২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২রাতে বৈঠক শেষে মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তাদের প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশনারের নাম জানতে চাওয়া হবে৷
রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো প্রস্তাব আছে কি না তা জানতে চাওয়া হবে এবং ক্যবিনেট ডিভিশনের ইমেইল অ্যাড্রেসে তাদের প্রস্তাবিত নাম পাঠানোর সুযোগ রাখা হবে৷ তাছাড়া কমিটি তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতেও অনুসন্ধান চালিয়ে যাবে৷
এদিকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে সার্চ কমিটি কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করতে ১৫ কার্যদিবস অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় পাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে৷ এমন বাধ্যবাধকতা থাকলে ১৪ তারিখের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করা হবে৷
রোববার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বৈঠকটি শুরু হয়৷ সেখানে সভাপতিত্ব করেন সার্চ কমিটির সভাপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান৷ কমিটির ছয় সদস্যের মধ্যে চারজন আইন অনুযায়ী পদাধিকার বলে সদস্য হয়েছেন৷ আর দুই জনকে একই আইনে রাষ্ট্রপতি তার পছন্দে নিয়োগ দিয়েছেন৷
বৈঠক শেষে কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করা খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আরো বলেন, কোন ব্যক্তি যদি নির্বাচন নির্বাচন কমিশনার হতে ইচ্ছুক হন তাহলে একই পদ্ধতিতে নিজের নাম প্রস্তাব করে আবেদন করতে পারবেন৷
তিনি আরো জানান, সার্চ কমিটি আগামী শনিবার ও রবিবার সুশীল সমাজের সদস্য, গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং নির্বাচন কমিশন বিষয়ে অভিজ্ঞদের নিয়ে নিয়ে তিনটি আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন৷
তিনি বলেন, ‘‘এসব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আইনি কাঠামো পর্যবেক্ষণ করে পাঁচ জন নির্বাচন কমিশনারের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে কমিটি৷’’
উল্লেখ্য, এই কমিশনের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
রাজনৈতিক আনুগত্য গুরুত্ব না দেওয়ার পরামর্শ
এদিকে বিশ্লেষকরা সার্চ কমিটিকে কমিশনার খুঁজতে রাজনৈতিক আনুগত্যকে প্রাধান্য না দেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন৷
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশে সৎ এবং যোগ্য নির্বাচন কমিশনের একাধিক উদাহরণ আছে৷ সেইসব কমিশনের উদাহরণ সামনে রেখেই কমিশন গঠন করা উচিত৷
তার ভাষায়, ‘‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনাররা ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করবেন৷ তারা সৎ যোগ্য নিরপেক্ষ এবং দৃঢ়চেতা হবেন৷ কিন্তু আগের দুইটি নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক আনুগত্য দেখে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ এবার যেন তা না হয়৷ যদি সেরকম কমিশন হয় তাহলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা দুরাশা৷’’
তবে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ পাওয়ার পর শনিবার কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলন, ‘‘আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করব এবং একটি ভালো নির্বাচন কমিশন উপহার দেয়ার চেষ্টা করব৷’’
কমিটির সদস্যদের বিষয়ে এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘‘বর্তমানে যে সার্চ কমিটি করা হয়েছে তাদের মধ্যে চারজন তো পদাধিকার বলে৷ তাদের নিয়ে প্রশ্ন করা ঠিক না৷ আর তাদের মধ্যে একজন অডিটর এন্ড কম্পট্রলার জেনারেল আমার জানামতে অত্যন্ত সৎ ও যোগ্য লোক৷ তবে রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুইজনের মধ্যে একজন ছহুল হোসাইন তো এমপি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন৷ বলা হচ্ছে তিনি আওয়ামী লীগের লোক৷ তাকে নেয়া ঠিক হয়নি৷’’
সাবেক নির্বাচন কশিনার মোহাম্মদ শহনেওয়াজ মনে করেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনে যারা থাকবেন তাদের ভালো লোক হওয়া উচিত৷ যোগ্য লোক হওয়া উচিত৷ ভালো নির্বাচনের জন্য ডিভোটেড হয়ে যা যা করা প্রয়োজন তা করা উচিত৷ যদিও সব সময় সেই সহযোগিতা পাওয়া যায়না৷’’
তার প্রত্যাশা, সার্চ কমিটি যেন এমন ১০ জনের নাম প্রস্তাব করেন যাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি যোগ্য পাঁচ জনকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ নিয়োগ দিতে পারেন৷ তারা যেন দেশকে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারেন৷
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আছে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ এরপরই নতুন কমিশন দায়িত্ব নেবে৷
বিদায়ী কমিশনের নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনাদের আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার৷ কারণ নির্বাচনের নানা আইন ও বিধি অনেক জটিল৷ আর আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই৷ তাই স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে৷ আর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকতে হয়৷ আইনে কতটুকু ক্ষমতা তাও সঠিকভাবে জানতে হয়৷ এর বাইরে ব্যক্তির চারিত্রিক দৃঢ়তা, নিরপেক্ষতা গুরত্বপূর্ণ৷’’
সাবেক ও বর্তমান এই দুই কমিশনারের মতে, আইনে তো তিনটি যোগ্যতার কথা বলা থাকলেও আসল যোগ্যতা হলো ব্যক্তির চারিত্রিক দৃঢ়তা, সততা ও নিরপেক্ষতা৷