জার্মান সরকার জোটে সমঝোতা
৬ নভেম্বর ২০১৫বার্লিনের জোট সরকারের ছোট তরফ বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের প্রধান হর্স্ট সেহোফার সীমান্তে ‘ট্র্যানজিট জোন' সৃষ্টি করার দাবি তুলে একদিকে যেমন ‘ভগিনী' দল সিডিইউ-এর প্রধান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কে বিড়ম্বনায় ফেলেছিলেন, অন্যদিকে সেহোফার-এর প্রস্তাব জোট সহযোগী এসপিডি দলকেও ঠিক ততোটাই তাতিয়ে তুলেছিল৷
এসপিডি প্রধান সিগমার গাব্রিয়েল স্পষ্টই বলেছিলেন যে, ‘ট্র্যানজিট জোন' তাঁকে নাৎসি আমলের ‘ডিটেনশন ক্যাম্প'-গুলির কথা মনে করিয়ে দেয়৷ সীমান্তের পরিবর্তে দেশের অভ্যন্তরে ‘অভ্যর্থনা কেন্দ্র' সৃষ্টির প্রস্তাব দিচ্ছিল এসপিডি৷ দেখা গেল, শেষমেষ সেই প্রস্তাবই আপোশের সূত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
যুগপৎ যে সব রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সরকারি স্বীকৃতি পাবার বিশেষ সম্ভাবনা নেই, তাদের আবেদনের যথাশীঘ্র সম্ভব নিষ্পত্তি করে তাদের ফেরৎ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তিন সপ্তাহের মধ্যেই তাদের ফেরৎ পাঠানো হবে, এই হল পরিকল্পনা৷ বলতে কি, এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের আবেদনের জবাব দেওয়া হবে; তার বিরুদ্ধে আপিল করলে, আরো দু'সপ্তাহের মধ্যে সেই আপিলের নিষ্পত্তি হবে৷
সারা জার্মানিতে মোট তিন থেকে পাঁচটি এ ধরনের ‘অভ্যর্থনা কেন্দ্র' সৃষ্টি করা হবে, যেখানে স্বীকৃতির আশাবিহীন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা হবে৷ স্বয়ং সেহোফার ‘ট্র্যানজিট জোনের' দাবি ছেড়ে এবার খোদ বাভেরিয়ায় দু'টি ‘অভ্যর্থনা কেন্দ্র' স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন৷ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের নিষ্পত্তি করার এই ‘ফাস্ট ট্র্যাক সিস্টেম' প্রধানত আলবেনিয়া ও কসোভোর মতো বলকান দেশগুলি থেকে আগত উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে৷
অবশ্যই রাজনৈতিক নিপীড়নের হাত থেকে যারা পলাতক, আর যারা অর্থনৈতিক উন্নতির আশায় ইউরোপে আসছেন, এই দুই ধরনের উদ্বাস্তুদের মধ্যে বৈষম্য কার্টুনিস্টদের নজর এড়ানি৷ এ যেন মধ্যযুগের ‘চাল পড়া', এই হল মেমেত কিলিচ-এর ব্যঙ্গচিত্রের উপজীব্য৷ ‘যদি ডোবে তাহলে উদ্বাস্তু; যদি ভেসে থাকে তাহলে অর্থনৈতিক অভিবাসী৷'
আরো অনেককে ঐ পর্যায়ে ফেলা হবে, যেমন যারা অতীতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার চেষ্টা করেছে, অথবা যাদের জার্মানিতে প্রত্যাবর্তনের ওপর নিষেধ আছে, অথবা যাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই৷ এদের সকলকেই ‘অভ্যর্থনা কেন্দ্রে' নিয়ে যাওয়া হবে ও রেজিস্ট্রেশন করা হবে৷ এছাড়া সব উদ্বাস্তুকে আইডি কার্ড দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যে আইডি কার্ড ছাড়া উদ্বাস্তুরা বিভিন্ন সামাজিক ভাতা ও সুযোগসুবিধা পাবে না৷
জোট সরকারের তিন নেতার এই আপোশের ফলে জার্মানিতে উদ্বাস্তুদের আগমন কমবে কিনা, তা বলা শক্ত৷ বার্লিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত মোট সাত লাখ আটান্ন হাজার উদ্বাস্তু জার্মানিতে এসেছেন৷ এবং এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার উদ্বাস্তু সীমান্ত পার হয়ে জার্মানিতে আসছেন, ফলে এ বছর মোট উদ্বাস্তুর সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে৷
জার্মানিতে শুধু অক্টোবর মাসে এক লাখ একাশি হাজার উদ্বাস্তু এসে পৌঁছন; তাদের মধ্যে প্রায় সাতাশি হাজার এসেছেন সিরিয়া থেকে; সংখ্যার হিসেবে তার পরেই আসছে আলবেনিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক ও কসোভো৷ ২০১৭ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মোট ত্রিশ লাখ উদ্বাস্তু এসে পৌঁছবে, বলে ব্রাসেলস-এর ভবিষ্যদ্বাণী৷
এসি/এসবি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)