ইচ্ছাশক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে ভবিষ্যতের যন্ত্রপাতি?
২৪ ডিসেম্বর ২০১৮লিসবন শহরের বাইরে এক বিমানক্ষেত্র থেকে একটি ড্রোন ওড়ানো হচ্ছে৷ উড়ালের সময় পাইলট শুধু তাঁর মন দিয়ে ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ করবেন৷ এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের গবেষকরা এমন প্রযুক্তি তৈরি করেছেন, যার সাহায্যে প্রতিবন্ধী মানুষের জীবন বদলে দেওয়া সম্ভব৷ প্রকল্পের সমন্বয়ক রিকার্ডো মেন্ডেস বলেন, ‘‘এই প্রথম আমরা প্রকাশ্যে প্রকৃত এক উড়াল প্রদর্শন করছি৷ এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা৷''
বেশিরভাগ ড্রোনের মতো এ ক্ষেত্রেও মাটি থেকে নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে৷ কিন্তু জয়স্টিক ও বোতামের বদলে পাইলট শুধু চিন্তাশক্তির সাহায্যে ড্রোনের গতিপথ স্থির করছেন৷ রিকার্ডো বলেন, ‘‘আমরা প্রচলিত প্রক্রিয়া থেকে ‘ব্রেন ফ্লাইট'-এর হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে দিচ্ছি৷ সেই মুহূর্ত থেকে পাইলটের মস্তিষ্ক তরঙ্গ ড্রোনটিকে ওড়াবে৷''
স্নায়ুবিজ্ঞানী নুনো লুরেইরো পর্দার নিকে মনোযোগ দিয়ে ফ্লাইট প্যারামিটার লক্ষ্য করছেন৷ ড্রোনটিকে সঠিক দিশায় চালিত করতে এবং নির্ধারিত এলাকার মধ্যে আবদ্ধ রাখতে বেশ মানসিক উদ্যোগের প্রয়োজন হয়৷ লুরেইরো বলেন, ‘‘কাজটা খুব কঠিন হবার কথা নয়৷ আরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও অগ্রসর হওয়া যাবে৷ পাইলটের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে৷''
এই প্রযুক্তি ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে৷ এই প্রণালীর আওতায় কিছু ইলেকট্রোড মাথার খুলিতে বসিয়ে দেওয়া হয়৷ বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে রুই কস্টা-র মতো গবেষক সেই ব্যক্তির মনের কথা জানতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এমন এক টুপি ব্যবহার করি, যা খুলির সংস্পর্শে এসে মস্তিষ্কের মধ্যে বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পড়ে নিতে পারে৷ সেই সংকেত কম্পিউটারে পাঠানো হয়৷ তার ভিত্তিতে কার্সারের নড়াচড়া পর্দায় দেখা যায়৷''
পাইলট পর্দার দিকে তাকালে তাঁর মস্তিষ্ক এমন বৈদ্যুতিক প্যাটার্ন শিখে ফেলে, যেগুলির মাধ্যমে কোনো বস্তুর নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, আরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া গাড়ি চালানোর মতোই স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠতে পারে৷ রুই কস্টা বলেন, ‘‘নীতিগতভাবে যে কেউ এই কাজ শিখতে পারে৷ তবে সেই ব্যক্তির শেখার ক্ষমতার উপর তা নির্ভর করবে৷ সবাই তো আর পিয়ানোবাদক হতে পারে না!''
পূর্ণ মাপের এক বিমান সিমুলেটরেও এই প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হয়েছে৷ গবেষকদের ধারণা, ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেস ভবিষ্যতে কনট্রোল প্যানেল অনেক সহজ করে তুলবে৷ তাছাড়া পাইলট প্রশিক্ষণের সময়ও কমে যেতে পারে৷ এমনকি একদিন হয়তো পঙ্গু মানুষও বিমান চালাতে পারবেন৷ প্রকল্পের সমন্বয়ক রিকার্ডো মেন্ডেস বলেন, ‘‘এয়ারোনটিক্স ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এই প্রযুক্তি প্রয়োগের কথা ভাবছি৷ যেমন হুইলচেয়ারে এই প্রযুক্তি বসালে ইচ্ছাশক্তি দিয়েই সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে৷ অথবা বাসার সব অ্যাপ্লায়েন্সও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে৷''
মস্তিষ্কের তরঙ্গ কাজে লাগিয়ে আলোর বাতি জ্বালানো বা বন্ধ করা, ইমেল লেখা, কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চালনা করার মতো অনেক কাজ করা হয়তো একদিন সম্ভব হবে৷ ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেসের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এমন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে৷