নারী-পুরুষের মস্তিষ্কে পার্থক্য?
৩০ জুলাই ২০১৮সমাজে পুরুষ ও নারীর নির্দিষ্ট ভূমিকা সম্পর্কে বদ্ধমূল ধারণা আমাদের সংস্কৃতির গভীরে রোপিত আছে৷ কিন্তু নারীরা কি ভেনাস ও পুরুষরা মঙ্গলের উত্তরসুরি? তাদের চরিত্র ও ক্ষমতাও কি একেবারে আলাদা?
দুই লিঙ্গের শারীরিক গঠনে পার্থক্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই৷ কিন্তু পুরুষ ও নারীর ভাবনাচিন্তা ও অনুভূতিও কি আলাদা? আধুনিক স্নায়বিক গবেষণা কি দুই লিঙ্গের পার্থক্য সম্পর্কে বদ্ধমূল ধারণা প্রমাণ করতে পারবে?
জার্মানির ইয়ুলিশ শহরে হেল্মহলৎস গবেষণা কেন্দ্রে ড. সুসানে ভাইস-সহ বিজ্ঞানীদের এক দল মস্তিষ্কের কাঠামো খতিয়ে দেখছেন৷ যুগান্তকারী এক প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে তাঁরা মস্তিষ্কের পাতলা ফালি প্রস্তুত করছেন৷ এভাবে তাঁরা স্নায়ুর গতিপথ ও অন্যান্য কাঠামো তুলে ধরতে চান৷ পুরুষ ও নারীর মস্তিষ্কের মধ্যে একটি পার্থক্য অত্যন্ত স্পষ্ট৷ ড. ভাইস বলেন, ‘‘মস্তিষ্কের আয়তনের পার্থক্য সবচেয়ে স্পষ্ট৷ পুরুষদের মস্তিষ্ক নারীদের তুলনায় বড় হলেও সেটি আরও দ্রুত বা আরও উন্নতভাবে চলে, এমন কোনো প্রমাণ নেই৷''
২০১৩ সালের একটি গবেষণা আরও একটি পার্থক্য খুঁজে পেয়েছিল৷ মস্তিষ্কের বাম ও ডান অংশের মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদান নারীদের ক্ষেত্রে আরও দ্রুত ঘটে৷ অন্যদিকে পুরুষের মস্তিষ্কের সামনে ও পিছনের অংশের মধ্যে সংযোগ তুলনামূলকভাবে আরও শক্তিশালী৷
এর মাধ্যমে লিঙ্গ অনুযায়ী ক্ষমতার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়৷ যেমন নারীদের মধ্যে আরও সহমর্মিতা অথবা পুরুষদের আরও উন্নত দিকনির্ণয়ের ক্ষমতা৷ তবে সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী দুই লিঙ্গের মস্তিষ্কের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য নেই৷ বরং সবার মস্তিষ্কের মধ্যেই বিভিন্ন অনুপাতে পুরুষ ও নারীর উপাদান রয়েছে৷ ড. সুসানে ভাইস বলেন, ‘‘দুই লিঙ্গের মধ্যে নয়, বরং একই লিঙ্গের মধ্যে বেশি পার্থক্য পাওয়া যায়৷ প্রায়ই দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বলা হয়, নারীরা আরও দক্ষভাবে ভাষা শিখতে পারেন বা পুরুষদের ‘স্পেশিয়াল' বা স্থান সংক্রান্ত জ্ঞান বেশি৷ তবে প্রায়ই স্বল্প পরিসরের গবেষণায় এমন সিদ্ধান্ত উঠে আসে৷ মাত্র ২০, ২৫ অথবা ১০০ জনের স্যাম্পল থেকে সার্বিক চিত্র পাওয়া যায় না৷''
তাহলে আসল ঘটনা কী? হাজার হাজার বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে পুরুষ ও নারীর বোঝার ক্ষমতার পার্থক্য তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু ফলাফল অনুযায়ী দুই লিঙ্গের মস্তিষ্কের মধ্যে কার্যত কোনো পার্থক্যই নেই৷ অমিলের তুলনায় মিলই অনেক বেশি৷ তাহলে কি আমাদের আচরণের মধ্যে পার্থক্য আমরা জন্মের পর শিক্ষাদিক্ষার মাধ্যমে আয়ত্ত করেছি?
এমনটাও হলফ করে বলা যায় না৷ মস্তিষ্কের কাণ্ডের সবচেয়ে পুরানো অংশে গঠনগত পার্থক্য রয়ে গেছে৷ সেখানেই ‘মিডিয়াল প্রিঅপটিক নিউক্লিয়াস' নামের কয়েক মিলিমিটার চওড়া পরিচালন কেন্দ্র রয়েছে৷ সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর পুরুষের মস্তিষ্কে এই অংশটি অপেক্ষাকৃত বড়৷ মানুষের ক্ষেত্রে তা দ্বিগুণ৷
এই স্নায়বিক কেন্দ্র কর্তৃত্ব, আগ্রাসী মনোভাব ও যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে৷ পুরুষদের ক্ষেত্রে এগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত, নারীদের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন৷ আমাদের আচরণেই তার প্রতিফলন দেখা যায়৷ যেমন সম্পর্কের বন্ধনের বাইরে যৌন সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি৷ পুরুষদের মধ্যে শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে আগ্রাসী মনোভাবের প্রকাশও বেশি দেখা যায়৷
যখন বলা হয় ‘পুরুষদের প্রকৃতি পশুর মতো', নিউরোবায়লজি অনুযায়ী সেই বক্তব্যের একটা ভিত্তি আছে বৈকি৷ এমন প্রবৃত্তি কি আমাদের আচরণ নির্ধারণ করে? অনেক গবেষকের মনে বিষয়টি নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে একই লক্ষ্য পূরণ করতে পুরুষ ও নারীরা আলাদা কৌশল প্রয়োগ করে৷
ফ্রাংক বয়মার/এসবি