1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলোচনায় ‘আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরা'

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ মার্চ ২০১৯

প্রধান নির্বাচন কশিনার (সিইসি) কে এম নূরল হুদা'র ‘আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার সুযোগ' সংক্রান্ত বক্তব্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ বিএনপি বলেছে থলের বেড়াল বেরিয়ে এসেছে৷ আওয়ামী লীগ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি৷

https://p.dw.com/p/3Eijf
Bangladesch KM Nurul Huda Vorsitzender Wahlkommission
ছবি: bdnews24.com

সিইসি শুক্রবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বলেন, ‘‘জেলা-উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে দূরে ভোটকেন্দ্র হয়৷ এ কারণে আগের দিন এসব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স পাঠাতে হয়৷ এখানে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়া যায় না৷ কিন্তু যদি ইভিএমে ভোটের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে আর ভোটের আগের দিন রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করার সুযোগ থাকবে না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘যখন সমাজের মধ্যে অনিয়ম ঢোকে তখন তা প্রতিহত করতে পদক্ষেপ নিতে হয়৷ এ কারণে কমিশন ভাবছে ইভিএমে ভোট নেওয়া শুরু করবে৷''

‘এই বক্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থাকল’: দুদু

সিইসি নির্বাচন নিয়ে ঐ অনুষ্ঠানে আরো অনেক কথা বললেও আলোচনা চলছে ‘আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার সুযোগ' সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে৷ সিইসি এখনো তাঁর বক্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা দেননি৷

তবে বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘সিইসির বক্তব্যে থলের বেড়াল বেরিয়ে গেছে৷ মিডনাইট নির্বাচন (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) যে হয়েছে, তা উনার (সিইসি) কথার মধ্য দিয়েই বেরিয়ে এসেছে৷ অর্থাৎ ইভিএম নেই বলে মিডনাইট নির্বাচন তো হয়েছে, এটাই তো স্পষ্ট৷ উনার মুখ দিয়ে ও উনার আরেক কমিশনারের মুখ দিয়ে অজান্তে সত্য কথাটাই বেরিয়ে এসেছে৷ সত্যকে চাপা রাখা যায় না৷''

রিজভী আরো বলেন, ‘‘প্যান্ডোরার বাক্স থেকে এখন আসল ঘটনাগুলো বের হতে শুরু করেছে৷ থলের বেড়ালকে আর বেশিদিন আটকে রাখতে পারলেন তিনি৷ মিডনাইট নির্বাচনের আসল সত্যটি এখন সিইসি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন৷''

‘‘আপনার (সিইসি) এই বক্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থাকল জাতির কাছে যে, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার বঞ্চিত করে কী করে মধ্যরাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন,'' বলে মন্তব্য করেন রিজভী৷

‘পুরোটা না শুনে মন্তব্য নয়, তবে...’: হানিফ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ করেছিল৷ তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার তথা নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ অস্বীকার ও নাকোচ করে দেন৷

দুই দলের দুই নেতা যা বলেন:

সিইসির বক্তব্য নিয়ে বিএনপি'র ভাইস চেয়ানম্যান শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিইসি দেরিতে হলেও সত্য স্বীকার করেছেন৷ তিনি স্বীকার করেছেন যে ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ ডিসেম্বর রাতেই হয়ে গেছে৷ এখন তার উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া ও পদত্যাগ করা৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারেরও উচিত পদত্যাগ করা৷ কারণ তারা আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আছেন৷ তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো বৈধতা নেই৷''

আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিইসি কোন প্রেক্ষাপটে এবং কোন অবস্থায় ওই কথা বলেছেন তা বিবেচনা এবং তাঁর পুরো বক্তব্য না শুনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷ তবে আমার মনে হয় আমাদের দেশে নির্বাচন হলেই যারা পরাজিত হয় তারা ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কারচুপিসহ নানা ধরনের অভিযোগ করে৷ সিইসি হয়তো বলতে চেয়েছেন ইভিএম হলে এই ধরনের অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না৷''

তদন্ত চান সাবেক নির্বাচন কমিশনার:

‘অভিযোগের তদন্ত করা উচিত’: সাখাওয়াত

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াৎ হোসেন মনে করেন, ‘‘সিইসি হয়তো ইভিএম-এর বৈধতার জন্য আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কথা বলেছেন৷ কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে আগের নির্বাচনে এরকম হয়েছে কিনা৷ কারণ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা নিয়ে অভিযোগ এবং ব্যাপক আলোচনা হয়েছে৷ এখন নির্বাচন কমিশনের কাজ হল এটা নিয়ে তদন্ত করা৷ তারা তো আর পরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থাকবেন না৷ তাদের এই তদন্ত প্রতিবেদন ধরে তখন যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন তারা ব্যবস্থা নিতে পারবেন৷ আর যদি তদন্তে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে আইন ও সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে৷''

৭৮ উপজেলায় নির্বাচন:

এদিকে রবিবার বাংলাদেশে উপজেলা পরিষদের প্রধম ধাপের নির্বাচন৷ এবারে ৮৭টি উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও প্রভাব খাটানোর অভিযোগে তিন জেলায় নির্বাচন স্থগিত করেছে কমিশন৷ ফলে নির্বাচন হচ্ছে ৭৮ উপজেলায়৷ আর ৬ জন সংসদ সদস্যকে নির্বাচনী এলাকা থেকে বহিস্কার করা হয়েছে৷

ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান শনিবার বলেছেন, ‘‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোথাও কোনো রকম অনিয়ম দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে৷ নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ কোনো নির্বাচনি কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে৷

সিইসি কেন এ কথা বলেছেন, আপনার কী মনে হয়? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷