নিয়ন্ত্রণ নেই নির্বাচন কমিশনের
২৪ মার্চ ২০১৪উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় বিএনপি এগিয়ে থাকলেও, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে এগিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ৷ রবিবার ৯১টি উপজেলার নির্বাচনে ৮৮টির ফলাফলে আওয়ামী লীগ ৫২, বিএনপি ২২, জামায়ত ৫ এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের ১০ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন৷
এই ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেমন বিপূলভাবে এগিয়ে গেছে, তেমনই সহিংসতা এবং অনিয়মও হয়েছে সবচেয়ে বেশি৷ রবিবার চারজন নিহত হওয়া ছাড়াও মোট ৩২টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে৷ এছাড়া চার ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট ১৭১, বিএনপি ১৪০ জামায়াত ৩৩ এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের ৩৫ জন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন৷
আরো ২ ধাপে ১০১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হলে মোট ৪৮৭টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শেষ হবে৷ নির্বাচনে এই ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং অনিয়ম নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.) বলেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশনের উপর বর্তায় না৷ এ দায়িত্ব ক্ষমতাসীন দলেরও৷ প্রধানমন্ত্রী তো বলেছিলেন যে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে৷ অথচ নজিরবিহীন অনিয়ম ও সহিংসতা হলো৷''
তিনি বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিয়ন্ত্রণে থাকেনি৷ তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে৷ আর চাইলেও এখন কঠোর হতে পারছে না৷ ক্ষমতাসীন দলের উপর ইসি-র আরো নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত ছিল৷'' তাঁর কথায়, ‘‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যক্তিগত কাজে বিদেশে অবস্থান করছেন, তাই এ নিয়ে কিছু না বলাই ভালো৷ তবে সাধারণত নির্বাচন চলাকালে অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি৷ সেজন্যই তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে নানা কথা উঠেছে৷ আশা করি, দেশে ফিরে এসে তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করবেন৷''
সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মুজমদার বলেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচন করতে কমিশন আবারো ব্যর্থ হলো৷ তারা এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করতে পারেনি৷ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে৷''
ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক এই সহিংসতার কথা স্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে কিছু সহিংসতা ও কিছু গোলযোগ হয়েছে৷'' যদিও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলছেন, ‘‘আগের চেয়ে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে৷''
বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের নেয়া উদ্যোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ কেবল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ থেকেছে৷ বাস্তবে কোনো কাজে আসেনি৷ তারা সেনাবাহিনীকেও চিঠি দিয়েছিল৷ এই চিঠির কোনো অর্থ নেই৷ কারণ, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীকে আসলেই কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়৷''