রুখে দাঁড়াচ্ছেন মুসলিমরা
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪নরওয়ে থেকে শুরু করে জার্মানি হয়ে ফ্রান্স অবধি, মুসলিমরা পথে নেমে, মিছিল করে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস বা আইসিস) জিহাদিদের নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন যে, তাঁরা মুসলিমদের ধর্ম ও ধর্মীয় ভাষাকে ‘অপহরণ' করে দ্বেষ ও সহিংসতা ছড়াচ্ছে৷
জার্মানির মুসলিমদের কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি আইমান মাজিয়েক বলেছেন, আইএস গোষ্ঠীর সদস্যরা হলো ‘‘সন্ত্রাসী এবং হত্যাকারী যারা ইসলামের নাম কলঙ্কিত করছে এবং সিরিয়া, ইরাক ও অন্যত্র মানুষের জীবনে হিংসা ও নিপীড়ন নিয়ে এসেছে, এমনকি যাঁরা তাদের ধর্মীয় সতীর্থ, সেই অন্য মুসলমানদেরও রেয়াত করছে না৷''
জার্মান মুসলিমদের কেন্দ্রীয় পরিষদ দু'সপ্তাহ আগের এক শুক্রবারে জার্মানি জুড়ে প্রার্থনাসভা ও শান্তি সমাবেশের উদ্যোগ করেন৷ জার্মানিতে প্রায় চল্লিশ লাখ মুসলিমের বাস, যাঁদের অধিকাংশই তুর্কি৷ বার্লিনের তুর্কি-অধ্যুষিত ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকায় – যাকে লোকে আদর করে বলে ‘খুদে ইস্তানবুল' – খোলা আকাশের নীচে হাজার হাজার মানুষ হাঁটু গেড়ে জুম্মার নামাজ পড়েন৷
জার্মানির সব মসজিদে সেদিন যে বার্তাটি পড়ে শোনানো হয়, তা-তে বলা ছিল: ‘‘ওরা মহানবীর পতাকা নিয়ে কাজ করছে, কিন্তু ওদের অপরাধকর্ম দেখে বোঝা যায় যে, আল্লা আমাদের কাছে যা ব্যক্ত করেছেন এবং মহানবী যে নির্দেশাবলী অনুযায়ী জীবনযাপন করেছেন, ওরা তার বিন্দুমাত্র বোঝেনি৷''
নরওয়ে ও ডেনমার্কে মুসলিমরা ব্যানার হাতে মিছিল করেছেন৷ হাতের শালুতে লেখা ছিল: ‘‘সে নো টু (নন) ইসলামিক স্টেট'' – অ-ইসলামি রাষ্ট্রকে বর্জন করো৷ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যা স্বাভাবিক, লন্ডন-ভিত্তিক অ্যাকটিভ চেঞ্জ ফাউন্ডেশন ‘নটইনমাইনেম' নামধারী একটি হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে, যা টুইটারে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে৷ ফাউন্ডেশন তার ওয়েবসাইটে বলছে: ‘‘সারা দুনিয়াকে বলো আইসিস ইসলামের আসল শত্রু৷ আমাদের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই৷ আইসিস-কে বলো, তারা তোমার নামে হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে না৷''
অপরদিকে ইউরোপ জুড়ে বিভিন্ন মুসলিম গোষ্ঠী তাদের ‘ভ্রান্ত' তরুণদের সিরিয়া ও ইরাক যাওয়া থেকে বিরত করার প্রচেষ্টা করছে৷ সুইডেনে একটি স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠী একটি ইন্টারনেট ও টেলিফোন হটলাইন সৃষ্টি করেছে, যার মাধ্যমে উদ্বিগ্ন আত্মীয়স্বজন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবেন, তাদের কোনো পরিচিত বান্ধব কিংবা আত্মীয় উগ্রপন্থি হয়ে উঠেছে কিনা৷
‘প্যারিস অ্যাপিল'-এ ফরাসি মুসলিমরা তাদের যুবসমাজের প্রতি সরাসরি আবেদন জানিয়েছে, যা-তে তরুণ মুসলিমরা ‘‘তাদের সংগ্রামকে গুলিয়ে না ফেলে'': ‘‘আসল জিহাদ সিরিয়া কিংবা ইরাকে নয়, আসল জিহাদ ফ্রান্সে৷ তা হলো সমাজে অন্তর্ভুক্তির সংগ্রাম, সামাজিক সাফল্যের জন্য সংগ্রাম, সহাবস্থানের জন্য সংগ্রাম৷''
এসি/ডিজি (এএফপি)