1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আমাদের খাদ্যের মানে আপস করতে হচ্ছে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৭ মার্চ ২০২৩

বাংলাদেশে ভেজাল খাদ্য, ক্রেতা ঠকানো- এগুলো দৈনন্দিন ঘটনা৷ এ নিয়ে দায়িত্বশীলদের খুব বেশি ভাবনা আছে, তেমনটা কখনই মনে হয়নি৷ সম্প্রতি সুলতানস ডাইন এর বিরুদ্ধে কাচ্চিতে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহার নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে৷

https://p.dw.com/p/4Op3B
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান৷
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান৷ছবি: Privat

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত ঝড় বইছে৷ এই ঘটনার পর খাবারের মানের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে, আমরা কী খাচ্ছি? ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত এসব নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে৷ এসব অভিযানে কী পাওয়া যাচ্ছে? সেসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান৷

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশে খাদ্যের সার্বিক মান কেমন বলে মনে করেন?

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান : খাদ্যের মানটা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দেখে৷ মন্ত্রণালয়সহ অনেকেই এগুলোর সঙ্গে যুক্ত৷ আমরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যেটা দেখি, ভোক্তার অধিকার৷ ভেজাল বা অন্য কোনোভাবে ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘিত হলে আমরা সেখানে অভিযান চালাই৷ খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করার সময় অনেক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়৷ যেগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এমন কোনো তথ্য পেলে আমরা অভিযান চালায়৷ অভিযান চালাতে গিয়ে আমরা যেটা দেখেছি, অনেক জায়গাতেই আমাদের খাদ্যের মানে আপস করতে হচ্ছে৷ আপনারা জানেন আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থায় একটা বড় ধরনের সমস্যা আছে৷ অতিমাত্রায় সার ব্যবহারের ফলে খাদ্যে এসে এর প্রভাব পড়ছে৷ আমাদের একটা গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক সময় দূষিত পানি ধান থেকে শুরু করে সব্জিতে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ফলে এতে সব্জিতে ক্রোমিয়াম ঢুকে যাচ্ছে৷ সেটা শরীরে যাওয়ার ফলে জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকিতে পড়েছে৷ উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাত সবকিছুতেই কাজ করার আছে৷ 

‘কিচেনের যে পরিবেশ আমরা পেয়েছি, তা কোনোভাবেই মানসম্পন্ন নয়’

অভিযান চালাতে গিয়ে বিপণন পর্যায়ে খাদ্যের মান কেমন দেখছেন?

যেগুলো প্যাকেটজাত খাদ্য সেগুলো তো বিএসটিআই দেখে৷ আমরা যেটা দেখেছি, প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোগো নকল করে খারাপ মানের খাদ্য বাজারে চলে আসছে৷ এসব ক্ষেত্রে নামি দামি কোম্পানির লোগোই তারা ব্যবহার করে৷ এগুলোর বিরুদ্ধেও আমরা অভিযান চালাই৷ সব্জির মতো পণ্যের ক্ষেত্রে যেটা দেখা যাচ্ছে, এগুলোর যে খাদ্য মান থাকার কথা সেটা কিন্তু থাকছে না৷

রেস্তোরাঁয় অভিযান চালাতে গিয়ে মান কেন দেখছেন?

রেস্তোরাঁর তো ভাগ আছে৷ যত নিম্ন মানের রেস্তোরাঁ সেখানের চিত্র তত বেশি খারাপ৷ অনেক সময় তারা খাবার ফ্রিজে রেখে দেন৷ আমরা এমনও তো দেখেছি, রান্না করা খাবার আর কাঁচা মাংস একসঙ্গে রেখে দিয়েছে৷ কিচেনের যে পরিবেশ আমরা পেয়েছি, তা কোনোভাবেই মানসম্পন্ন নয়৷ অভিজাত এলাকায় ফাইভ স্টার হোটেলেও আমরা দেখেছি, অতি উচ্চমূল্যের খাবার তারা ফ্রিজিং করছেন৷ রঙ মিক্স করে খাবার সেখানে প্রক্রিয়া করা হচ্ছে৷ সামনে রমজান, সেখানে খাবারে অনেক জায়গায় রঙ ব্যবহার করবে৷ এখন সেই রঙ যদি খাবারের না হয়ে ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করা রঙ হয় তাহলে সেটা তো স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর৷ 

যেসব প্রাণী আমরা খাই না, এমন প্রাণীর মাংস দেওয়ার কথা এর আগেও শোনা গেছে, এখনও যাচ্ছে৷ বাস্তব ঘটনা কী?

একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান সুলতান'স ডাইনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি সম্প্রতি উঠেছে, সেখানে আসলে অভিযোগ করলেই তো হবে না, প্রমান থাকতে হবে৷ যিনি ফেসবুকে প্রথম পোস্ট দিয়েছিলেন আমরা কিন্তু তাকে বারবার ডেকেছি৷ উনি আসলে কী কারণে পোস্ট দিলেন, কোন প্রমাণ উনার কাছে আছে কিনা? সেটা জানার জন্য৷ কিন্তু আমরা তাকে খুঁজে পাইনি৷ এই ধরনের পোস্টের ফলে মানুষের কাছে নেগেটিভ ম্যাসেজ যায়৷ আর আমরাও কিন্তু সেখানে অভিযান চালিয়েছিলাম৷ কিন্তু ফেসবুকে যে অভিযোগ করা হয়েছে, এর কোন সত্যতা আমরা খুঁজে পাইনি৷ তবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাদের সেখান থেকে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করছে, আমরা আশা করি সেখানে সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যাবে৷ বাংলাদেশে তো সবই সম্ভব৷ অতি মুনাফার জন্য কেউ এই ধরনের কাজ করে থাকতে পারে৷

অভিযোগ প্রমাণিত হলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেন?

আমাদের আইনে অর্থদণ্ডের বিধান আছে৷ আর অভিযোগটা গুরুতর হলে আমরা ফৌজদারি মামলাও করে থাকি৷ তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসেবে আমরা অর্থদণ্ড করে থাকি৷

রেস্তোরাঁ চালু করতে আপনাদের কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয়?

এই অনুমোদন মূলত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দিয়ে থাকে৷ আর ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয় সিটি কর্পোরেশন থেকে৷ আমরা যেটা দেখি, ভোক্তার অধিকার৷ সেখানে যদি নিম্নমানের খাবার বা বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ থাকে তখন আমরা ব্যবস্থা নেই৷

কোন রেস্টুরেন্ট যদি নিয়ম না মেনে খাবার সরবরাহ করে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেন?

এখানে দুই ধরনের ব্যবস্থা আছে৷ প্রথমত আমাদের অভিযানে যদি এটা ধরা পড়ে তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক জরিমানা করে থাকি৷ আর দ্বিতীয়ত, কোন ভোক্তা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা শুনানির মাধ্যমে এটা নিষ্পত্তি করি৷ ভোক্তা যদি কোনো প্রমাণ দেন, আর প্রতিষ্ঠানটি যদি সেটা সঠিক জবাব দিতে না পারে তখন আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড করি৷ যেটার একটা অংশ ভোক্তাও পেয়ে থাকেন৷

অভিযানের সময় পরিস্থিতি একটু ভালো থাকে, কিছুদিন পর আবারও যা তাই হয়ে যায়৷ এর কারণ কী?

আসলে লোকবলের সমস্যাও আছে৷ সারাদেশে আমাদের কাজ করতে হয়৷ আমাদের যে লোকবল আছে, সেটা দিয়ে যতটুকু করা সম্ভব সেটা আমরা করছি৷ ব্যবসায়ী কমিউনিটিসহ সবাইকে কিন্তু এখানে এগিয়ে আসতে হবে৷ বুঝতে হবে আমাদের কাজটা কিন্তু ভোক্তার অধিকারের একটা অংশ মাত্র৷ এর বাইরেও কিন্তু অনেক অংশ আছে৷

অভিযানের কারণে কী খাদ্যের মানের উন্নতি হচ্ছে?

সাংবাদিকরা এটার ফিডব্যাক নিতে পারেন৷ আমি বলতে পারি, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ কোথায় ব্যত্যয় হলে সেখানেই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি৷ আপনারা চাইলেও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন৷ সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি৷

আইনের যথাযথ প্রয়োগ কী হচ্ছে? কীভাবে খাদ্যের মান নিশ্চিত করা সম্ভব?

এর জন্য আসলে সবাইকে কাজ করতে হবে৷ ভোক্তা আইনে যতটুকু আছে আমরা সেটাই করে যাচ্ছি৷