আফগানিস্তানকে আরো এক দশক সহায়তার প্রতিশ্রুতি
৬ ডিসেম্বর ২০১১নিরাপত্তাই বড় শঙ্কা
আফগানিস্তান সম্মেলনে আফগানদের বড় অংশগ্রহণ থাকবে৷ এটাই স্বাভাবিক৷ আফগান সরকার থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ, শিক্ষার্থী, নারী সংগঠন, এমনকি ইমাম– সব অংশ থেকেই প্রতিনিধিত্ব ছিল বন সম্মেলনে৷ ২০১৪ সালের পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে সম্মেলনে অংশ নেওয়া কাবুলের বাসিন্দা নারী নেত্রী রোনসা ডোসেই সরাসরি জানালেন, আমাদের সীমান্ত আগে নিরাপদ রাখতে হবে৷ এজন্য পাকিস্তানের সহায়তা প্রয়োজন৷ কেননা, আমরা মনে করি, পাকিস্তানই সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে৷ তাই সেদেশের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনা কঠিন৷
রোনসা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিদেশি সেনারা সরে গেলে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে৷
আফগানিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে রোনসা'র এই শঙ্কা অমূলক নয়৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণাও একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর মতে, আফগানিস্তানের সংকট নিরসনে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সমাজের দীর্ঘ সহযোগিতা৷ এই সহযোগিতা হতে হবে একইসঙ্গে নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন খাতে৷ একটি দেশের পুর্নগঠনে দশ বছর সময় যথেষ্ট নয়, জানান কৃষ্ণা৷
দশ বছর সহায়তা চান কারজাই
আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই অবশ্য আপাতত দশ বছরের সহায়তার অঙ্গীকারই চাইছেন৷ বন সম্মেলনে তিনি ২০১৪ সালের পরবর্তী এক দশক তাঁর দেশকে সহায়তার আহ্বান জানান৷ তাঁর সেই আহ্বান সাড়া দিয়েছে জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ৮৫টি দেশ এবং ১৫টি সংগঠন৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, ২০১৪ সালে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পরও আন্তর্জাতিক সমাজের কাছ থেকে অব্যাহত নির্ভরযোগ্য সহায়তা পাবে আফগানিস্তান৷ তবে ভবিষ্যত সহায়তা হবে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা এবং পুর্নমিলন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন বন সম্মেলনে জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে আফগান জনসাধারণের সঙ্গে থাকতে প্রস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷
স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান ত্যাগের পর সেদেশের নিয়ন্ত্রণ আবারো চলে যায় জঙ্গিদের হাতে৷ ক্ষমতার শীর্ষে চলে আসে তালেবান৷ ২০১৪ সালে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আইসাফ বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগের পর সেদেশে যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই বিষয়েও সতর্ক করে দিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, আফগানিস্তান আবারো সন্ত্রাসবাদ এবং অশান্তির উৎসে পরিনত হলে গোটা বিশ্বকেই এর ক্ষতি পোহাতে হবে৷
বিনিময়
দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক সহায়তার বিনিময়ে আফগানিস্তান দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই আরো জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ বন সম্মেলনের পর আফগানিস্তান ও তার আন্তর্জাতিক সহযোগীদের এক ইশতেহারে বলা হয়েছে: ‘‘বেসামরিক মানুষদের রক্ষা, আইনের শাসন জোরদার করা এবং সব রকমের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে আফগানিস্তানে প্রাধান্য দেয়া হবে৷''
আন্তর্জাতিক আফগানিস্তান সম্মেলন শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জালমাই রাসুলও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতি দেন৷ তাঁর সঙ্গে যোগ দেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে৷ সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপস্থিত না থাকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের অনেক কড়া প্রশ্নের মুখোমুখি হন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তবে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পাকিস্তান বন সম্মেলনে অংশ না নিলেও আফগানিস্তানের পুর্নগঠনে সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে৷ ফলে সেদেশের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও বন সম্মেলন সফল হয়েছে৷ অন্যদিকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাসুলি বলেন, আফগানিস্তানে শান্তি না ফিরলে পাকিস্তানেও শান্তি আসবে না৷ সুতরাং আন্তর্জাতিক সহায়তা শুধু আমাদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, পাকিস্তানের জন্যও৷
বাংলাদেশের সহায়তার আশ্বাস
ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের পুর্নগঠনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে চায় বাংলাদেশ৷ বন সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ছিলেন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান৷ আফগানিস্তানকে সহায়তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘একটি দেশকে নতুন করে গড়তে গেলে যেসব ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রয়োজন হয়, যেমন শিক্ষা, ব্যাংকিং, দূর্যোগ প্রতিরোধ -- শিক্ষা বলতে শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা নয়, প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি সম্প্রসারণ, যুব উন্নয়ন -- এইসবগুলো ক্ষেত্রেই কিন্তু বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে গত চল্লিশ বছরে৷ এগুলোর ভিত্তিতে আমাদের নিজস্ব যে অভিজ্ঞতা আছে, সেগুলো আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই৷ এসব ব্যাপারে কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে, সেটা দিতেও বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে''৷
ইরানের আপত্তি
এদিকে, ২০১৪ সালের পর আফগানিস্তানে কোন প্রকার বিদেশি সেনা উপস্থিতির বিরোধিতা করেছে ইরান৷ সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর সালেহ বন সম্মেলনে বলেন, নির্ধারিত সময়ের পর আফগানিস্তানে বিদেশি সেনার উপস্থিতি সেদেশের স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে না৷
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পর মূলত সেনা প্রশিক্ষণ এবং বিশেষ বাহিনীর জন্য কিছু বিদেশি সেনা আফগানিস্তানে মোতান রাখার বিষয়ে একটি পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে৷ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ ইরান এধরনের কোন উদ্যোগের বিরোধী৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক