আফগানিস্তান
২ ডিসেম্বর ২০১২নির্যাতন, নিপীড়নের অপরাধে ফাঁসি – এটা কি শাস্তি হয়? ওস্তাদ শরাফুদ্দীন আহমেদ মনে করেন, হয়, কারণ, শারীরিক নির্যাতন বা যৌন নিপীড়নের শিকার যেখানে অবোধ শিশু সেখানে শাস্তি অনেক কঠিন হওয়া উচিত এবং এ যুক্তিতেই তিনি বলছেন, এমন ঘটনায় দোষী ব্যাক্তির কঠোরতম সাজাই হওয়া উচিত৷
সমস্যাসঙ্কুল দেশ আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ৷ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভীষণ খারাপ৷ যে দেশে যুদ্ধহীন, রক্তপাতহীন, শান্তিপূর্ণ দিন শেষ কবে এসেছিল বলা কঠিন সে দেশের অর্থনীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব একটা ভালো হওয়ার কথাও নয়৷ তাই বলে শিশুদের জীবনও এত দুর্বিসহ হবে?
আফগানিস্তানে ৩ বছরের শিশুকেও হতে হয়েছে যৌন নিপীড়নের শিকার৷ ঘরে খাবার নেই, তাই ওই বয়সের শিশুদেরও নামতে হয় কাজে৷ ওদের কর্মস্থল যেন নির্যাতক, নিপীড়কদেরই বিচরণভূমি৷ তাই অহরহ ঘটছে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ ক‘দিন আগে আন্তর্জাতিক শিশু দিবসে আফগান সরকারও বলেছে দেশের অধিকাংশ শিশু বেশ সঙ্কটে রয়েছে৷
ক‘দিন আগে পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করেছে পাশের বাড়ির ২২ বছরের এক তরুণ৷ তাখার রাজ্যে এ নিয়ে খুব তোলপাড় হলো কয়েকদিন৷ তারপর সব ঠান্ডা৷ অপরাধী ধরাই পড়েনি সাজা হওয়া তো দূরের কথা৷ শিশু নির্যাতন, নিপীড়ন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও কমবেশি হয়৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটনা জানাজানি হলে অপরাধী ধরা পড়ে এবং তার বিচারও হয়৷ কিন্তু আফগানিস্তানে নির্যাতিত শিশুর হয়ে বিচার চাওয়াও বিরল ঘটনা৷ বিচারই হয় না, তো চেয়ে কী লাভ - ভুক্তভোগীরা এই ভেবেই সম্ভবত নিরব থাকেন৷
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ওস্তাদ শরাফুদ্দীন আহমেদ এ অবস্থার পরিবর্তন চান৷ তিনি মনে করেন শ্রম ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় তৎপর হলেই কেবল সেটা কিছুটা সম্ভব৷ অপরাধীর কঠোর শাস্তির ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি৷ তাঁর কাছে শিশুদের যৌন নিপীড়নের শাস্তি তাই মৃত্যুদণ্ড৷
আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হেরাতে এ বছর ৭০টি শিশু নিপীড়নের অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ৷ অভিযোগ করা হয়নি এমন ঘটনা যে তার চেয়ে অনেক বেশি সেটা অবশ্য বলাই বাহুল্য৷ আফগানিস্তানের বেসরকারি সংস্থা ‘তাঘির কারওয়ান'-এর মোহাম্মদ রহিম বেশ হতাশা নিয়েই বললেন, যার বিরুদ্ধেই শিশু নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাকে কঠোর শাস্তি দিতেই হবে, নইলে সমাজে এসব বিকৃত রুচির লোকের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে৷
কিন্তু সেটা তো হতে দেয়া যায়না৷ তাই কঠোর ব্যবস্থার দিকে যাওয়া ছাড়া উপায় কী? আফগান সরকার সম্প্রতি এক ঘোষণায় জানিয়েছে অপরাধ, বিশেষ করে শিশু নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে খুব কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আলী এফতেখারি অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ের দিকে নজর দেয়াও খুব দরকার মনে করেন৷ তাঁর মতে এ ক্ষেত্রে শিক্ষার প্রসারটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ মানুষ লেখা-পড়া শিখলে জীবন যাপনের মান উন্নত করতে পারবে৷ স্বচ্ছলতা এলে সন্তানদেরও তাঁরা সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে পারবেন৷ তখন আর তিন বছরের শিশুকে পেটের জ্বালা জুড়াতে আয়-রোজগারে নামতে হবে না, বাড়ির বাইরে নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনাও তখন কমবে৷