৭৫তম কান উৎসবে বাংলাদেশ
কান উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। দক্ষিণ ফ্রান্সের উপকূলীয় শহর কানে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের এক ঝলকে দেখে নিন।
পিলারে বঙ্গবন্ধু
ভূমধ্যসাগরের তীরে কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্ম অংশের সামনে বিশাল দুটি পিলারে শোভা পাচ্ছে ‘মুজিব: দ্য মেকিং অব আ নেশন’ ছবির পোস্টার। ভবনটিতে ঢোকার মুহূর্তে চোখে পড়ে এটি। পিলার ছাড়াও দুটি স্ট্যান্ডে ছবিটির পোস্টার রাখা হয়েছে।
মুজিব: দ্য মেকিং অব আ নেশন
কানসৈকতে ভারতীয় প্যাভিলিয়নে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক ‘মুজিব: দ্য মেকিং অব আ নেশন’-এর ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ট্রেলার উন্মোচন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ছিলেন ছবিটির প্রধান দুই অভিনয়শিল্পী আরিফিন শুভ ও নুসরাত ইমরোজ তিশা, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হয়েছে ছবিটি।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্টল
কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্ম ঘুরে দেখেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি আগামী বছরের কান উৎসবের বাণিজ্যিক শাখায় বাংলাদেশের একটি স্টল রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ওপরের ছবিতে তিশা এবং আরিফিন শুভর সঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ৷
অনন্ত-বর্ষার প্রচারণা
তারকা দম্পতি অনন্ত জলিল ও বর্ষা তাদের নতুন ছবি ‘দিন- দ্য ডে’ এবং ‘নেত্রী: দ্য লিডার’-এর প্রচার করতে কান শহরে এসেছিলেন। মার্শে দ্যু ফিল্মে আফ্রিকান প্যাভিলিয়নে তারা বিভিন্ন দেশের ফিল্ম প্রফেশনাল ও সংবাদকর্মীদের ছবি দুটির ট্রেলার ও গান দেখিয়েছেন। এছাড়া ইরান, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পরিবেশনা সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বেশকিছু বৈঠকও করেছেন।
নুহাশ হুমায়ূনের ‘মশারি’
মার্শে দ্যু ফিল্মের সঙ্গে অংশীদারিত্বে তৃতীয়বারের মতো ‘ফ্যান্টাস্টিক সেভেন’ ইভেন্ট আয়োজন করেছে স্প্যানিশ উৎসব সিটজেস-ইন্টারন্যাশনাল ফ্যান্টাস্টিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এতে স্থান পেয়েছে নুহাশ হুমায়ূনের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘মশারি’। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল ও নুহাশের ভাগ্নী অনোরা।
বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আরো বেশি দেখার প্রত্যাশা
২০০২ সালের উৎসবে বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে ফিপরেস্কির বিচারক হন আহমেদ মুজতবা জামাল। ২০০৫ ও ২০০৯ সালেও ফিপরেস্কির বিচারক হয়েছিলেন তিনি। তার মতে, ‘‘কানে আমাদের ফিল্মমেকার, অভিনয়শিল্পী, সংবাদকর্মী, চলচ্চিত্রকর্মী এবং ফিল্ম স্টুডেন্টদের আরো বেশি আসা প্রয়োজন। তাদের জানা দরকার, ওয়ার্ল্ড সিনেমা কোথায় আছে। কানের মার্শে দ্যু ফিল্মে বাংলাদেশের স্টল থাকলে অংশগ্রহণ নিশ্চয়ই বাড়বে। ’
আশাবাদী সামিয়া জামান
ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশ (আইএফআইবি)-র সভাপতি সামিয়া জামান বললেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর বায়োপিককে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ থেকে এবার অনেকে এসেছেন। কান উৎসবকে ভালোভাবে চেনা ও জানার দারুণ সুযোগ পেয়েছেন তারা। সরকারি কর্তারাও এসেছিলেন। ভবিষ্যতে এর সুফল দেখার আশা করছি।’’
কান উৎসবে বাংলাদেশের বিচারক
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকস (ফিপরেস্কি)-এর বিচারক হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু। কান উৎসবের প্যারালাল সেকশন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকে নির্বাচিত ছবিগুলো বিচার করছেন তিনি। তার সঙ্গে আছেন বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র সমালোচকরা।
ফারুকীর আড্ডা
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার মেয়ে ইলহাম নুসরাত ফারুকীকে সঙ্গ দিচ্ছেন কান শহরে। তার পরিচালিত ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ ছবির অভিনেতা ও সহ-প্রযোজক নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি কানে এসেছেন। তার সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন ফারুকী। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ফিল্ম প্রফেশনালদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
‘বাংলাদেশের দর্শকদের ওটিটিতে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র দেখাতে চাই’
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হিসেবে মার্শে দ্যু ফিল্মে এসেছেন নির্মাতা রেদওয়ান রনি। তার কথায়, ‘‘কানে আসার স্বপ্ন সব চলচ্চিত্র নির্মাতারই থাকে। এখানে বিভিন্ন দেশের পরিবেশনা সংস্থা আছে। তারা নিজেদের ছবি পরিবেশনার চেষ্টা করছে। তাদের সঙ্গে আমার সংযোগ ঘটেছে। চরকিতে বাংলাদেশের দর্শকদের বাংলা ভাষায় দেখাতে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র নিতে পারি কিনা সেই চেষ্টা করছি। অগ্রগতিটা বেশ ভালো।’’
কান উৎসবে ‘সাফা’
পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘সাফা’র সহ-বিনিয়োগকারী খুঁজতে কানে এসেছেন মাকসুদ হোসেন। গত বছর গোয়া ফিল্ম বাজারের কো-প্রোডাকশন মার্কেটে এটি আমন্ত্রিত হয়। সেই সূত্রে হাই-পারফর্মিং প্রজেক্ট হিসেবে মার্শে দ্যু ফিল্মে রয়েছে ‘সাফা’।
বাঙালি আইরিশ অভিনেত্রী
বাংলাদেশের মেয়ে মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি থাকেন আয়ারল্যান্ডে। তিনি এখন আইরিশ ফিল্ম অ্যান্ড অ্যাকাডেমির সদস্য। কানে আইরিশ অভিনেত্রী হিসেবে আয়ারল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। প্রযোজক ও পরিবেশকদের সঙ্গে বৈঠক করে সময় কাটছে তার। কানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়ছে দেখে আপ্লুত প্রিয়তি, ‘‘‘কানসৈকতে বাংলাদেশের কাউকে পেলে খুব ভালো লাগে। কানের যেকোনো জায়গায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আমাকে আনন্দিত করে।’’
সাংবাদিকদের ব্যস্ততা
কান চলচ্চিত্র উৎসবের কথা দর্শকদের জানাতে নিরলস কাজ করছেন বাংলাদেশ থেকে আসা সংবাদকর্মীরা। প্রতিদিন এই আয়োজনের হরেক রকম খবর জানাচ্ছেন তারা। দিনভর সংবাদ সম্মেলন, লেখালেখি, গবেষণা, বাজার ঘুরে দেখা- সব মিলিয়ে কান উৎসবে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা৷