1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

'ইন্ডিয়া' জোটে প্রবল চাপের মুখে কংগ্রেস

৫ ডিসেম্বর ২০২৩

হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপির জয়ের পর প্রশ্নচিহ্ন বিরোধী জোটের ভবিষ্যতে। কংগ্রেসের দিকেআঙুল তুলছে বিরোধীরা।

https://p.dw.com/p/4ZnNA
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।
বুধবার ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক স্থগিত রাখা হয়েছেছবি: Pradeep Gaur/SOPA/Zuma/picture alliance

মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে কংগ্রেসের হারের পর বিজেপি বিরোধী জোট ''ইন্ডিয়া'র বিভিন্ন শরিক দল বেসুরে কথা বলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভারতের সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলেন, "এটা মানুষের হার নয়, কংগ্রেসের হার।  মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিতে চেয়েছে।" কংগ্রেসের প্রতি তার বার্তা, "শুধু প্রচার করলে হবে না, আদর্শের সঙ্গে কৌশল যোগ করতে হবে।"

এই কৌশল প্রসঙ্গে আসন সংক্রান্ত বোঝাপড়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন তৃণমূলনেত্রী। তার মন্তব্য, "আমরা বারবার বলেছি আসন ভাগাভাগি করতে হবে। সেটা করলে এই হার হতো না।" রাহুল ব্রিগেডকে দায়ী করে মমতা বলেন, "শরিকরাই ১২ শতাংশ ভোট কেটেছে। একটা দল ছয়টি আসন চেয়েছিল। তাদের তিনটি আসন দিতে পারত। কিন্তু কংগ্রেস দেয়নি।"

একথা তৃণমূল নেত্রী মধ্যপ্রদেশ প্রসঙ্গে বলেছেন। 'ইন্ডিয়া' জোটের অন্যতম শরিক সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসের কাছ থেকে আসন চেয়েছিল। কিন্তু ওই রাজ্যের শীর্ষ কংগ্রেস নেতা কমলনাথ সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে যদি এই পরিস্থিতি হয়, তা হলে জাতীয় স্তরের লোকসভা নির্বাচনে কীভাবে আসন সমঝোতা করবে বিরোধী জোট?

প্রদেশ নেতাদের দায়?

তৃণমূলের 'সেকেন্ড ইন কম্যান্ড' সমঝোতায় বাধা দেয়ার জন্য কার্যত দায়ী করছেন প্রদেশ নেতৃত্বকে। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ অন্যান্য রাজ্য নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়ার ঘোর বিরোধী। অভিষেকের মন্তব্য, "প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন। যোগ্যদের সুযোগ না দিয়ে প্রচারের আলোয় থাকতে চাইছেন।"

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি নেতারা বিরোধী জোটকে কটাক্ষ করছেন গোড়া থেকে। মোদী বলেছেন, "কোথাও বন্ধুত্ব, কোথাও বিবাদ। দুর্নীতিগ্রস্তরা নিজেদের বাঁচাতে এক হয়েছে।" পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, "আমরা ভোটে হেরেছি বলে মোদী পরামর্শ দিচ্ছেন, দিদি পরামর্শ দিচ্ছেন। আমাদের কারো পরামর্শের দরকার নেই। ভোটের আগে একবারও বিজেপিকে হারানোর ডাক দেননি কেন?"

ইন্ডিয়া জোটের সমস্যা হবে বলে মনে হয় না: সুমন ভট্টাচার্য

জোটের বৈঠক স্থগিত

শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, জোটের অন্যান্য শরিকরাও কংগ্রেসের সম্পর্কে উষ্মা প্রকাশ করছে। বুধবার ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে জোটের বৈঠক ডেকেছিল কংগ্রেস। কিন্তু তা স্থগিত রাখা হয়েছে। তৃণমূল নেত্রী শুধু নন, এই বৈঠকে গরহাজির থাকতেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার ও সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবও। 

তৃণমূলনেত্রী বলেছেন, তাকে বৈঠকের কথা কেউ জানায়নি। জোটের শরিকদের ক্ষোভ, সকলের সঙ্গে আলোচনা না করে কংগ্রেস বৈঠক ডাকছে! সূত্রের খবর, চাপের মুখে বৈঠক বাতিল হয়েছে। পরে বৈঠকের দিনক্ষণ জানানো হবে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি জোট দানা বাঁধবে? আসন সমঝোতা তো দূর অস্ত!

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "ইন্ডিয়া জোটের সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। বিজেপিকে রুখতে তাদের একজোট হতে হবে, এটা তারা জানে। নইলে সকলে বিজেপির আক্রমণের মুখে পড়বে। কংগ্রেসকে আরো উদার মানসিকতা নিয়ে ছোট দলগুলির সঙ্গে জোট করতে হবে।"

বিধানসভা নির্বাচনে জয় মানেই লোকসভায় তার পুনরাবৃত্তি হবে, এমনটা নাও হতে পারে। কংগ্রেস ও বিরোধী শিবির থেকে এ কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেন, "২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি ও কংগ্রেসের মুখোমুখি লড়াই হয় ১৯২ কেন্দ্রে। বিজেপি জিতেছিল ১৭৬ আসনে। তারপর থেকে কংগ্রেসের ভোট কিন্তু বাড়েনি। এর উপর বিরোধী ভোট ভাগের ফলে এবার বিজেপির সুবিধা হয়েছে, পরেও হতে পারে।"

যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তারাই বিজেপির মোকাবিলা করুক, এই ফর্মুলার পক্ষে সওয়াল করছে বিরোধী জোটের শরিকরা। তা হলে কি আম আদমি পার্টিকে দিল্লি ও পাঞ্জাবে জমি ছেড়ে দেবে কংগ্রেস? উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বঙ্গে তৃণমূলকে সমর্থন দিতে রাজি হবেন প্রদেশ নেতৃত্ব? তার থেকেও বড় কথা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস কি অন্য বিরোধী দলকে আসন ছাড়বে?

এমন একাধিক ধোঁয়াশায় ঢেকে 'ইন্ডিয়া' জোটের ভবিষ্যৎ।

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷