কার্বন নির্গমন ত্যাগে জার্মানির করণীয়
১৩ মে ২০২১করোনা সংকটের মাঝেও বাকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি অবহেলা করার উপায় নেই৷ বিশেষ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যদি সরকারের সিদ্ধান্ত সংশোধনের নির্দেশ দেয়, তখন তো নড়েচড়ে বসতেই হয়৷ তাই জলবায়ু পরিবর্তনেব মোকাবিলা করতে আরও জোরালো লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে বাধ্য হলো জার্মানির সরকার৷ বুধবার মন্ত্রিসভা নতুন একটি আইন অনুমোদন করে ধাপে ধাপে কার্বন নির্গমন পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলো৷
জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রী স্ভেনিয়া শুলৎসে বলেন, এই আইনের মাধ্যমে আগামী কয়েক বছর ও দশকের জন্য নির্দিষ্ট কাঠামো স্থির করা হলো৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের স্বার্থ মাথায় রেখে সমস্যা ধামাচাপা না দিয়ে এখনই পরিবেশ সংকটের মূলে আঘাত করা হলো৷
সবুজ দলের বেড়ে চলা জনপ্রিয়তার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আসছে জার্মানির বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল৷ সাধারণ নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমানোর নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল৷ কিন্তু একাধিক সংগঠন সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পর আদালত সরকারকে ভর্ৎসনা করে আরও কড়া লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার নির্দেশ দেয়৷ শুধু ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়কালের রূপরেখা স্থির করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ‘স্বাধীনতা খর্ব' করা হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়৷
এমন ধাক্কার পর চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার দ্রুত নতুন আইনের খসড়া স্থির করে৷ নতুন লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ১৯৯০ সালের তুলনায় ৫৫-র বদলে ৬৫ শতাংশ কমাতে হবে৷ ২০৪০ সালের মধ্যে সেই মাত্রা ৮৮ শতাংশ কমিয়ে ২০৪৫ সালে জার্মানি পুরোপুরি ‘কার্বন নিউট্রাল' হয়ে যাবে৷ পরিবেশমন্ত্রী শুলৎসে বলেন, এমন লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এখনই পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগ দ্বিগুণ করতে হবে৷
আদালতের চাপে এমন ‘উচ্চাভিলাষী' সিদ্ধান্ত নিলেও সমালোচনার মুখে পড়ছে ম্যার্কেলের সরকার৷ সবুজ দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, শুধু লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দায়মুক্ত হওয়া যায় না৷ সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে নির্দিষ্ট পদক্ষেপেরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ পরিবেশবাদী গ্রিনপিস সংগঠন আরও এক ধাপ এগিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার পুরোপুরি ত্যাগ করা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানী চালিত ইঞ্জিন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে৷ প্রতিবাদ হিসেবে গ্রিনপিস বুধবার সকালে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে চ্যান্সেলরের দপ্তরের উপর একটি ছবি নিক্ষেপ করে৷ ছবিতে আগুনের শিখার প্রেক্ষাপটের উপর লেখা ছিল ‘ভবিষ্যতের উপর দাবি, এখনই পরিবেশ সংরক্ষণ চাই!'
পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে জার্মান সরকার কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপের রূপরেখাও স্থির করছে৷ যেমন বেসামরিক বিমান চলাচলের কারণে বিশাল পরিমাণ কার্বন নির্গমন কমাতে বিমানের টিকিটের ন্যূনতম দাম স্থির করার প্রস্তাব বিবেচনা করছে৷ অর্থমন্ত্রী ওলাফ শলৎস বলেছেন, ভবিষ্যতে টিকিটের দাম কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ ইউরো রাখতে হবে৷ এভাবে মানুষকে ভ্রমণের সময়ে পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর বিকল্প বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, করোনা সংকট শুরু হবার আগে অনেক সময় বিমানযাত্রার ব্যয় রেলের টিকিটের তুলনায় অনেক সস্তা হতো৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)