আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান
৪ জানুয়ারি ২০১৪বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান নির্বাচনের আগের দিন শনিবার এক ভিডিও বার্তায় দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘কারোর নির্দেশের অপেক্ষা না করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে হবে৷ ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে আন্দোলনে৷''
বর্তমানে লন্ডনে বসবাসরত এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘‘দেশ আজ এক কারাগারে পরিণত হয়েছে৷ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নাই৷ কেবল আছে ভীতি আর আতঙ্ক৷ জনবিচ্ছিন্ন সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়৷ তাই তারা (ক্ষমতাসীনরা) দেশের মানুষের ইচ্ছাকে পদদলিত করে একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে বাকশাল কায়েম করতে চাইছে৷''
তারেক রহমান বলেন, ‘‘দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে৷'' তিনি দেশবাসীকে এই নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহতের আহ্বান জানান৷
গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থানরত তারেক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘‘এই সরকার নিজেদের স্বার্থে সংবিধান বদলে ফেলেছে৷ এখন সংবিধানের দোহাই দিয়ে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করছে৷''
সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান তারেক জিয়া৷ তিনি মনে করেন, ১৮ দলের চলমান আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে৷
এদিকে, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারেক রহমানের এই ভিডিও বার্তা চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে৷ নেতা-কর্মীরা নতুনভাবে উজ্জীবিত হবেন৷ রবিবারের এক তরফা নির্বাচনে ভোট দেবে না দেশের মানুষ৷''
তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, ‘‘কোনোভাবেই জ্বালাও, পোড়াও ও হামলা চালিয়ে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না৷ নির্বাচন হবেই, মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে৷ বিএনপির নির্বাচন প্রতিহত করার কোনো শক্তি নাই৷''
তিনি বলেন, ‘‘রবিবারের নির্বাচনের পর নতুন সরকার আসবে৷ আর বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হবে ২০১৯ সালে৷''
সারাদেশে সহিংসতা, পুড়ছে নতুন বই
নির্বাচনের আগের দিন সারাদেশে সহিংসতা নতুন মাত্রা পেয়েছে৷ নির্বাচন বিরোধীরা যানবাহনে হামলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোট কেন্দ্রে হামলা চালাচ্ছে ও আগুন দিচ্ছে৷ আর ভোট কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে - বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে - হওয়ায় কয়েক দিন আগে দেয়া সরকারের বিনামূল্যের বই পুড়ছে দেদারছে৷ এ পর্যন্ত দেশের ২০টি জেলার অর্ধশত ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ আগুনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন বছরের বইও পুড়ে গেছে৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজধানীর সব ভোট কেন্দ্র জ্বালিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল দুর্বৃত্তরা৷ তারা আগে থেকেই গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে ভোটকেন্দ্রের নিরপত্তা জোরদার করেন৷ পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও সারা দেশের ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা আরো বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
উদ্বিগ্ন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
এদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ নির্বাচনের আগে ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া এবং সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, যতদূর সম্ভব এসব ভোট কেন্দ্র মেরামত করা হচ্ছে৷ রবিবারে ভোটগ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না৷
নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সহিংসতা হচ্ছে তার দায় কে নেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘‘কারা সহিংসতা করছে তা দেশবাসী দেখছে৷ রবিবারের নির্বাচন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হবে৷''
উল্লেখ্য রবিবারের নির্বাচনে ৩৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ১২টি দল অংশ নিচ্ছে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ২৫টি নিবন্ধিত দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে৷ নির্বাচনের আগেই ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ তাই নির্বাচন হচ্ছে ১৪৭টি আসনে৷