অপ্রত্যাশিত সন্তান
৫ জুন ২০১৩শুরুর দিককার কথা
জার্মানিতে এই বেবিক্লাপে ব্যবস্থার শুরু প্রায় ১৪ বছর আগে৷ উদ্দেশ্য – যেসব মা কোনো কারণে তাঁদের সন্তান পালন করতে চান না, তাঁরা চাইলে জন্মের পরপরই বাচ্চাকে বেবিক্লাপেতে রেখে আসতে পারেন৷ এই বাক্সে নবজাতক রাখার সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বেজে ওঠে৷ তখন সেবিকারা দু-তিন মিনিটের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়ে বাচ্চার দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে নেয়৷ আর ঐটুকু সময়ের মধ্যে মা-ও বাচ্চাকে রেখে চোখের আড়ালে চলে যেতে পারে৷
এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আট সপ্তাহ পর্যন্ত নবজাতকের দেখভাল করে৷ এই সময়ের মধ্যে কোনো মা তাঁর ইচ্ছা পরিবর্তন করে সন্তানকে ফিরিয়ে নিতে না আসলে, দত্তক নিতে আগ্রহী কোনো পরিবারের কাছে বাচ্চাকে দিয়ে দেয়া হয়৷ বার্লিনের ঐ হাসপাতালে এভাবে গত ১৩ বছরে ২০টিরও বেশি শিশু রেখে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷
জার্মানিতে এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর অন্যান্য দেশেও সেটা শুরু হয়েছে৷ তবে ইতিহাস বলছে, মধ্যযুগেও এমন ব্যবস্থা ছিল৷ ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সেটা বলবৎ ছিল৷
সমালোচনা
জার্মানির চার্চগুলো এই ব্যবস্থা সমর্থন করলেও এর বিরোধী অনেক পক্ষ রয়েছে৷ যেমন ‘টের ডেজম' নামক একটি বেসরকারি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে বেবিক্লাপের বিরোধী৷ তাদের মতে, এই ব্যবস্থা নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে পারেনি৷ তাদের দাবি, যেসব মা নবজাতককে পরিহার করার মতো চিন্তা করতে পারেন, তাঁরা যে মানসিক অবস্থায় ঐ চিন্তাটা করতে চান, তখন বেবিক্লাপে খোঁজার মতো অবস্থা তাঁদের থাকে না৷
জাতিসংঘও গত বছর এই ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেছিল যে, এর মাধ্যমে শিশুদের তাদের ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে৷
খসড়া আইনের প্রস্তাব
এসব সমালোচনার প্রেক্ষিতে জার্মান সরকার বেবিক্লাপের পরিবর্তে অন্য আরেকটি ব্যবস্থার প্রস্তাব করে নতুন একটি আইনের খসড়া উপস্থাপন করেছে৷ এর ফলে যেসব মা অপ্রত্যাশিত বাচ্চা লালনপালন করতে চান না, তাঁরা চাইলে তাঁদের পরিচয় গোপন রেখে হাসপাতালেই সন্তান প্রসব করতে পারবেন৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঐ মা-র নাম ১৬ বছর পর্যন্ত গোপন রাখবে৷ এরপর সন্তান চাইলে হাসপাতাল থেকে তার আসল মায়ের পরিচয় জানতে পারবে৷
বিতর্ক
তবে নতুন এই আইনের খসড়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ পক্ষের লোকজনের বক্তব্য, এর ফলে মায়ের গোপনীয়তাও বজায় থাকবে৷ আর সন্তানও চাইলে তার পরিচয় জানতে পারবে৷ কিন্তু বেবিক্লাপে ব্যবস্থার যাঁরা সমর্থক তাঁদের মতে, কোথা থেকে এসেছে সেটা জানার চেয়ে বাঁচার অধিকারটাই বড়৷
নতুন এই আইন বাস্তবায়নের আগে অবশ্য তা সংসদে পাস হতে হবে৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি)