1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুধুই কাজের প্রচারে কেজরিওয়ালের আপ

গৌতম হোড়
২৩ জানুয়ারি ২০২০

কোনো সমালোচনা নেই৷ না নরেন্দ্র মোদীর, না সোনিয়া গান্ধীর৷ গত পাঁচ বছরে নিজেদের করা কাজের বিবরণ দিয়েই ভোট চাইছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ৷ প্রায় পাঁচ দশক পর এরকম ইতিবাচক প্রচার দেখছে ভারত৷

https://p.dw.com/p/3WgXF
ছবি: Reuters/A. Mukherjee

লোকসভা হোক বা বিধানসভা৷ প্রচার শুরুর পরই ভারতে সংবাদমাধ্যমের প্রিয় হেডলাইন হল, ব্যক্তিগত আক্রমণের নয়া নজির গড়েছে রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিকরা৷ সেই জায়গা থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে এল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ৷ এ বার দিল্লির নির্বাচনে তাদের প্রচারে কোনও সমালোচনা নেই, আছে কেবল নিজেদের সাফল্যের কথা৷ আছে একটাই আবেদন, 'যদি আপনাদের মনে হয়, সরকার কাজ করেছে, তা হলে ভোট দিন, না হলে ভোট দেবেন না৷' এই সাহসী উচ্চারণ দিয়েই আবার রাজধানী দখলের লড়াইয়ে নেমেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ আর দলের নেতারা সেই প্রচার পরিকল্পনা মানছেন অক্ষরে অক্ষরে৷ 

চিত্তরঞ্জন পার্কের দু নম্বর মার্কেটে প্রচার করছিলেন দিল্লির উপ মুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়া৷ সামনে কয়োকশো  লোক৷ মার্কেটের দোতলা, তিনতলা থেকে উঁকি মারছেন, হাত নাড়ছেন অনেকে৷ সেখানে মিনিট পঁচিশের ভাষণে একবারের জন্যও নেতিবাচক সমালোচনায় গেলেন না কেজরিওয়ালের ডানহাত বলে পরিচিত মনীষ৷ শুধু তুলে ধরলেন সাফল্যের কথা। জল বিনা পয়সায় দেওয়া হয়৷ বিদ্যুতের খরচ ২০০ ইউনিটের মধ্যে রাখলে পয়সা দিতে হয় না৷ প্রতিটি মহল্লায় ক্লিনিক, সেখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা, রাস্তায় সিসিটিভি। সেই সঙ্গে সরকারি স্কুলকে পাবলিক স্কুলের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া৷ মনীষের দাবি, ''অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান সহ বিভিন্ন দেশ থেকে লোকেরা, গবেষকরা  দিল্লির সরকারি স্কুলে শিক্ষার মডেল দেখতে আসছেন৷''

Indien | stellvertetender Ministerpräsident Manish Sisodia bei Wahlkampfveranstaltung
ছবি: DW/G. Hore

প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায়ের মতে, এই ধরনের প্রচারই হওয়া উচিত৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''সংসদীয় গণতন্ত্রের মাতৃভূমি ইংল্যান্ডেও এই ধারা বহমান ছিল৷ ষাটের দশকে ছবিটা বদলে গেল৷ ১৯৬৩ সালে হ্যারল্ড উইলসন ছিলেন লেবার পার্টির নেতা৷ পাইপ খেতেন৷ একদিন ভুল করে পাইপ পকেটে রেখে দেওয়ার জন্য তা পুড়ে যায়৷ পরের দিন সব পত্রিকায় কনজারভেটিভ পার্টি বিজ্ঞাপন দিল, লেবারকে ভোট দিলে আপনাদের পকেটও এইভাবে পুড়বে বা কাটা যাবে৷ পুরোপুরি ব্যক্তিগত আক্রমণ ও অসৌজন্যের অভিব্যক্তি৷ আমাদের দেশে গত শতকের সত্তর দশকের আগে পর্যন্ত কাজের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া হত৷ সত্তর দশক থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু হল৷ যেমন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং প্রচারে বলতেন, তাঁর কাছে বফর্স নিয়ে সব তথ্য আছে, সরকার গড়লেই সব ফাঁস করে দেবেন৷ যেটা কখনই তিনি করতে পারেননি৷ কেজরিওয়াল এখন নিজের কাজ নিয়ে ভোটে যাচ্ছেন৷ কেজরিওয়াল যদি এটাকে নির্বাচনী কৌশল না করে নির্বাচনী আদর্শে পরিণত করেন, তা হলে আমি তাঁকে কুর্নিশ জানাব৷''

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেজরিওয়ালের কাছে প্রচার করার মতো বেশ কয়েকটি সাফল্য আছে৷ আর নিছক মোদী বা কংগ্রেসকে আক্রমণ কর যে কোনও লাভ নেই সেটাও তিনি অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝেছেন৷ তাই  আক্রমণ নয়, আবেগ নয়, কোনও সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা নয়, কাজ দিয়ে লোকের মন জয় করতে চইছেন তিনি৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''যাঁর বলার মতো কথা আছে, তিনি কেন নোংরামিতে ঢুকবেন? তাঁর তো ভালো ব্যালান্স শিট আছে৷ তিনি যে কাজ করেছেন তা চোখে দেখা যায়, ছুঁয়ে বোঝা যায়, তাই লোকের কাছে কাজগুলো সহজে পৌঁছতে পেরেছে৷''

বিজেপি এ বার দিল্লিতে ভাবী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাউকে তুলে ধরেনি৷ বরং দলের তরফে বলা হয়েছে, তাঁরা মোদীকে সামনে রেখেই লড়বেন৷ তা হলে কি দিল্লির ভোটযুদ্ধকে মোদী বনাম কেজরিওয়াল-এ পরিণত না করার জন্যই এই কৌশল নিয়েছে আপ? শুভাশিস নৈত্রর মতে, ''এই মুহূর্তে মোদী কিছুটা অস্বস্তিতে। অর্থনীতি নিয়ে, সিএএ নিয়ে৷ তাই এখন কেজরিওয়ালের এই কৌশল সঠিক৷ তিনি কেন মোদীর সঙ্গে ব্যক্তিগত লড়াইয়ে যাবেন৷ বরং তিনি দেখাতে চাইবেন, একটা সরকার সৎভাবে কাজ করছে ও নিষ্কন্টকভাবে চলছে৷ সেটা একটা বিকল্পের সন্ধান দেয়৷'' অমল মুখোপাধ্যায় মনে করছেন, ''বিজেপি এখন দিল্লি দখল করতে চাইছে। স্বভাবতই তারা ওই কৌশল নেবে৷ কিন্তু কেজরিওয়ালের প্রচার পরিকল্পনা খুবই কার্যকরি হবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷''

যদি এই প্রচার ধরে রখতে পারেন এবং পরেও তা অনুসরণ করেন, তা হলে আরও একটা কৃতিত্বের অধিকারী হতে পারেন কেজরিওয়াল৷ আবার পরিচ্ছন্ন, ইতিবাচক প্রচার ফিরিয়ে আনার কৃতিত্ব৷