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশি এমআরপি পাসপোর্ট আছে তাদের পাসপোর্ট দেয়া হতে পারে, তবে অন্যদের নয়৷ তাদের পাসপোর্ট দেয়া হলেও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে না দিয়ে কোনো বিশেষ ধরনের পাসপোর্ট দেয়া হতে পারে৷ কতজন রোহিঙ্গার হাতে এই এমআরপি পাসপোর্ট আছে সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি৷
এই পাসপোর্ট দেয়ার সঙ্গে সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশের ২২ লাখ প্রবাসীর বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে৷ এ নিয়ে আলোচনায় সৌদি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলেছেন, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট না দেয়া হলে ওই ২২ লাখের ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে৷
১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে যেসব রোহিঙ্গা সৌদি আরবে গেছেনম তাদের একটি অংশ গেছেন সরসরি মিয়ানমার থেকে৷ আরেকটি অংশ বাংলাদেশ থেকে গেছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়৷ তারা ১৯৭৭ সাল পরবর্তী সময়ে গিয়েছেন৷
সৌদি আরব গত এক বছর ধরে এ নিয়ে কথা বলছে এবং তালিকা পাঠাচ্ছে৷ তবে এবার একবারে ৫৪ হাজারের তালিকা পাঠিয়েছে তারা৷
সৌদি আরবের এই অবস্থানকে কেনোভাবেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা৷ তারা মনে করেন, এ নিয়ে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থানে যাওয়া উচিত৷ সৌদি আরব একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে এই প্রস্তাব দিতে পারে না বলেও মনে করেন তারা৷
অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিচার্স ইউনিট (রামরু)-র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘‘এটা তাদের একটা অন্যায় আবদার৷ তারা (রোহিঙ্গা) তো বিদেশি নাগরিক৷ তাদের পাসপোর্ট দিতে বলা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে৷ বাংলাদেশের উচিত তীব্র প্রতিবাদ জানানো এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া’’
এর সঙ্গে সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে দেয়ার শর্ত যুক্ত করাকে আরেকটি অন্যায় চাপ বলে মনে করেন তিনি৷ এক্ষেত্রেও তিনি মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশের শক্ত কূটনেতিক তৎপরতা চালানো উচিত৷’’
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক মনে করেন, এখন না বললেও যদি পাসপোর্ট দেয়া হয়, তাহলে এরপরই সৌদি আরব ওই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা তুলবে৷ তাই বাংলাদেশকে সতর্ক হয়ে আলোচনা করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘বিদেশে আমাদের দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিয়েছে৷ এটা আমি লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত থাকার সময়ও দেখেছি৷ সেখানেও রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট৷ আমি সৌদি আরবে গিয়েও একই পরিস্থিতি দেখেছি৷’’
তার মতে, বাংলাদেশকে এখন ‘টেকনিক্যাল’ হতে হবে৷ পাসপোর্টের পুলিশ ভ্যারিফিকেশনে যদি সতর্ক এবং স্বচ্ছ অবস্থান নেয়া যায় তাহলে ওই রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই নতুন করে পাসপোর্ট পাওয়ার কথা নয়৷ কারণ, তারা বাংলাদেশে তাদের কোনো স্থায়ী ঠিকানা এবং এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেখাতে পারবে না৷
তিনি মনে করেন, সৌদি এই তৎপরতার পিছনে কোনো বাংলাদেশি থাকতে পারে৷ আবার যেসব রোহিঙ্গা নারী সৌদি নাগরিকদের বিয়ে করেছেন, তারাও প্রভাব বিস্তার করতে পারে৷