আইনের কড়াকড়ি সত্ত্বেও ভারতে শিশুশ্রম ব্যাপক
১৩ জুন ২০১২দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল একটি কাপড়ের কলে হানা দিয়ে ২৬ জন শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করে৷ কিছু পালিয়ে যায়৷ শিশু শ্রমিক নিয়োগের অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচ জনকে৷ শুধু দিল্লিতেই আছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার শিশু শ্রমিক৷ ভারতে বিভিন্ন জায়গায় এদের লাগানো হয়, কার্পেট শিল্পে, জরির কাজে, বিড়ি তৈরি ও পাথর ভাঙ্গার কাজে, হোটেলে, রেস্তোঁরায়, ওয়েল্ডিং ও অ্যাসিড দিয়ে ধাতু পালিশের কাজে এবং গৃহস্থ বাড়ির ঝি-চাকরের কাজে৷ পারিশ্রমিক নগণ্য৷ কোথাও কোথাও স্রেফ খাওয়া ও মাথা গোঁজার বিনিময়ে৷
এর কারণ কী শুধুই দারিদ্র? দারিদ্র, ক্ষুধা, সম্বলহীনতাই এর আসল কারণ বলে মানাতে রাজি নয় শিশু সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা এনজিও'র কর্মকর্তা দীপক কালরা৷ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুর অভিভাবকরাই বাচ্চাদের কাজের জন্য পাঠায়৷ দিল্লির কাছে গ্রেস কেয়ার হোমের কর্মকর্তা জর্জ ম্যাথু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে সেকথাই বললেন ডয়চে ভেলেকে৷ বললেন, ‘‘আমাদের এখানে একটি বাচ্চা আছে৷ গ্রিল তৈরির কারখানায় সে ওয়েল্ডিং-এর কাজ করতো৷ পড়াশুনা বন্ধ রেখে তার বাবাই তাকে এই কাজ করতে পাঠায়৷ শিশুশ্রম শুরু হয় বাড়ি থেকেই৷ স্বামী মারা গেলে কোনো নারী দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে, দ্বিতীয় স্বামী মহিলার আগের পক্ষের বাচ্চাদের ওপর নির্যাতন করে৷ তখন তারা বাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য হয়৷ আর শহরে এসে যোগ দেয় শিশু শ্রমিকের দলে৷''
কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৯৮৬ সালের শিশুশ্রম আইন যথেষ্ট নয়৷ এর সংশোধন দরকার৷ কোনো কোনো স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ব্যাপক শিশু শ্রমের জন্য দায়ী করে সরকারের সদিচ্ছার অভাবকেই৷ এই জটিল সমস্যার বিহিত করতে দরকার বহুমুখী কর্মপন্থা৷
ভিন রাজ্য থেকে আসা শিশু শ্রমিকদের উদ্ধারের পর তাদের ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে৷ কিন্তু গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে যায় সমন্বয়ের অভাব৷ পরিবারের হাতে তুলে দেবার অর্থ পুনর্বাসন নয়৷ গ্রেস কেয়ার হোমের জর্জ ম্যাথু মনে করেন, ‘‘পথ শিশুদের প্রথমে দরকার আশ্রয়৷ সরকারের তরফে সেই উদ্যোগ নিতে হবে৷ তাদের পাঠাতে হবে পুনর্বাসন কেন্দ্রে৷ সেখানে লেখাপড়া ও হাতের কাজ শিখিয়ে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলতে হবে তাদের৷''
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ