‘ইরান আগুন নিয়ে খেলছে'
২ জুলাই ২০১৯ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবার পর থেকেই ইরানের উপর চাপ বেড়ে চলেছে৷ প্রথমে হুমকি ও হুঁশিয়ারি, তারপর একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে অ্যামেরিকার প্রত্যাহার, সবশেষে একঝাঁক কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে ইরানের নেতৃত্বকে কোণঠাসা করতে পেরেছিলেন ট্রাম্প৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ইরান পরমাণু চুক্তি মেনে এসেছে৷
কিন্তু সোমবার সে দেশ আদের ঘোষণা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অন্যতম প্রধান শর্ত লঙ্ঘন করলো৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইরানের হাতে এই প্রথম ৩.৬৭ শতাংশ মাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ ৩০০ কিলোগ্রাম পেরিয়ে গেছে৷ আগামী কয়েক দিনে সে দেশ আরও উচ্চ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করবে বলে জানিয়েছে৷
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে বাকি দেশগুলিও ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক খর্ব করতে বাধ্য হচ্ছে৷ ইরানের পেট্রোলিয়াম রপ্তানিও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে৷ চরম অর্থনৈতিক দুর্দশার ফলে সে দেশের নেতৃত্ব মরিয়া হয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের উপর পালটা চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে৷ তেহরান মনে করিয়ে দিচ্ছে, যে পরমাণু চুক্তির আওতায় সে দেশের অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করার যে শর্ত রয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে তা সম্ভব হচ্ছে না৷ তাই একতরফাভাবে চুক্তি মেনে চলা ইরানের পক্ষেও সম্ভব নয়৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরান অবশ্যই জানে সে দেশ কী করছে৷ তাঁর মতে, ইরানের নেতৃত্ব আগুন নিয়ে খেলা করছে৷ তাই তিনি সে দেশকে কোনো বার্তা দিতে চান না৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ২০০৬ সাল থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাবের উল্লেখ করে বলেন, ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সংক্রান্ত সব কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে৷ তিনি ইরানের উপর আরও অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানোর ঘোষণা করেন৷
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ইউরোপের দেশগুলির উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ডাক দিয়েছেন৷ তিনিও জাতিসংঘের শর্ত মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ইরান পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন করলেই ইউরোপ নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অঙ্গীকার করেছিল৷
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জরিফ সোমবার বলেন, অ্যামেরিকা তার আগ্রাসী মনোভাব ও কড়া নিষেধাজ্ঞার পক্ষে আন্তর্জাতির সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ তাঁর মতে, ওয়াশিংটন এক ইরান-বিরোধী জোট গড়া ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের নিন্দা করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এখনো পর্যন্ত তারা দুটি লক্ষ্যই পূরণ করতে পারেনি৷
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস ইরানের ঘোষণা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ তবে তাঁর এক মুখপাত্র বলেন, কোনো বিচ্যুতি ঘটলে পরমাণু চুক্তির আওতায় থেকেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে৷ তিনি ইরানের উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক সুবিধা বজায় রাখতে চুক্তি মেনে চলার পরামর্শ দেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)