আন্তর্জাতিক সমর্থন ধরে রাখতে চায় ওআইসি
৭ মে ২০১৮সংস্থার মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমেদ আল-ওথাইমিন একে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ তিনি বলেন, নতুন এই কমিটি ‘‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের ধরতে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমর্থন জোগাড় ও সমন্বয়ের কাজ করবে৷’’
ওআইসি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমাদের (রোহিঙ্গা) ভাই ও বোনদের সমস্যার সমাধানে এটি অন্যতম একটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ৷’’
সমস্যার সমাধানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও সহায়তা চেয়েছেন৷ ‘‘এটি ধর্মীয় বিষয় নয়৷ এটি আমাদের ভাই ও বোনদের মৌলিক মানবাধিকারের বিষয়,’’ বলেন তিনি৷
এদিকে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নির্যাতন ‘আন্তর্জাতিক আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন’ বলে মনে করছে ওআইসি৷ এছাড়া এই নিপীড়নের ঘটনা ‘জাতিগত নিধন’ বলেও জানিয়েছে ৫৩টি ইসলামি রাষ্ট্রের ঐ সংগঠন৷ এর আগে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রও ‘জাতিগত নিধন’ শব্দযুগল ব্যবহার করেছে৷
এর আগে শুক্রবার ওআইসি-র একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে দেখেছে৷ তাঁরা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন৷
পাকিস্তানের প্রতিবাদ
এদিকে, সম্মেলনে যে ‘ঢাকা ডিক্লারেশন’ ঘোষিত হয়েছে তা প্রকাশের আগে বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেনি বলে সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাই কমিশন৷ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই ঢাকা বিবৃতিটি প্রকাশ করে বলে অভিযোগ তাদের৷ ‘‘এতে (ঢাকা ডিক্লারেশন) শুধু আয়োজক দেশের বক্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে৷ এবং সেজন্য এটা তাদের দায়িত্বে প্রকাশিত হয়েছে, ফলে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি,’’ দাবি পাকিস্তান হাই কমিশনের৷
তবে তাদের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম৷ ওআইসি সচিবালয়ের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া কোনো কিছু করা হয়নি৷ ‘‘ওআইসি সচিবালয়ের নির্দেশনা ও পরামর্শ মেনে সবকিছু করা হয়েছে,’’ বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন তিনি৷
ওআইসির সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি কারও ক্ষোভ থাকে তাহলে তাদের প্রথম ওআইসি সচিবালয়কে জানানো উচিত৷’’
মিয়ানমার সেনাপ্রধানের বক্তব্য
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি মিয়ানমার সফর করেছে৷ সেই সময় দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং লায়িং-এর সঙ্গেও বৈঠক করে দলটি৷ সেই সময় সেনাপ্রধানের দেয়া একটি বক্তব্যের অংশ শনিবার তাঁর ফেসবুক পাতায় প্রকাশ করা হয়৷ এতে বলা হয়, ফেরত আসা রোহিঙ্গারা যদি তাদের জন্য নির্মিত মডেল গ্রামে থাকে, তাহলে তারা নিরাপদ থাকবে৷
সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকতে বাধ্য করার যে আশংকা করা হয়েছিল, সেটিই আবার নতুনভাবে উঠে এলো বলে মনে করছে বার্তা সংস্থা এএফপি৷
সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্য রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে সম্বোধন করেছেন৷ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে, তা ‘অতিরঞ্জিত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ ‘‘বাঙালিরা কখনও বলবে না যে, তারা খুশি হয়ে সেখানে (বাংলাদেশে) গিয়েছে৷ তারা যদি নিপীড়ন আর কষ্টের কথা বলে তাহলেই শুধু তারা সেখানে সমবেদনা পাবে,’’ বলেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, এপি)