ভারতীয়রা ৫০০০ বছর আগে বিমান চালাত
২৩ নভেম্বর ২০১৪কাউন্সিল প্রধান অধ্যাপক ওয়াই সুদর্শন রাও এ সবের উদাহরণ দিতে গিয়ে ভারতীয় মহাকাব্যের উল্লেখ করেছেন৷ বলেছেন, প্রাচীন পৃথিবীকে বুঝতে হলে হিন্দু মহাকাব্যই যথেষ্ট৷ এর জন্য কোনো গবেষণা বা তথ্য প্রমাণের উপর নির্ভর করার দরকার নেই৷ তাঁর এই মন্তব্যে ইতিহাসবিদদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷
ভারতীয় জনতা দল সবশেষ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর সরকার গঠন করলে রাওকে এই গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত করা হয়৷ আধুনিক ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা মনোভাবকে আঙুল দেখিয়ে যেন হিন্দু মূল্যবোধ ও পৌরাণিক কাহিনি থেকে শিক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহিত করছেন বিজেপি নেতারা৷
এক সাক্ষাৎকারে রাও মহাভারত ও রামায়ণ থেকে কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরে সেখানে প্রেম ও যুদ্ধ, সত্য-মিথ্যা, নানা অস্ত্রের কথা উল্লেখ করেন৷ হিন্দু মহাকাব্যগুলোর বয়স নিয়ে বরাবরই বিতর্ক রয়েছে৷ ইতিহাসবিদদের দাবি, অন্তত দুই হাজার বছর আগে এগুলো লেখা হয়েছে৷ রাও বলেন, এত আগে লেখা হয়েছে বলে এগুলোই অকাট্য প্রমাণ, কেন না মানুষ শিল্প ও উপন্যাস মাত্র কয়েক শতক আগে লেখা শুরু করেছে৷
এছাড়া বিতর্কিত হিন্দু জাতীয়তাবাদী দীনানাথ বাত্রাকে বিজেপি পাঠ্য বই লেখার দায়িত্ব দিয়েছিল৷ জুন মাসে গুজরাটের কয়েক হাজার স্কুলে বাত্রার লেখা পাঠ্যবই দেয়া হয়৷ সেখানে লেখা হয়েছে প্রাচীন ভারতে গাড়ি আবিষ্কার হয়েছিল এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের বলা আছে একটি বড় জাতিগোষ্ঠীর মানচিত্র আঁকতে, যেখানে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান রয়েছে৷ বাত্রা অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, তারা চায় প্রতিটি স্কুলে এই বইগুলো দেয়া হোক৷
বাত্রা-র শিক্ষা বাঁচাও আন্দোলন সমিতির সেক্রেটারি অতুল কোঠারি রয়টার্সকে বলেন, ‘‘বর্তমানে ভারতে যেসব ইতিহাসের বই রয়েছে, তাতে এটাই মনে হয় ভারতীয়রা কিছুই জানে না৷ কিন্তু সত্য হল ইতিহাসের দিক থেকে আমরা উচ্চ শ্রেণির৷ ''
এর আগে সবশেষ বিজেপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিষয়টি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছিল৷ পরে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় এসে এর পরিবর্তন করে৷ শিক্ষা মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা৷ তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আধুনিক বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারকে প্রাচীন ভারতের আবিষ্কার হিসেবে জনসম্মুখে উল্লেখ করেছিলেন৷ ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য এই প্রথম৷
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিত রোমিলা থাপর বলেছেন, ‘‘এটা একধরনের হীনমন্যতার লক্ষণ৷ সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় হলো অনেক মানুষই কোনো প্রশ্ন ছাড়াই এসব বিষয় বিশ্বাস করেন এবং করবেন৷''
এপিবি/ডিজি (রয়টার্স)