নির্বাচনের পর কি হবে?
৩ জানুয়ারি ২০১৪বিরোধী দল বিহীন নির্বাচনের আর মাত্র এক দিন বাকি৷ এই নির্বাচন প্রতিহত করতে অবরোধ যে কাজে আসছে না, তা বুঝে গেছে বিএনপি৷ তাই তারা এখন জেলায় জেলায় হরতাল ডাকছে নির্বাচন প্রতিহত করতে৷ এরই মধ্যে নির্বাচনের দিন ৫ই জানুয়ারি পাঁচটি জেলায় হরতাল ডাকা হয়েছে৷ জানা গেছে, যেসব জেলায় নির্বাচন হবে সেসব জেলায় শনিবারের মধ্যেই হরতালের আহ্বান করবে বিরোধী দল৷
এদিকে নির্বাচনের আগে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়েছে৷ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বাসে-ট্রাকে আগুন ও পেট্রোল বোমা ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে৷ দিনাজপুরে একটি ট্রাকে পেট্রোল বোমা হামলায় দু'জন নিহত হয়েছেন৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কোনো রাজনৈতিক দল যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি৷ এটা ভালো লক্ষণ নয় বলে মনে করে দেশটি৷ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস উইং-এর মুখপাত্র মারি হারফ নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, সহিংসতা কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷ এছাড়া, নির্বাচনের পরও সহিংসতা অব্যাহত থাকার আশঙ্কায় বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সেনা অবস্থান দীর্ঘায়িত করতে চায়৷ ৯ই জানুয়ারির পর সেনা প্রত্যাহারের কথা থাকলেও তাদের আরো বেশি সময় রাখা হতে পারে৷
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশে সহিংসতা আরো বাড়বে৷ কারণ বিরোধী দল তখন আরো মরিয়া হয়ে উঠবে খুব দ্রুত আরেকটি নির্বাচনের জন্য৷ তিনি বলেন, সরকার এখন একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হবে বললেও সেই নির্বাচন কবে হবে, তা বলছে না৷ ৫ই জানুয়ারির পর নতুন সরকার যদি বলে যে তারা পাঁচ বছর পরই নির্বাচন দেবে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না৷ তবে তিনি মনে করেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর সহিংসতার পাশাপাশি দ্রুত সব দলকে নিয়ে আরেকটি নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ সৃষ্টি করবে৷ বলা বাহুল্য, সেই চাপে কাজ না হলে আন্তর্জাতিক অসহযোগিতার মুখে পড়তে পারে সরকার৷ কারণ তারা এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য মনে করে না৷ তাই আন্তর্জাতিক সমাজ নতুন সরকারকে কতটুকু গ্রহণ করবে, তা এখন দেখার বিষয়৷
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ বা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ-ও মনে করেন যে, নতুন সরকার পাঁচ বছরই থাকতে চাইবে৷ আর বিরোধী দল তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারবে বলে তিনি মনে করেন না৷ তাঁর মতে, নতুন সরকার শপথ নেয়ার পর সহিংসতা কমে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে৷ এ রকম ভাবার কারণ জানতে চাইলে ড. কলিমুল্লাহ বলেন, বিরোধী দল কার্যকর রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে৷ ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক সক্ষমতা প্রমাণ করতে৷ বিএনপি এবং জামায়াতের কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীরা মাঠে না থেকে সহিংসতার মাধ্যমে সফল হতে চেয়েছে৷ যা তাদের নেতৃত্বের ব্যর্থতার একটা বড় প্রমাণ৷ এই নেতৃত্ব নির্বাচনের পর তাই নতুন করে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে তিনি মনে করেন না৷ তিনি উল্লেখ করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছে৷
বর্তমান ৯ম জাতীয় সংসদের মেয়াদ আছে ২৪শে জানুয়ারি পর্যন্ত৷ তাই ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন হলেও নতুন সরকার হঠিত হবে ২রা জানুয়ারি পর৷ ড. কলিমুল্লাহ মনে করেন, ২৪ জানুযারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখতে পারে৷ তবে এরপর নতুন সরকার কোন দিকে যায়, তা দেখার বিষয়৷