1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইয়েমেন সংকটের দিকে বিশ্বের নজর নেই!

১২ ডিসেম্বর ২০১৭

ইয়েমেনে যুদ্ধাবস্থা বিশ্বের অন্যতম মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছে, যা মোকাবেলা করতে বহু দিন যাবৎ কাজ করছে ‘কেয়ার'৷ দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ডয়চে ভেলের মুখোমুখি সংস্থাটির অন্যতম কর্মকর্তা কার্ল-ওটো জেন্টেল৷

https://p.dw.com/p/2pCaF
Jemen Cholera
ছবি: Getty Images/AFP/M. Huwais

ইয়েমেনে যুদ্ধাবস্থা বিশ্বের অন্যতম মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছে, যা মোকাবেলা করতে বহু দিন যাবৎ কাজ করছে ‘কেয়ার'৷ কিন্তু সমস্যা থেকেই গেছে৷ দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ডয়চে ভেলের মুখোমুখি সংস্থাটির অন্যতম কর্মকর্তা কার্ল-ওটো জেন্টেল৷

জরুরি ত্রাণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তাপ্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কেয়ার'-এর জার্মানি ও লুক্সেমবুর্গ অঞ্চলের জেনারেল সেক্রেটারি জেন্টেল বলেন, ইয়েমেন সংকট নিয়ে সারা পৃথিবীর নির্লিপ্ততা অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলছে৷

ডয়চে ভেলে: জাতিসংঘের হিসাব মতে, ইয়েমেনের ২৮ মিলিয়ন অধিবাসীদের মধ্যে ২০ মিলিয়নেরই সহায়তা প্রয়োজন৷ এর মধ্যে ৭ মিলিয়ন মানুষ ধুঁকছে চরম ক্ষুধায়৷ ডিপথেরিয়া আর কলেরার মতো রোগে আক্রান্ত লাখ লাখ শিশু৷ এ বছরের শুরুর দিকে, আপনি ইয়েমেন ঘুরে এসেছেন৷ আপনার অভিজ্ঞতা যদি আমাদের বলেন...৷

 কার্ল-ওটো জেন্টাল: তিন বছরের গৃহযুদ্ধের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে দেশটি৷ সেখানকার বেসরকারি খাত ধসে পড়েছে, সরকারি খাতও৷ সরকারি কর্মকর্তারা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছে না৷ আগের সঞ্চয় থেকে কোনো মতে জীবনধারণ করছে পরিবারগুলো৷ বেশ কিছু স্থানীয় ঐতিহ্য এখন আর পালন করা হয় না সেখানে: গ্রামগুলোতে আমি যখন যাই, অনেক মানুষ আমাকে বলেছে, এর আগে তারা তিন-চার মাসের জন্য কাজ করতে যেত সৌদি আরবে৷ সেখানে যা উপার্জন করত এবং দেশে কৃষিপণ্য বিক্রি করে যা পেত, তা দিয়েই তারা পরিবাবরের জন্য খাওয়ার বন্দোবস্ত করত৷ কিন্তু এখন সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় সৌদি আরবে আর যেতে পারে না তারা৷ সীমান্ত পারি দেয়া এখন বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

Infografik Situation in Yemen ENG

দুই মিলিয়ন মানুষ দেশের ভিতরেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে৷ অনেকে শহরে তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছে চলে গেছে৷ আমার এক সহকর্মী আমাকে জানিয়েছেন যে ছ'মাস আগে তাঁর বেতনটি শুধুমাত্র নিজ পরিবারের জন্যই বরাদ্দ ছিল, কিন্তু এখন ঐ বেতনেই তাঁকে সাতটি পরিবারকে খাওয়াতে হচ্ছে৷

যেসব কারণে মানুষের এই দুর্দশা, তার মধ্যে অন্যতম হলো এই যে যুক্তরাষ্ট্রের মদতপুষ্ট সৌদি সেনা এ দেশের উপর অবরোধ জারি করেছে৷ খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ, জরুরি ত্রাণ, সেবা – কিছুই উত্তর ইয়েমেনে পৌঁছানো যাচ্ছে না৷ এ বিষয়টা আপনাদের সহায়তা কার্যক্রমে কতটা প্রভাব ফেলছে?

ইয়েমেনে মৌলিক খাদ্য চাহিদার প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সবসময়ই আমদানি করতে হয়৷ সমুদ্রপথে, কখনো বা সৌদি আরবের ভূমির উপর দিয়ে এ আমদানি কার্যক্রম চলতো৷ ইয়েমেনের উত্তরের যে প্রধান বন্দরগুলো আমরা ব্যবহার করতাম, বর্তমানে সেগুলো হুতি বিদ্রোহীদের দখলে৷ বন্দরগুলো বন্ধ অবস্থায় রয়েছে৷ ফলশ্রুতিতে, দেশটিতে প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার পাওয়া যাচ্ছে৷ তার উপর খাবর-দাবারের দাম অনেক চড়া৷ তাই ইয়েমেনের মানুষ দিনে দিনে আরো কম খাবার পাচ্ছে৷

কার্ল-ওটো জেন্টাল
কার্ল-ওটো জেন্টাল, ‘কেয়ার'-এর জার্মানি ও লুক্সেমবুর্গ অঞ্চলের জেনারেল সেক্রেটারিছবি: DW/I. Wendt

নভেম্বরের শুরু থেকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে আছে দেশটি৷ এর অর্থ কোনো ত্রাণ সহায়তাও সেখানে পৌঁছাচ্ছে না৷ যেমন, পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ক্লোরিন ট্যাবলেটের সংকট দেখা দিয়েছে৷ ফলে কলেরা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আরো বেড়ে গেছে৷ প্রয়োজনীয় অনেক ভ্যাকসিনের অপার্যপ্ততা আছে আমাদের৷ হাম ও অন্যান্য রোগ আরো বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে এখন আছি যেখানেপ্রতি দশ মিনিটে ইয়েমেনের একটি করে শিশু মারা যাচ্ছে নিরাময়যোগ্য যেমন ডায়রিয়া, অপু্ষ্টি বা শ্বাসযন্ত্রের রোগে৷

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি এখন এ বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করতে পারে না? বিশেষ করে সৌদি আরবের ওপরে, যাতে করে ইয়েমেনের বন্দরগুলোর ওপর থেকে নিষাধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সেগুলো খুলে দেয়া হয়?

হ্যাঁ, অনেক বেশি আন্তর্জাতিক চাপের প্রয়োজন এখন৷ ইয়েমেনের পরিস্থিতি যতটা প্রয়োজন, ততটা নজর কাড়তে পারছে না সবার৷ এটাও একটা কারণ কেন এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ এত কম দেখা যাচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সংকট সমাধানের যে প্রক্রিয়ায় কাজ হচ্ছে, তা ইয়েমেনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারছে না৷

মানবিক সাহায্য সংস্থা হিসেবে আপনাদের বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হয়৷ ইয়েমেনের জন্য সবচেয়ে ভালো কী ঘটতে পারে?

সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি হলো, দেশে শান্তি ফিরে আসা৷ তাই আমার মতে, নিকট ভবিষ্যতে সব পক্ষের সমন্বয়ে একটি শান্তি চুক্তি প্রয়োজন, যাতে দীর্ঘ মেয়াদে দেশটি ঘুরে দাঁড়াতে পারে৷

এ প্রত্যাশা কতটা বাস্তবসম্মত?

আমি মনে করি না যে, এটা বাস্তববাদী কোনো ভাবনা৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এ ভয়ানক পরিস্থিতি চলতেই থাকবে৷ ইয়েমেনের সংকটের বিষয়ে বিশ্ববাসী যথেষ্ট নজর দিচ্ছে না৷ সেজন্যই সংকট সমাধানে এত কম আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে৷ সংঘাতের সাথে জড়িত পক্ষগুলো এখনো এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছায়নি, যাতে করে আলোচনা শুরু সম্ভব৷

ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ যিনি অদৃশ্য থেকে সুতো টানছিলেন, তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যু কি শান্তির ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করে তুলেছে?

সাময়িকভাবে, সালেহের মৃত্যু ‘কেয়ার'-এর হয়ে আমার বা আমার সহকর্মীদের কাজ করার ক্ষেত্র আরো কঠিন করে তুলেছে৷ সানাতে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে লড়াই শুরু হয়েছে৷ প্রাদেশিক রাজধানীগুলোতে দাঙ্গা লেগেই আছে, যেখানে আকাশ থেকে ভয়াবহ বোমাবর্ষণও হচ্ছে৷ যার অর্থ আমাদের কার্যক্রম কমিয়ে বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হয়েছে৷ সৌভাগ্যক্রমে, আমার সহকর্মীদের সবাই সুস্থ্য আছে৷ কিন্তু কিছু সময়ের জন্য আমাদের কার্যক্রম একেবারেই সীমিত রাখতে হয়েছে৷

২০১৭ সালের শুরুতে ইয়েমেন দাতা সংস্থাদের একটি বড় সম্মেলন অনুষ্ঠিত যেখান থেকে উল্লেখযোগ্য একটা তহবিল আসে, যেটা খুবই ভালো৷ কিন্তু তখনকার সাথে এখনকার পরিস্থিতি মিল নেই৷ তখন কলেরার মহামারি দেখা দেয়নি৷ কিন্তু এখন প্রায় ৫০ হাজারের মতো মানুষ কলেরায় আক্রান্ত, মারা গেছে প্রায় দু'হাজার জন৷ এ সংখ্যাটা আমাদের জানা হিসাব অনুযায়ী৷ হয়ত সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি৷ অবরোধের ফলে খাদ্যের দাম বেড়েছে৷  তাই একটি পরিবাবরের টিকে থাকার জন্য কত প্রয়োজন তা আমাদের আগের হিসাবের সাথে মিলবে না৷ এর অর্থ আরো বেশি সাহায্য প্রয়োজন৷ যে কোনো সংস্থা থেকে যে কোনো সাহায্যই এখন স্বাগত জানাতে হবে৷

মাটিয়াস ফন হাইন, অলিভার পিপার/আরএন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য