আফগানিস্তানে মার্কিন হামলায় নিহত আল-জাওয়াহিরি
২ আগস্ট ২০২২ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর ৭১ বছর বয়সি আল-জাওয়াহিরিই আল-কায়েদার নেতৃত্বে ছিলেন। ২০১১ সালে পাকিস্তানে মার্কিন অপারেশনে লাদেনের মৃত্যু হয়।
বাইডেন সোমবার ঘোষণা করেছেন, ''জঙ্গি নেতা আর নেই। ন্যায়বিচার হলো। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাদের পরিবার শান্তি পাবে।''
মার্কিন অপারেশন সম্পর্কে যা জানা গেছে
এই সপ্তাহান্তে মার্কিন অপারেশন হয়েছে। তবে আল-জাওয়াহিরির মৃত্যু সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পরই তা ঘোষণা করা হয়েছে। তাই ঘোষণায় একটু দেরি হয়েছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বাইডেন বলেছেন, অপারেশন সফল হয়েছে এবং কোনো বেসামরিক মানুষ মারা যাননি। তিনি গত সপ্তাহে এই অপারেশনের ছাড়পত্র দিয়েছিলেন এবং শনিবার তা কার্যকর হয়।
বাইডেন বলেছেন, ''আল-জাওয়াহিরি কাবুল গিয়েছিলেন তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু অপারেশনে তার পরিবারের কেউ হতাহত হয়নি।'' বাইডেনের ঘোষণা, ''যেখানেই লুকাও না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঠিক তোমায় খুঁজে বের করবে।''
বরিষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে অ্যামেরিকার সেনা চলে যাওয়ার পর আল-কায়েদা সেখানে তাদের সংগঠন আবার গড়ে তোলার কাজ শুরু করে।
ডিডাব্লিউয়ের ওয়াশিংটন প্রতিনিধি সুমি সোমাসকান্ডা বলেছেন, জাওয়াহিরির মৃত্যু নিয়ে অ্যামেরিকা উচ্ছ্বসিত, কিন্তু গত বছর যে বিশৃঙ্খলভাবে সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছিল, তা নিয়ে এখনো ক্ষোভ রয়েছে।
তার মতে, অ্যামেরিকার সেনা আফগানিস্তান থেকে চলে আসার ১১ মাসের মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী এই অপারেশনকে বড় সাফল্য হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অ্যামেরিকা আফগানিস্তান থেকে চলে এসেছে ঠিকই, কিন্তু এখনো তারা সেখানকার সুরক্ষা পরিস্থিতি নিরন্তর খতিয়ে দেখছে।
সংবাদসংস্থা এপি জানিয়েছে, যে বাড়িতে আল-জাওয়াহিরিকে মারা হয়েছে, সেটা তালেবান নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানির এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর। এই অপারেশনের ফলে অ্যামেরিকার সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে।
আফগান কর্মকর্তারা কী বলছেন?
সপ্তাহান্তে আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাবুলে ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করেছিল। তবে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ মঙ্গলবার সকালে বলেছেন, কাবুলের শেরপুর এলাকায় একটি বাড়ির উপর মার্কিন ড্রোন হামলা হয়েছে।
তালেবান সরকার একটি বিবৃতি দিয়ে মার্কিন ড্রোন হামলার নিন্দা করেছে। তারা জানিয়েছে, এই কাজ ২০২০ সালের দোহা চুক্তির বিরোধী। এই ধরনের প্রয়াস গত ২০ বছরে বারবার হয়েছে। এই প্রয়াস অ্যামেরিকা, আফগানিস্তান এবং এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলির বিরোধী।
আল-জাওয়াহিরি কে?
মিশরের এই সার্জেন ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অ্যামেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার অন্যতম চক্রান্তকারী বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
আল-জাওয়াহিরির জন্ম ১৯৫১ সালে কায়রোয় একটি উচ্চবিত্ত পরিবারে। তরুণ বয়সেই তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড নামে একটি বেআইনি সংগঠনে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যার দায়ে কয়েকশ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মধ্যে আল-জাওয়াহিরিও ছিলেন। অস্ত্র রাখার দায়ে তার তিন বছর জেল হয়। ওই ঘটনা তাকে আরো কট্টর নেতায় পরিণত করে।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আল-জাওয়াহিরির আফগানিস্তানে প্রবেশ, বিন-লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং আল-কায়েদায় যোগদান।
আফগানিস্তানের গুহায় লাদেনের চিকিৎসা আল-জাওয়াহিরিই করেন। লাদেনের মৃত্যুর পর জাওয়াহিরি আল-কায়েদাকে নেতৃত্ব দেন। তার মাথার দাম ছিল দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার।
জিএইচ/এসজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)