আসন সমঝোতা: আপ-সহ অন্যদের সঙ্গে কংগ্রেসের কথা এগোলো
৯ জানুয়ারি ২০২৪বিজেপি-র বিরুদ্ধে একজন প্রার্থী দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে ইন্ডিয়া জোটের শরিক ও সহযোগী দলগুলি। দিল্লিতে সোমবার আপ ও কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই বৈঠকে আপ দিল্লির তিনটি আসন কংগ্রেসকে দিতে চাইছে। আপ লড়তে চায় চারটি আসনে। ভারতে লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগেই আসন সমঝোতা করে ফেলতে চায় বিরোধীরা।
দিল্লি নিয়ে আলোচনা
আপের হয়ে বৈঠকে ছিলেন দুই মন্ত্রী অতিশি ও সৌরভ ভরদ্বাজ এবং সংগঠনের দায়িত্বে থাকা সন্দীপ পাঠক। কংগ্রেসের পক্ষে ছিলেন মুকুল ওয়াসনিক, অশোক গেহলট, অজয় মাকেনরা।
এই বৈঠকেই চার-তিন ফর্মুলার কথা বলেন আপ নেতারা। কংগ্রেসের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবার বৈঠকে বসবে দুই দল।
আপ নেতা অনুপ ঠাকুর ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''আমরা সমঝোতা করতে চাই। তাতে আপ ও কংগ্রেস দুই দলই লাভবান হবে। দিল্লিতে একবার আসন সমঝোতা হলে পাঞ্জাবেও সম্ভবত হবে।''
পাঞ্জাবে দুই দলের রাজ্য নেতারা জানিয়েছেন, তারা আসন সমঝোতা চান না। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে, সমঝোতা করলে লাভ হবে। তবে পাঞ্জাবের রাজ্য নেতৃত্বকে তাদের আগে রাজি করাতে হবে।
কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও এবার আসন সমঝোতা করার বিষয়ে রীতিমতো আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বিহারের আলোচনা
বিহারে আসন সমঝোতা নিয়ে লালুপ্রসাদের দল আরজেডির সঙ্গে কংগ্রেসের একদফা আলোচনা হয়েছে। এবার জেডি ইউ-র সঙ্গে হবে। বিহারের যে ফর্মুলা নিয়ে কথা চলছে তা হলো, জেডি ইউ ও আরজেডি ১৭টি করে আসনে লড়বে, কংগ্রেস লড়বে চারটিতে এবং সিপিআইএমএল ও সিপিআই একটি করে আসন পাবে। কংগ্রেস রাজ্যসভার একটি আসন পাবে।
এই বৈঠকের পর কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ বলেছেন, ''আমরা আসন নিয়ে আমাদের মতামত জানিয়েছি। ওরাও জানাবে। বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক হবে।''
সিপিআই নেতা পল্লব সেনগুপ্ত ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, তাদের এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তারা বিহার একটি আসন ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ আসনটিতে লড়তে চান। সেই আসন না পেলে তারা বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিতে পারেন।
পল্লব সেনগুপ্ত বলেছেন, ''আমরা মণিপুরে একটি আসনে লড়ব। আমরা চাই, মণিপুরে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট আমাদের সমর্খন করুক। মণিপুরের মেইতেই অধ্যুষিত আসনে আমরা সাধারণত দ্বিতীয় স্থানে থাকি। তাছাড়া মণিপুরে আমরা বিধানসভায় সাড়ে সাত শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম। তাই এখানে আমাদের লড়তেই হবে।''
মহারাষ্ট্রের আসন নিয়ে
মহারাষ্ট্র নিয়ে মঙ্গলবারই দিল্লিতে আলোচনায় বসছেন শিবসেনা, কংগ্রেস ও এনসিপি নেতারা। এনসিপি জানিয়েছে, তারা ২৩টি আসনে লড়তে চায়। তবে উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, তারা কোনোভাবেই চাইবেন না যে, জোট ভেঙে যাক। তারা একসঙ্গেই লড়বেন।
প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল চাওকে ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গতবার এনসিপি ১৮টি আসনে জিতেছিল। তার মধ্যে এখন মাত্র পাঁচজনই ঠাকরের সঙ্গে আছেন। কিন্তু ওই ১৮টি আসনের দাবি কারা ছাড়বে না। কংগ্রেস গতবার একটি আসনে জিতলেও ১৭টি জায়গায় যেখানে বিজেপি জিতেছিল, সেখানে তারা দুই নম্বরে ছি্ল। এমন হতে পারে এনসিপি ও কংগ্রেস প্রায় সমান সংখ্যক আসনে লড়বে। এনসিপিও গোটা ১২ আসনে লড়বে। প্রকাশ আম্বেডকরকে ঠাকরে বা কংগ্রেস একটি আসন ছাড়বে।''
দক্ষিণ ভারতের ছবি
তামিলনাড়ুতে গতবারের ফর্মুলাই বজায় থাকবে বলে প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে। কংগ্রেস নয়টি আসন পাবে। সিপিআই ও সিপিএম পাবে দুইটি করে আসন। বাকি ডিএমকে লড়বে। তারা গোটা দুই আসন ছোট কোনো দলকে ছাড়তে পারে।
তেলেঙ্গানাতে সিপিআই একটি আসনে লড়তে চায়। কিন্তু কংগ্রেস এখানে ১৭টি আসনেই লড়তে চায়। কর্ণাটকেও কংগ্রেস ২০টি আসনেই লড়বে। কেরালায় তারা লড়বে ১৬টি আসনে, চারটি আসন তারা ছাড়বে ছোট শরিকদের। অন্ধ্রেও কংগ্রেস ২৫টি আসনে লড়ার পক্ষপাতী। তবে সিপিআই এখানে দুইটি আসন চায়। এনিয়ে কথা হবে।
উত্তর ও পশ্চিম ভারতের পরিস্থিতি
উত্তরপ্রদেশ আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেস চাপে আছে। সমাজবাদী পার্টি যদি কংগ্রেসকে এখানে গোটা আটেক আসন ছাড়ে, তাহলে তারা মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে আসন চাইবে। ছত্তিশগড়ে দান্তেওয়াড়া চায় সিপিআই।
রাজস্থানে সিপিএম একটি আসনের দাবিদার। গুজরাটে আপ পাঁচটি আসনে লড়তে চায়। গোয়াতেও তারা একটি আসন চায়।
ঝাড়খণ্ডে আসন সমঝোতার আপাতত ফর্মুলা হলো, কংগ্রেস সাতটি, জেএমএম চারটি ও বামেরা তিনটি আসন। তবে চূড়ান্ত আলোচনা বাকি।
কংগ্রেসের মনোভাবে পরিবর্তন?
গতবারের তুলনায় কংগ্রেসের এবারের মনোভাবে কিছুটা পরিবর্তন দেখছেন অন্য বিরোধী দলের নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাম নেতার কথায়, কংগ্রেস এবার অনেক বেশি নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো রাজ্য নেতাদের কট্টর মনোভাবের মোকাবিলা করা এবং অন্য দলগুলিকে আসন ছাড়া। অনমনীয় মনোভাব দেখাতে গিয়ে তারা ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে হেরেছে বলে ওই বাম নেতার মত।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা এখনো স্পষ্ট হয়নি। প্রদেশ কংগ্রেস তৃণমূলের কাছ থেকে দশটিু আসন চায়। তৃণমূল দিতে চায় মাত্র দুইটি আসন। এনিয়ে আলোচনা হবে। শেষপর্যন্ত আসন সমঝোতা হবে নাকি কংগ্রেস ও বামেরা একসঙ্গে লড়বেন তা আরো কিছুদিন পর স্পষ্ট হবে।
তবে তৃণমূল যেমন কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা চাইছে, তেমনই কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও সমঝোতার পক্ষে। কিন্তু অধীর রঞ্জন চৌধুরীরা সমঝোতার বিরোধী। তবে সবই নির্ভর করছে, তৃণমূল কটা আসন ছাড়তে রাজি হবে এবং রাহুল গান্ধীরা শেষপর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেবেন তার উপর।
এখনো পর্যন্ত যতগুলি বৈঠক হয়েছে, তাতে কংগ্রেস নেতারা এই নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছেন। সম্প্রতি তিন রাজ্যে হারার পরে তাদের মধ্যে এই পরিবর্তন দেখছেন বিরোধীরা।