ইসলামি বই ও রাজনৈতিক সংযোগ?
২৩ জুন ২০১৭জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে আবদুল্লাহ আল ফারুক ও তাঁর স্ত্রী সাদিকা সুলতানা সাকী’র ‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’ বইটি৷ এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে ৫ হাজার কপি৷ প্রকাশক মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ জানিয়েছেন, পাঠক চাহিদা মেটাতে হিমসিম খাচ্ছে তাঁর প্রকাশনী সংস্থা ‘মাকতাবাতুল আজহার’৷ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার রুবেল হোসেনের সাবেক বান্ধবী হিসেবে আলোচিত হ্যাপীর সাক্ষাৎকারনির্ভর বইটিতে হ্যাপী কিভাবে ধর্মের পথে ফিরেছেন সেই বিবরণ আছে৷ একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ঘটনাটি খুব গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে৷ এর আগে একইভাবে কাশেম বিন আবু বকর নামের একজন লেখককে নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল একই সংবাদ সংস্থা৷ প্রতিবেদনে কাশেম বিন আবু বকরের ‘ফুটন্ত গোলাপ’ বইটিকে বেস্টসেলার এবং মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় বলে উল্লেখ করা হয়৷ সেই প্রতিবেদনের মতো হ্যাপীকে নিয়ে প্রকাশিত বইটি নিয়ে প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে রক্ষণশীলতা বাড়ছে উল্লেখ করে কিছুটা উদ্বেগের কথা জানানো হয়৷ সর্বশেষ প্রতিবেদনে তারা দাবি করে যে, গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশেইসলাম কট্টরপন্থার দিকে ঝুঁকছে৷
এ বিষয়ে বইটির সহ-লেখক আবদুল্লাহ আল ফারুকের সঙ্গে কথা হয়েছে ডয়চে ভেলের৷ ৫৭টি ইসলামি বইয়ের লেখক ও অনুবাদক আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘‘শুধু ধর্মকে এখানে আমি সম্পৃক্ত করব না৷ একজন সেলিব্রেটির জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং আমি যেটাকে ভালো মনে করি, সেদিকে সে ঝুঁকেছে৷ সেজন্যই আমার এ লেখা৷’’ তাহলে প্রশ্ন হলো, এ ধরনের বই প্রকাশিত হওয়া এবং তার বিক্রির সঙ্গে কট্টরপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্পর্ক কোথায়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, এ ধরনের সম্পর্ক খুঁজতে গেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুল বার্তা চলে যেতে পারে৷ তাঁর মতে, এ সম্পর্ক খোঁজার দু’টো কারণ থাকতে পারে, এক, সাংবাদিকদের মধ্যে জনপ্রিয় বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির প্রবণতা৷ দুই, সারাবিশ্বে ইসলামকে যেভাবে রক্ষণশীলতা বা উগ্রবাদের ধারণায় পরিচিত করার চেষ্টা চলছে, তার প্রভাব পড়তে পারে এই প্রতিবেদনে৷ তবে ‘কন্সপিরেসি থিওরি’ ঢালাওভাবে তুলে ধরতে চান না তিনি৷ তিনি মনে করেন, সেই সিদ্ধান্তে আসতে হলে আরো গবেষণা দরকার৷
সেদিক থেকে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান মনে করেন, রাজনৈতিক ধর্মের ধারণা যতটা না মানুষের মধ্যে, তার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেখা যায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমার অনুমান গণমাধ্যমে উদারপন্থিদের চাইতে রক্ষণশীল মানুষদের সংখ্যা কম তো নয়ই, বরং বেশি৷ তাঁরা আন্তর্জাতিকভাবে এই ধারাটিকে সামনে আনার চেষ্টা করছে৷’’
শামসুজ্জামান খান বলেন, ইসলামি বইয়ের চাহিদা বাজারে সবসময়ই রয়েছে৷ বরং ঢাকার চেয়ে কলকাতার মুসলমানদের মধ্যে এর চাহিদা বেশি৷ কিন্তু বাংলাদেশে এখনো মূল ধারার লেখকদের চাহিদা বেশি৷
এ বছর বইমেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের কযেকটি বই৷ এছাড়া হুমায়ুন আহমেদ, আনিসুল হক, মুনতাসির মামুন, সাদাত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমদাদুল হক মিলন এবং তরুণ লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের বই প্রচুর বিক্রি হয়েছে৷ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইও প্রচুর বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক৷ ইসলামি গ্রন্থ মেলাতেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়৷ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে একে অস্বাভাবিকভাবে দেখার চেষ্টা করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন ড. শামসুজ্জামান খান৷
গ্রামীণ মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে কাশেম বিন আবু বকরের বইগুলোর জনপ্রিয়তাকে ইতিবাচকভাবেই দেখেন শান্তনু মজুমদার৷ তিনি বলেন, ‘‘রক্ষণশীল পরিবারগুলোতে যেখানে প্রেম ভালোবাসার কথা বলাই পাপ, সেখানে তাঁরা এ সব বই পড়ছেন৷ তাতে তাঁদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটছে৷’’
ড. শামসুজ্জামান খান ও শান্তনু মজুমদার মনে করেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদসহ উগ্র ইসলামপন্থার বিকাশ ঘটেছে৷ কিন্তু তার সঙ্গে কোনোভাবেই ইসলামি বই বেশি বিক্রি হওয়ার সম্পর্ক খোঁজার যৌক্তিক কারণ নেই৷ এছাড়া বাংলাদেশ ধীরে ধীরে আফগানিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের মতো কট্টরপন্থি হয়ে যাচ্ছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার সময় আসেনি বলে মত তাঁদের৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷