আবর্জনা থেকে শিল্পে ব্যবহারযোগ্য কাঁচামাল
১ জুন ২০১২এই ধরা যাক বাড়ির আবর্জনা, যার কপালে আস্তাকুঁড় হয়ে কর্পোরেশনের লরিতে চড়ে ময়লা ফেলার মাঠে যাবার কথা৷ অপরদিকে: কে যেন একবার বলেছিলেন, জার্মানি যে একটি শিল্পোন্নত দেশ, সেটা তার শিল্প দেখে নয়, তার বর্জ্যশিল্প দেখে বোঝা যায়৷
প্রতিটি বাড়ি কি ফ্ল্যাটবাড়ির সামনে ছাইরঙের, কি হলুদ, সবুজ, নীল ইত্যাদি রঙের প্লাস্টিকের কনটেনার রাখা আছে: কোমর অবধি উঁচু, ঢাকনা দেওয়া, চাকা-লাগানো, কাজেই টেনে নিয়ে যাওয়া যায়৷ রঙ আলাদা হবার কারণ: কোনোটিতে শুধু রান্নাঘরের ময়লা, কোনোটাতে কাগজ, কোনোটাতে খালি হয়ে যাওয়া টিনের বাক্স ইত্যাদি, কোনোটাতে বাগানের ডালপালা, শুকনো পাতা রাখা হয়৷ সেই অনুযায়ী বর্জ্যের ‘রিসাইক্লিং' চলে৷ এ'ধরণের রিসাইক্লিং'এ জার্মানি বহুদিন ধরেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন: বাকি ইউরোপে যদি আবর্জনার ৪০ শতাংশ রিসাইক্লিং করা হয়, তো জার্মানিতে সেই অনুপাত হল ৬০ শতাংশ৷
সব ধরণের আবর্জনাই যে কিছু রিসাইক্লিং, অর্থাৎ পুনর্ব্যবহার করা চলে, এমন নয়৷ কিন্তু ফেলে দেবার মতো আবর্জনাও ইনসিনারেটরে পুড়িয়ে জ্বালানি করা যায়৷ ‘সবুজ' বর্জ্য পচিয়ে সার করা যায়৷ কাজেই সত্যিকারের বর্জ্য বলতে কিছু নেই৷ জার্মান সরকারের নতুন রিসাইক্লিং আইনের নজর কিন্তু অন্য একটি দিকে: সেটি হল বর্জ্য থেকে শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ৷
বিশ্ব অর্থনীতির আলোচনায় এখন কোন দেশে কতো সস্তায় উৎপাদন করতে পারে, সেই প্রসঙ্গই গুরুত্ব পাচ্ছে৷ কিন্তু তার পাশেই রয়েছে কাঁচামালের দাম ও সরবরাহের প্রশ্ন৷ জার্মান শিল্পে প্রতি বছর ৫০০ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়৷ মোট উৎপাদনের খরচের ৪৫ শতাংশ হল আজ কাঁচামালের দাম৷ সেক্ষেত্রে শ্রম খাতে খরচা মাত্র ১৮ শতাংশ৷ কাজেই কাঁচামালের সুযোগ্য ব্যবহার একটা আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে৷ ফেডারেল পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী কাটারিনা রাইশে বলেন:
‘‘একবিংশ শতাব্দীতে একটি দেশের পরিবেশ কি তার প্রতিযোগিতার ক্ষমতা, তার আধিপত্য কিংবা তার সমৃদ্ধি, সব কিছুই নির্ভর করবে একটি প্রশ্নের উপর: কে সবচেয়ে বুদ্ধিমান পদ্ধতিতে, দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান কাঁচামাল যতোদূর সম্ভব কম ব্যবহার করে, কম দামে ভালো উৎপাদন করতে পারে৷ আমরা সেই প্রতিযোগিতায় জিততে চাই৷''
তার একটি পন্থা হল রিসাইক্লিং৷ জার্মানির বাড়িঘরে প্রায় দশ কোটি পুরনো, অকেজো মোবাইল ফোন পড়ে রয়েছে৷ মজার কথা এই যে, সোনার খনিতে ৬০ টন মাটি কুপিয়ে যে পরিমাণ সোনা পাওয়া যায়, এক টন মোবাইল টেলিফোন থেকে কিন্তু সমপরিমাণ সোনা পাওয়া যেতে পারে৷ অথচ আজ তা বড়জোর বাড়ির আবর্জনা হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে৷
এই ‘গুপ্তধন' উদ্ধারের জন্যই জার্মান সরকারের নতুন রিসাইক্লিং আইন, যা পয়লা জুন থেকে কার্যকরী হচ্ছে৷ এমনকি সে'আইনের শীর্ষকে ‘বর্জ্য' কথাটাই রাখা হয়নি: গুপ্তধন কি বর্জ্য হতে পারে? আইনটির নাম রাখা হয়েছে ‘সঞ্চালন অর্থনীতি আইন'৷ তা'তে পণ্যের ঐ বৃত্তাকার সঞ্চালনের কথাই ভাবা হয়েছে: আবর্জনা কমাও, পণ্যের পুনর্ব্যবহার করো এবং বর্জ্য থেকে আবার পণ্য তৈরি করো৷ পরিবেশ উপমন্ত্রী রাইশে'র ভাষায়:
‘‘আবর্জনা নামক সম্পদটি উপযোগীভাবে ব্যবহার করতে হবে, যা'তে পর্যাপ্ত পরিমাণ গৌণ কাঁচামাল পাওয়া যায়৷''
গৌণ কাঁচামাল বলতে যে কাঁচামাল জার্মানিকে কিনতে কিংবা উৎপাদন করতে হয় না৷ কিন্তু কাঁচামাল কাঁচামালই৷ কাজেই বর্জ্য থেকে কাঁচামাল ইতিমধ্যেই একটি ভালো ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বর্জ্য শিল্পের আয়তন বর্তমানে ৫০ বিলিয়ন ইউরো৷ বার্লিনের আলবা গোষ্ঠী এই ‘সবুজ অর্থনীতির' প্রতিভূ৷ আলবা'র পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য এরিক শোয়াইটজার বলেন:
‘‘গতবছর আমরা ৭০ লাখ টন কাঁচামাল রিসাইকল করে শিল্পকে ফেরৎ দিয়েছি এবং এই পন্থায় ৬০ লাখ টন কার্বন নির্গমন রোধ করেছি৷ যা কিনা সমগ্র জার্মান শিল্পের কার্বন নির্গমনের প্রায় এক শতাংশ৷''
প্রতিবেদন: সাবিনে কিনকারৎস/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন